মঙ্গলবার ১৪ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

মঙ্গলবার ১৪ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রথম তালিকায় এক লাখ নাম

বুধবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭
304 ভিউ
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রথম তালিকায় এক লাখ নাম

কক্সবাংলা ডটকম(২৬ ডিসেম্বর) :: মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর জন্য রোহিঙ্গাদের তালিকা হচ্ছে। প্রথম তালিকায় এক লাখ রোহিঙ্গার তথ্য সরবরাহের পরিকল্পনা করছে সরকার। এছাড়া, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর জন্য ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট চুক্তি চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়াও অব্যাহত রয়েছে।

সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের একটি তালিকা (ডাটাবেস) করা হয়েছে, যেখানে সাড়ে আট লাখ রোহিঙ্গার তথ্য আছে। প্রথম ধাপে আমরা এক লাখ রোহিঙ্গার তালিকা সরবরাহ করব এবং তাদের যাচাই বাছাই সাপেক্ষে ফেরত পাঠানোর পর পরবর্তী তালিকা সরবরাহ করা হবে।

গত ২৩ নভেম্বর স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ-মিয়ানমার দ্বিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী, ২০১৬ সালের পরে যেসব রোহিঙ্গা এসেছে, শুধুমাত্র তাদের ফেরত পাঠানোর জন্য বিবেচনা করা হবে। এ প্রত্যাবাসন হবে ধাপে ধাপে।

ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্টের বিষয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, মাঠপর্যায়ে কাজ করতে গেলে যেসব বিষয়ের মুখোমুখি হতে হবে, সেগুলো এখানে উল্লেখ থাকবে।

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা কোন সীমান্ত দিয়ে ফেরত যাবে, যাওয়ার আগে বাংলাদেশের কোন অস্থায়ী ক্যাম্পে অবস্থান করবে, মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার পরে কোথায় অবস্থান করবে ইত্যাদি খুঁটিনাটি বিষয় এখানে উল্লেখ থাকবে।

আগামী বৃহস্পতিবার এই পরিস্থিতি নিয়ে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের সভাপতিত্বে রোহিঙ্গাবিষয়ক ন্যাশনাল টাস্কফোর্সের (এনটিএফ) ১৭তম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

২৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত আগের এনটিএফ বৈঠকে অংশ নিয়েছেন এমন একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা যেহেতু দ্বিপক্ষীয়ভাবে একটি চুক্তি সম্পাদন করেছি, সেই কারণে এই চুক্তির আলোকে আমাদের কর্মপন্থা ঠিক করতে হবে।

চুক্তির নির্দেশনা অনুযায়ী যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়েছে এবং তার টার্মস অব রেফারেন্স ঠিক করা হয়েছে। আমরা যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠকের আগে নিজেদের কৌশল ঠিক করার জন্য বৃহস্পতিবার সবার সঙ্গে আলোচনা করবো।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত একজন কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয়ই চাপে আছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ চাপে আছে কারণ, রোহিঙ্গারা আমাদের নিরাপত্তা, সামাজিক ও পরিবেশগত দিক থেকে বড় ধরনের ঝুঁকি। এছাড়া, ২০১৮ সাল হচ্ছে নির্বাচনের বছর এবং সে কারণে সরকারের চেষ্টা থাকবে যত দ্রুত সম্ভব এই প্রক্রিয়া শুরু করে যত বেশি সম্ভব রোহিঙ্গা ফেরত পাঠানো।

মিয়ানমারও আন্তর্জাতিক চাপে আছে। সে কারণে তারা এই প্রক্রিয়াটি শুরু করে দিয়ে সবাইকে দেখাতে চায় তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তরিক। তাছাড়া, পরে সময়ক্ষেপণ করা হলেও তাদের ওপর এখনকার মতো চাপ থাকবে না।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও রোহিঙ্গারা  ‍ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের দাবা খেলা বটে, কিন্তু এরমধ্যে থেকেও বাংলাদেশ চেষ্টা করছে রোহিঙ্গাদের যতটুকু সম্ভব অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে।

প্রসঙ্গত,গত ২৫ আগস্ট পুলিশ চৌকিতে সন্ত্রাসী হামলার অজুহাত তুলে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। এতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয় এবং এখন পর্যন্ত সাড়ে ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। তার আগে গত বছরের অক্টোবরে সেনা অভিযানের কারণে পালিয়ে আসে ৮৫ হাজারের মতো রোহিঙ্গা। এর আগে থেকে এখানে আশ্রয় নিয়ে রয়েছে আরও তিন লাখের বেশি রোহিঙ্গা।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে অনিশ্চয়তা কাটেনি!

মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের শরণার্থী জীবনের চার মাস পার হচ্ছে এ মুহূর্তে। বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক শক্তি ও অধিকার সংস্থাগুলোর চাপের মুখে ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে গত নভেম্বরে একটি চুক্তির স্বাক্ষর হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। চুক্তি অনুসারে দুই দেশের প্রতিনিধির সমন্বয়ে ইতোমধ্যেই একটি যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এই কমিটির তদারকির আওতায় বাংলাদেশে নিবন্ধিত রোহিঙ্গারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে আবারো রাখাইনে ফিরে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। তবে কাগজে-কলমে সম্পাদিত এ চুক্তির মাঠ পর্যায়ের কার্যকারিতা সম্পর্কে এখন পর্যন্ত আশাবাদী হতে পারছে না জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক অধিকার গ্রুপসহ সংশ্লিষ্ট কোনো পক্ষই।

