কক্সবাংলা ডটকম(১৭ জানুয়ারী) :: মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমনপীড়নে সম্প্রতি প্রায় সাড়ে ছয় লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে এক মানবিক সমস্যা। খুন, ধর্ষণ ও সহিংসতায় আক্রান্ত এসব রোহিঙ্গাদের মধ্যে এখনও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
ফলে সংকটপূর্ণ এ সমস্যার নিরাপদ ও স্থায়ী সমাধান এবং স্বতর্স্ফূতভাবে রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরার জন্য পাঁচটি প্রস্তাব বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের ইন্টারন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট কমিটি।
মঙ্গলবার রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে এ কমিটির তৈরি ‘বাংলাদেশ অ্যান্ড বার্মা : দ্য রোহিঙ্গা ক্রাইসিস’ শিরোনামে ৮১ পৃষ্ঠার এক প্রতিবেদনে এ পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনটির ৬ নং অনুচ্ছেদে রাখাইনে রোহিঙ্গা সংকটের নিরাপদ ও স্থায়ী সমাধান এবং স্বতর্স্ফূতভাবে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার বিষয়ে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ সরকার এ সমস্যা সমাধানের জন্য পাঁচটি বিষয় চিহ্নিত করেছে। একইসঙ্গে এই বিষয়গুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায় তার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন দাবি করছে।
এ পাচঁটি প্রস্তাব হলো, মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে সব ধরনের সহিংসতা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে, দেশটিতে থাকা সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, শরণার্থীদের অবশ্যই যথাযথ মর্যাদায় নিরাপদভাবে ফিরিয়ে নিতে হবে এবং তাদেরকে অবাধ চলাফেরার সুযোগ দিতে হবে, রাখাইন রাজ্য নিয়ে কফি আনানের তৈরি শুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে এবং সবার অবাধে প্রবেশ ও জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনকে পূর্ণমাত্রায় সহযোগিতা করাতে হবে।
প্রতিবেদনে যুক্তরাজ্যের মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সভাপতি ডেভিড মেফাম বলেছেন, আমাদেরকে অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে যে ব্রিটিশ সরকার এ সমস্যা সমাধানে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি এবং সেটা নিতে জোরও করেনি। তার জন্য হয়তো তাদের অন্য কারণ থাকতে। কিন্তু অতীতের দিকে তাকালে দেখা যাবে যে ব্রিটিশ সরকার মানুষের সংকট সমাধানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে।
শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক অনেক সমস্যার সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে মীমাংসা করেছে। সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে বর্তমানে ব্রিটেন অনেক জীর্ণ হয়ে গেছে, সমস্যা সমাধানে তার কোনো ভূমিকা রাখা দরকার সেটা ভাবছে না।
মিয়ানমারের নেতা অংসান সু চির সমস্যা সমাধানে তার ভূমিকার বিষয়ে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে সারাবিশ্ব অংসান সু চির ভূমিকার প্রত্যাশা করলেও তিনি বরাবর এই বিষয়ে নিশ্চুপ ছিলেন। কখনো কখনো রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধেও কথা বলেছেন। ফলে সারাবিশ্বে তাকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
প্রস্তাবিত পাঁচ পরিকল্পনায় সু চির সাহায্য চেয়ে বলা হয়েছে, সু চি তার দেশে অত্যন্ত জনপ্রিয়। দেশের অধিকাংশ মানুষই তাকে পছন্দ করে এবং তাকে অনুসরণ করে। ফলে তিনি যদি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত নেন তাহলে তার জনগণ কখনোই তা অমান্য করবে না। তিনি যদি সমস্যার সমাধান চান তাহলে এ পাঁচ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ২ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এরপর বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে এক চুক্তির পর ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ২ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা দেশটিতে ফিরে যায়। কিন্তু এরপর তারা আবারও বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে থাকে। এর মধ্যে ২০১২ সালে ১ লাখ ৪০ হাজার, ২০১৪ সালে ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর রোহিঙ্গা অস্ত্রধারীদের হাতে নয় জন সীমান্তরক্ষী নিহত হলে দেশটির সেনাবাহিনীর দমনপীড়নে প্রায় ৭৪ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে আসে। এরপর গত বছরের আগস্টে শুরু হওয়া এ সহিংসতায় পালিয়ে আসে প্রায় ৬ লাখ ৫৫৫০০ রোহিঙ্গা। সবমিলিয়ে বর্তমানে প্রায় ৮ লাখ ৬৮০০০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। যদিও বেসরকারি হিসেবে এ সংখ্যা ১০ লাখের অধিক বলে বিভিন্ন রিপোর্টে জানানো হয়েছে।
একইসঙ্গে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নিয়েও এ প্রতিবেদনে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, তাদেরকে যদি আন্তর্জাতিকভাবে শিক্ষার জন্য উদ্যোগ না নেওয়া হয় তাহলে একটি প্রজন্ম শিক্ষাহীন থাকবে। ফলে এটার জন্য বিভিন্ন এনজিওর পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবে সবাইকে এগিয়ে আসার জন্য বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার দুই বছরের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের শর্ত রেখে ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। প্রাথমিক অবস্থায় প্রতিদিন ৩০০ করে সপ্তাহে এক হাজার ৫০০ রোহিঙ্গাকে ফেরত নিবে দেশটি।
Posted ৭:১৪ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৭ জানুয়ারি ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta