কক্সবাংলা সম্পাদকীয়(২১ ডিসেম্বর) :: নানা কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ঝুলে আছে। বাংলাদেশ এখনো রোহিঙ্গা সংকটের একটি স্থায়ী সমাধানের আশা রাখছে।
রোহিঙ্গাদের দীর্ঘদিন বহন করার মতো সক্ষমতা বাংলাদেশের নেই। সুতরাং তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন জরুরি।
গত বৃহস্পতিবার থাইল্যান্ডের ব্যাংককে মিয়ানমারের চলমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং সীমান্তবর্তী দেশগুলোর করণীয় নিয়ে ছয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
তিনি জানান, গত কয়েক মাসে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ৬০ হাজার অতিরিক্ত অনুপ্রবেশ ঘটেছে।
রাখাইন রাজ্যে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য অগ্রাধিকার দিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য একটি ব্যাপক রোডম্যাপের আহ্বান করেন তিনি।
থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিস সাঙ্গিয়াম্পংসার সভাপতিত্বে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভারত, চীন ও লাও পিডিআরের প্রতিনিধিরা বৈঠকে অংশ নেন। আহ্বানটি সময়োপযোগী। রোহিঙ্গা সংকট একটি আন্তঃসীমান্ত এবং আঞ্চলিক সমস্যা। এ মানবিক সংকটের সমাধান করা বিশ্বের দায়িত্ব।
বিশ্বনেতাদের ভূমিকা না থাকায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের অগ্রগতি অনেকটা থেমে গেছে। এর আগে চীন বারবার রোহিঙ্গা ফেরানোর উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হয়।
ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুটি অনেকটা ধামাচাপা পড়ে গিয়েছিল। এমনকি প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ, চীন এবং মিয়ানমারের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকও হয়েছিল। এরপর থেকে এটি নিয়ে আর সাড়া নেই। নতুন করে আলোচনা শুরু হওয়া ইতিবাচক।
প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ায় রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তা আমাদের জন্য অবশ্যই উদ্বেগের। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হলে স্বাভাবিকভাবেই সন্ত্রাসবাদের উত্থান হবে। খুন, ধর্ষণ, মাদক পাচার, শিশু পাচার, ডাকাতি, অপহরণ, পতিতাবৃত্তিসহ সব ভয়ংকর অপরাধের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে রোহিঙ্গারা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত চারটি কারণেই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ঝুলে আছে। মিয়ানমার নিজেরাই রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে চায় না, রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা এনজিওগুলো চায় না, ইসলামী মৌলবাদী গোষ্ঠী চায় না এবং রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার বিষয়টি মিয়ানমার যেভাবে এড়িয়ে যাচ্ছে তাতে গোপনে সমর্থন জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার মতো বৃহৎ শক্তি।
এমনকি বিশ্বব্যাংকের মতো বৈশ্বিক সংস্থাও রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের মূল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আত্তীকরণের উদ্ভট প্রস্তাব দিয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ১২ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রিত।
তাদের প্রতি সমবেদনা এবং মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি সংহতি এবং রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের তাগিদ জানিয়ে আসছে বিশ্ব সম্প্রদায়।
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। দুই দফা সময় দিয়েও তারা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়নি। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়াকে উদ্যোগ নিতে হবে।
তবে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন ও এই জনগোষ্ঠীর পক্ষে ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা নিশ্চিতের মাধ্যমে চলমান সংকটটির টেকসই সমাধানের ওপর জোর দিতে হবে।
মানবিক কারণেই প্রতিবেশী মিয়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। এই বিপুলসংখ্যক মানুষের বাড়তি দায়িত্ব বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই বড় বোঝা। এ অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি, স্থিতি এবং নিরাপত্তার জন্য রোহিঙ্গা ইস্যুর রাজনৈতিক সমাধান অপরিহার্য।
Posted ১:২৭ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta