কক্সবাংলা ডটকম(৩১ ডিসেম্বর) :: উৎসব বা আয়োজনে মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসএমএস দেওয়া-নেওয়ার ব্যবহার বেড়েছে। দ্রুত প্রয়োজনীয় কথা লিখে এসএমএস পাঠানোর দিকে মনোযোগ বাড়ছে এখন। যদিও নিকট অতীতে দেশে যেকোনও উৎসবে রঙিন কার্ডে হাতে লেখা ও আঁকা আবেগ-ভালোবাসাসিক্ত কথা পাঠিয়ে প্রিয়জনকে শুভেচ্ছা জানানোর প্রবণতা ছিল। যা গত ১০ বছরে কমে গেছে।
খুব ছোট করে দেওয়া এসএমএস নিয়ে অনেকে বিরক্তিও প্রকাশ করছেন। ক্ষেত্র বিশেষে প্রায় একই ধরনের মেসেজ পাচ্ছেন একাধিক প্রিয়জনদের কাছ থেকে। কেউ কেউ বলছেন, সময়ের তালে-তালে মানুষের আবেগ প্রকাশের ধরনে পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তন স্বাভাবিক।
এসএমএসে শুভেচ্ছা বিনিময়ের বিষয়টিকে ‘আবেগের রূপান্তর’ বলে মনে করেন বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। একটু ঘুরিয়ে নিজের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন তরুণ কবি হাসনাইন হীরা। তার ভাষ্য, ‘যেটা হয়েছে, সেটা ভালো নয়। যা চলছে, তা মন্দ নয়।’
এভাবে এসএমএস পাঠানোর মধ্য দিয়ে আন্তরিকতার জায়গাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এমনটি মানতে চান না সংবাদকর্মী দীপন নন্দী। তিনি বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে প্রযুক্তিকে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে৷ যদি প্রযুক্তির সব ভালো কাজ মেনে নিতে পারি, তাহলে এটা কেন নয়? আর ভালোবাসা যেখানে যুক্ত, সেখানে আবেগও জড়িত।’
পরিবর্তনটিকে ‘সত্যি’ বলে মানছেন আজাদ প্রোডাক্টসের কর্ণধার আবুল কালাম আজাদ। তবে তার মতে, নতুন প্রযুক্তি অবশ্যই অভিনন্দনের।
ক্ষুদে বার্তায় প্রযুক্তির উৎকর্ষতা দেখলেও অনেকেই বিষয়টির বিরোধিতা করেছেন।
সিনিয়র প্রযোজক জিয়াউল আহসান বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তনকে মেনে নিতে হয়। তাই নিচ্ছি। একসময় রাত জেগে হাতে আঁকা কার্ড প্রিয় মানুষটিকে দিতাম। যাকে দিতাম, তার অনুভূতি দেখতে চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতাম, অদ্ভুত ভালো লাগা নিয়ে বাসায় ফিরতাম।এখন সেই ভালোবাসা ৫০০ বা ১০০০ জনকে মোবাইল ম্যাসেজ বা ফেসবুক ইনবক্স করি। কিন্তু সেই ভালোলাগা-ভালোবাসা টের পাই না।’
জাসাস সহ-সভাপতি শায়রুল কবির খান বলেন, ‘মানুষের আবেগ অনুভূতি প্রকাশের জন্য এসএমএস নয়। মূলত তথ্য আদান-প্রদান করতেই এর ব্যবহার। আবেগ অনুভূতি প্রকাশ করতে দিবসকেন্দ্রিক দাওয়াত কার্ড, চিঠি, সশরীরে দেখা করাই উত্তম। আমরা জীবন সংগ্রামের যান্ত্রিকতার মধ্যে পতিত হয়েছি। আর ক্ষুদে বার্তায় শুভেচ্ছা জানানোর বিষয়টি আমি অপছন্দ করছি।’
হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার সিনিয়র সাংবাদিক আয়ূব খান। তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তির যুগে বই পড়া হাতের লেখা এখন অতীত হয়ে যাচ্ছে।ঈদ কার্ড, বিভিন্ন দিবসের কার্ড বিনিময় সেকেলে হয়ে গেলো। এখন সব কিছু বায়বীয় হয়ে গেছে। এখন ইমোশন ডিমোশন হয়ে গেছে।’
অনলাইন একটি পত্রিকার একজন তরুণ সংবাদকর্মী প্রকাশ করেন, ‘একই মেসেজ সারাদিন ধরে আসছে। এতে শুভেচ্ছার চেয়ে বিরক্তিই আনছে বেশি।’
তবে সংবাদকর্মী শাকিল হাসান কার্ড বা মেসেজ—কোনও কিছুতেই নিজের সন্তুষ্টি উপভোগ করেন না। বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত তো হচ্ছেই। সেটা কমন ধারণা। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আনুষ্ঠানিকভাবে অনানুষ্ঠানিক। যদিও বাস্তবতায় অনেক কিছু করতে হয়। নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানানো, ঈদ-পূজার শুভেচ্ছা জানানো, না জানানো কিছু মিন করে না আমার কাছে। আমার কাছে সম্পর্কটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। মুখোমুখি বসে গল্প বা শুধু বসে থাকা। এটা অনেক উপভোগ্য।
উৎসব বা দিবস উদযাপনে ক্ষুদেবার্তা না কার্ড-চিঠি? বিষয়টিকে বিশেষজ্ঞরা দেখছেন সময় আর প্রয়োজনের তাগিদ হিসেবে।
আবেগ বা ভালোবাসার কম-বেশি পরিমাপে না গিয়ে চিন্তাবিদ অধ্যাপক যতীন সরকার বলেন, ‘সময়ের কারণে উদযাপনে, শুভেচ্ছা-বিনিময়ে পরিবর্তন তো এসেছে। তবে অনেক পরিবর্তন হয়, সেটাকে ফেরানো যায় না। সব পরিবর্তনে ভালোমন্দ আছে। এমনকী দ্রুত জানানোর জন্য সুবিধা হলেও উৎসবে-আয়োজনে ক্ষুদে বার্তার স্থায়ী মূল্য নেই। আগে যে কার্ড বা চিঠি দেওয়া হতো, তার একটা স্থায়ীমূল্য ছিল। এতে অনেক কিছু প্রকাশ পেতো।’
উদাহরণ দিতে গিয়ে যতীন সরকার বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথের চিঠি আছে, মার্কস-এঙ্গেলসের চিঠি আছে। হয়তো এমনও হয়েছে, তাদের সমস্ত সাহিত্যে অনেক কিছু নেই, যা অনেক সময় রবীন্দ্রনাথের চিঠি-সাহিত্যে পাওয়া যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘কাজেই শুভেচ্ছার প্রসঙ্গে চিঠি বা কার্ডের উঠে যাওয়াটা এত ক্ষতিকর। জানি না, এটাকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব কিনা। এই বিষয় সম্পর্কে সবার চিন্তা ভাবনা করা উচিত’ বলে মনে করেন যতীন সরকার।
Posted ১১:৪৬ অপরাহ্ণ | রবিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta