শনিবার ১৫ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শনিবার ১৫ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

জীবন সৌরভ মুছে গেছে বুলেটের আঘাতে

সোমবার, ২৯ জুলাই ২০২৪
73 ভিউ
জীবন সৌরভ মুছে গেছে বুলেটের আঘাতে

কক্সবাংলা ডটকম(২৯ জুলাই) :: আহাদ, রিয়া, সামির, হোসাইন, মোবারক, তাহমিদ, ইফাত ও নাঈমা নামের ফুলের মতো শিশুগুলো সবে ফুটছিল। তবে আর বিকশিত হতে পারেনি। বুলেটের আঘাতে ছোট্ট জীবনগুলো ঝরে গেছে কুঁড়িতেই। বাবার কোলের মতো নিরাপদ আশ্রয়েও তাদের আঘাত করেছে ঘাতক বুলেট। আবার কারফিউ মেনে ঘরের কোণে থেকেও কারও জীবনসৌরভ মুছে গেছে বারুদের গন্ধে।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে কয়েক দিনের সংঘর্ষে অন্তত ৯ শিশু গুলিতে নিহত হয়েছে। তাদের বয়স ৪ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। ১৮, ১৯ ও ২০ জুলাই তারা গুলিবিদ্ধ হয়। নিহত চারজন মারা গেছে নিজ বাড়িতেই। চারজন গুলিবিদ্ধ হয় সড়কে।

সব ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে প্রাণ গেছে এই শিশুদের। এখনও চিকিৎসাধীন গুলিবিদ্ধ এমন কিছু শিশু।

আন্দোলনে যোগ দেওয়া ১৮ বছরের কম বয়সের কয়েকজন নিহত হওয়ার তথ্যও পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ১৬ বছরের ইফাত ২০ জুলাই যাত্রাবাড়ীতে নিহত হয়। তাকে পুলিশ হাসপাতাল থেকে নিয়ে বুকের বাঁ পাশে গুলি করেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেছেন। ইফাত নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

তার মা কামরুন নাহার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমার ছেলে কোনো অপরাধ করেনি। সে রাস্তায় পড়ে থাকা আহত একজনকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। তবু তার বুকে গুলি করা হলো।’

মা-বাবার মাঝ থেকেই প্রাণ কাড়ল বুলেট

চার বছরের আবদুল আহাদের মৃত্যু পাষাণকেও কাঁদাচ্ছে। যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ এলাকায় ১১ তলা একটি বাড়ির আট তলার ভাড়া বাসায় থাকে তার পরিবার। ১৯ জুলাই বিকেলে পরিবারের সবাই বাসায় ছিলেন। সে সময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ চলছিল। কী হচ্ছে দেখতে আর সবার মতো উৎসুক হয়ে ছোট্ট আহাদও বারান্দায় গিয়েছিল। এক পাশে ছিল বাবা, অন্য পাশে মা। হঠাৎ ঘাতক বুলেট তার ডান চোখে লাগলে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে শিশুটি।

রক্তে ভেজা সন্তানকে বুকে নিয়ে সংঘর্ষের মধ্যেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান বাবা আবুল হাসান। শিশুটিকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে  লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।

চিকিৎসকরা জানান, গুলি চোখ দিয়ে ঢুকে মাথার ভেতর আটকে গেছে। ২০ জুলাই রাতে আহাদকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

আবুল হাসান বলেন, ‘সবকিছু যেন চোখের পলকে ঘটে গেল। আমার আদরের ছোট ছেলেকে হারালাম। এ নিয়ে আর কী বলব!’