চুক্তির অলঙ্ঘ্যনীয় শর্ত অনুসারে, এই প্রত্যাবাসন রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছাভিত্তিক হতে হবে। তাদের জোর করে ফেরত পাঠানো যাবে না। রাখাইনে ফিরে যাওয়ার পর সেখানেও তাদের সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করার বিষয়টি নিশ্চিত হতে হবে। তাদের মিয়ানমারের দীর্ঘদিনের কাক্সিক্ষত নাগরিক স্বীকৃতি দিয়ে সব ধরনের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

অথচ বাস্তব পরিস্থিতি সমর্থন করছে না এর কোনোটাই। চার মাস আগে রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর দমন অভিযান শুরু করেছিল মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। বিদ্রোহ দমনের অজুহাতে অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নিরীহ গ্রামবাসীর ওপর চড়াও হয় তারা। স্থানীয় দালালচক্রের সহযোগিতায় সুপরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গাদের গ্রামে হামলা চালিয়ে খুন, ধর্ষণ আর জ্বালাও-পোড়াওয়ের মাধ্যমে বিভীষিকার রাজত্ব কায়েম করে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তিতে রাখাইনে সেনা অভিযান বন্ধ রেখে সেখানে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার কথা বলা হলেও মাঠপর্যায়ে রাখাইনের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত জনপদে বর্বরোচিত সেনা অভিযানই বন্ধ হয়নি এখনো। গণমাধ্যমের জন্য নিষিদ্ধ করে রাখা ওই এলাকার দৃশ্য ধারণ করেছে মানবাধিকার গ্রুপের স্যাটেলাইট।

এর ফুটেজেও দেখা গেছে, প্রত্যাবাসন চুক্তি স্বাক্ষরের প্রায় দেড় সপ্তাহ পরও, গত ২ ডিসেম্বর রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে অগ্নিসংযোগ অব্যাহত রেখেছে সেনাবাহিনী। এদিকে, ফিরে যাওয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে রাখাইনে, আন্তর্জাতিক তদারকি সংস্থাগুলোর কাছ থেকে এমন নিশ্চয়তা না পেলে রোহিঙ্গারা কোনোক্রমেই ফিরতে পারবে না রাখাইনে।

সু কির পুতুল সরকার, শেষ কথা বলতে পারে শুধু সামরিক শক্তি :

সংকট শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত নিরাপত্তা পরিষদে একাধিক উদ্যোগ নিয়েও কার্যকর কোনো প্রস্তাব এখনো পাস করা সম্ভব হয়নি মিয়ানমারের সামরিক কর্তৃপক্ষের মিত্র চীন-রাশিয়ার বাধার মুখে। তবে এর মধ্যেও গত ২৪ ডিসেম্বর একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে জাতিসংঘে। ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা ওআইসি ওই প্রস্তাব উত্থাপন করে জাতিসংঘে। চীন-রাশিয়ার বাধা দিলেও পাস হওয়া ওই প্রস্তাবে বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর ওপর চলমান সামরিক অভিযান বন্ধের আহ্বান জানানো হয় মিয়ানমারের উদ্দেশ্যে।

এর আগে দেশটির ওপর বিভিন্ন মাত্রার সামরিক ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং যুক্তরাষ্ট্র। দীর্ঘদিনের সামরিক শাসনের পর সদ্য গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে উত্তীর্ণ দেশটির ওপর বিশেষ বিবেচনায় সামগ্রিক অবরোধ আরোপ না করলেও শীর্ষ সামরিক নেতৃত্বকে আনা হয় অবরোধের আওতায়। যদিও এসব পদক্ষেপের কোনোটাতেই তেমন গা করছে না মিয়ানমার।

শান্তিতে নোবেল জয়ী মিয়ানামরের গণতান্ত্রিক নেত্রী অং সান সু কির দল এনএলডি সর্বশেষ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জিতে ক্ষমতায় এলেও দেশটির শাসনকাঠামো অনুসারে কার্যকর কোনো ক্ষমতাই নেই তাদের হাতে। সাংবিধানিক কলাকৌশলে ক্ষমতার মূল চাবিকাঠি আগে থেকেই সুরক্ষিত রয়েছে সামরিক নেতৃত্বের হাতেই। ফলে অং সান সু কির আন্তরিকতা বহিরঙ্গে দৃশ্যমান হলেও সামরিক শক্তিকে উপেক্ষা করে শান্তির লক্ষ্যে গৃহীত কোনো পদক্ষেপের বাস্তবায়ন কোনোক্রমেই সম্ভব নয় সেখানে।

জাতিসংঘের নির্দেশনা উপেক্ষিত :

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাভিযানকে জাতিগত নিধনের পুস্তকীয় নিদর্শন হিসেবে অভিহিত করেছে প্রথমে জাতিসংঘ এবং পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘের গত রোববার ১২২-১০ ভোটে পাস হওয়া সর্বশেষ প্রস্তাবে মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে বলা হয়েছে মিয়ানমারে একজন বিশেষ দূত নিয়োগের জন্য।

তবে মিয়ানমার সরকারের আপত্তির মুখে আটকে আছে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংগি লির জানুয়ারি মাসের আসন্ন সফরও। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তে সংঘাতকবলিত ওই এলাকা পরিদর্শনের কথা রয়েছে তার।

304 ভিউ

Posted ২:৩৮ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : Shaheed sharanee road, cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com