বাবার কোলও থাকেনি নিরাপদ

নারায়ণগঞ্জের ছোট্ট শিশু রিয়া গোপের বয়স হয়েছিল সবে ৬ বছর। স্কুলে যেতে শুরু করেছিল। পুতুলের মতো মেয়েটি ২০ জুলাই নারায়ণগঞ্জ সদরের নয়ামাটি এলাকায় বাড়ির ছাদে খেলছিল। গোলাগুলি শুরু হলে বাবা তাকে কোলে নেন। হঠাৎ একটি গুলি এসে লাগে রিয়ার মাথায়। ওই দিনই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৫ জুলাই নিভে যায় রিয়ার জীবনপ্রদীপ।

সন্তান হারানোর হাহাকার বুকে নিয়ে রিয়ার বাবা দীপক কুমার গোপ বলেন, পরিবারের অন্যদের সঙ্গে মেয়েটা চার তলা বাড়ির ছাদে গিয়েছিল। তাতেই চলে গেল জীবনটা। এই শোক কী করে সইব?

ঘরে যমদূত বুলেটের হানা

টিয়ার গ্যাসের শেলের ধোঁয়া ঘরে আসা ঠেকাতে ১১ বছরের সাফকাত সামির জানালা বন্ধ করতে গিয়েছিল। তখনই একটি গুলি এসে বিদ্ধ করে তাকে। চোখ দিয়ে ঢুকে মাথার পেছন দিয়ে বেরিয়ে যায়। গুলি লাগে ঘরে থাকা চাচা ১৭ বছরের মশিউর রহমানের কাঁধেও।

মাদ্রাসায় পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত সামির। তার পরিবার থাকে রাজধানীর মিরপুরে কাফরুল থানা-সংলগ্ন বাড়িতে। ১৯ জুলাই ওই এলাকায় পুলিশ-আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ চলছিল। পুলিশ এক পর্যায়ে বুলেট ছোড়ে। তাতে ঘরের মধ্যেই প্রাণ যায় সামিরের।

‘আমি ছোট্ট, আমারে কে গুলি করবে’

২০ জুলাই পড়ন্ত বিকেল। তখনও টিয়ার শেলের গ্যাসে রাজধানীর চিটাগং রোড এলাকা ধোঁয়াচ্ছন্ন। ‘বুকের মানিক’ ১০ বছরের হোসাইনের খোঁজে দিগ্বিদিক ছুটছেন বাবা মানিক মিয়া। বিকেল গড়িয়ে রাত, সংঘর্ষ তখন আরও তীব্র। মানিক মিয়া আবার খোঁজ নিয়ে জানলেন, বাসায় ফেরেনি ছেলে। এর পর স্ত্রীকে নিয়ে রাতে ফের খোঁজাখুঁজি শুরু করেন।

৯টার দিকে কেউ একজন মোবাইল ফোনে আহত হোসাইনের ছবি দেখান। সহিংসতার মধ্যে চড়াই-উতরাই পেরিয়ে মানিক পৌঁছান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

এক চিকিৎসকের কাছ থেকে তিনি জানতে পারেন, চিটাগং রোড থেকে আসা আহতদের চিকিৎসা চলছে। রাত ২টার পর এক লোক এসে মানিক মিয়াকে মর্গে নিয়ে যান। সেখানে লাশের স্তূপে পান তাঁর ছেলের গুলিবিদ্ধ শরীর।

হোসাইনের বাবার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার বরিশল গ্রামে। তার নানার বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার বেতরা গ্রামে। মা-বাবার সঙ্গে চিটাগং রোড এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকত সে।

মা মালেকা বেগম বলেন, ‘ভাত খেয়ে ঘরে থাকতে বলছিলাম। ছেলে বের হয়ে যায়। আমি বারবার ডেকে ঘরে আনার জন্য যাই আর বলি, বাবা, রাস্তায় গোলাগুলি হচ্ছে, তুই বাসায় চলে আয়। ছেলে বলে, মা, আমি ছোট্ট। আমারে কে গুলি করবে?’

আন্দোলন দেখতে গিয়ে আর ফিরল না মোবারক

১৩ বছরের দুরন্ত কিশোর মোবারক হোসেন ১৯ জুলাই অন্য অনেকের মতো রাজধানীর কাঁঠালবাগান ঢাল এলাকার বাসা থেকে অদূরে কারওয়ান বাজার মোড়ে গিয়েছিল আন্দোলন দেখতে। সেই দিন বিকেল ৫টার দিকে ছেলের মাথায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পান মা ফরিদা বেগম।

বিলাপ করতে করতে তিনি বলেন, ‘খ্যালতে যাওয়ার সময় না হয় আন্দোলন দ্যাখতে গ্যাছেই। আমার পুলারে গুলি কইরা ক্যান মারছে? মিছিল দেখতে গ্যাছে– অয় যদি অপরাধ কইরা থাহে, এক-দুইডা থাপ্পড় দিয়া খেদায় দিত। মাথার মধ্যে গুলি করল ক্যান?’

পাঁচ ভাইবোনের সবার ছোট মোবারক দারিদ্র্যের কারণে লেখাপড়া করতে পারেনি। মা-বাবার সঙ্গে থেকে গরুর খামার দেখাশোনা করত।

গুলিতে ঝাঁজরা তাহমিদের বুক

গত ১৮ জুলাই নরসিংদী শহরে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের গুলিতে নিহত হয় ১৪ বছরের তাহমিদ ভূঁইয়া। সে পড়ত নাছিমা কাদির মোল্লা হাই স্কুল অ্যান্ড হোমসের (এনকেএম) নবম শ্রেণিতে। ওই দিন বিকেল ৩টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে নরসিংদীর জেলখানা মোড় এলাকায় জড়ো হয়েছিল আন্দোলনকারীরা। তাহমিদ সেখানে গিয়েছিল সহপাঠীদের সঙ্গে। পরে পুলিশের ছররা গুলিতে তার বুক ঝাঁজরা হয়ে যায়।

তাহমিদের লাশ হাসপাতাল থেকে নিয়ে পরে মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে আন্দোলনকারীরা। তাতেও পুলিশ গুলি করে। মৃত্যুর পর আবার গুলিবিদ্ধ হয় তাহমিদ।

বারান্দায় নাইমার ঘাতক হয়ে আসে বুলেট

রাজধানীর উত্তরায় বাসার বারান্দায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ১৯ জুলাই নিহত হয়েছে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাঈমা (১৬)। তাদের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের মতলব উত্তরের আমুয়াখান্দা উত্তরপাড়ায়।

নাঈমার মা আইনুন নাহার বলেন, বাসার সামনের সড়কে সংঘর্ষ হচ্ছিল। তা দেখতে চার তলা ভবনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই মেয়ের মাথায় গুলি লাগে। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। নাঈমার বাবা চিকিৎসক গোলাম মোস্তফা দেওয়ান বলেন, সন্তানদের মানুষ করতে গ্রাম থেকে ঢাকায় পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু আমার মেয়ে লাশ হয়ে ফিরল। এর দায় কার?

কৌতূহলবশত বেরিয়ে লাশ সাদ

২০ জুলাই বিকেলে সাভারে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলছিল। এ সময় শাহীনবাগ এলাকায় বাড়ির পাশের চাপাইন সড়কে ধোঁয়া দেখে কৌতূহলবশত সড়কের নিউমার্কেটের পাশে যায় ১৪ বছরের সাদ মাহমুদ। সেখানে পৌঁছাতেই তার বাঁ পায়ে গুলি লাগে। স্থানীয়রা এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
সাদের বাবার নাম বাহাদুর খান। তার বাড়ি মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার ধল্লা খানপাড়ায় হলেও ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার জন্য শাহীনবাগ এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। তিন সন্তানের মধ্যে একমাত্র ছেলে ছিল সাদ। সে শাহীনবাগ এলাকায় জাবালে নূর দাখিল মাদ্রাসায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত।

73 ভিউ

Posted ২:০২ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৯ জুলাই ২০২৪

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : Shaheed sharanee road, cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com