এসব সংগঠনকে নিয়ে গঠিত সমন্বয় কমিটির সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, “কোনো রাজনৈতিক দল বা জোট আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে এমন কাউকে মনোনয়ন দেবেন না, যারা অতীতে বা বর্তমানে জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয়ে বা রাজনৈতিক নেতেৃত্বে থেকে সংখ্যালঘু স্বার্থবিরোধী কোনো প্রকার কর্মকাণ্ডে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন বা আছেন।
“এমন কাউকে নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়া হলে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী সেসব নির্বাচনী এলাকায় ভোটদানে বিরত থাকবে বা ভোট বর্জন করবে।”
যে রাজনৈতিক দল বা জোট তাদের নির্বাচনী ইশেতেহারে ‘সংখ্যালঘুদের’ সাত দফার পক্ষে নির্বাচনী অঙ্গীকার ঘোষণা করবে এবং সংখ্যালঘুদের স্বার্থ ও অধিকার নিশ্চিতে প্রতিশ্রুতি দেবে তাদের এই সমন্বয় কমিটি সমর্থন দেবে বলেও ঘোষণা দেন রানা দাশগুপ্ত।
তিনি বলেন, ‘আদিবাসীদের’ প্রতিনিধি নিশ্চিত করাসহ জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে সংসদে ‘ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুদের’ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোকে দায়িত্ব নিতে হবে।
“ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনে ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতার ব্যবহার এবং মন্দির, মসজিদ, গীর্জা, প্যাগোডাসহ ধর্মীয় সব উপাসনালয়কে নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার বন্ধ করার পাশাপাশি নির্বাচনী সভায় ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক ব্যক্তব্য দেওয়া নিষিদ্ধ করতে হবে, এ ধরনের ঘটনায় প্রার্থিতা বাতিলসহ কমপক্ষে এক বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রেখে নির্বাচনী আইনও সংস্কার করতে হবে।”
নির্বাচনের আগেই সরকারের তরফ থেকে ‘সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয়’ ও ‘জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন’ গঠন এবং ‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন, সমতলের আদিবাসীদের জন্য ভূমি কমিশন গঠন, বর্ণ বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন এবং পার্বত্য ভূমিবিরোধ নিস্পত্তি আইনের বাস্তবায়নসহ পার্বত্য শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নের ‘রোডম্যাপ’ ঘোষণার দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
এসব দাবি সরকার, নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল ও জোটের সামনে তুলে ধরতে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর বিকেল ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রার কর্মসূচি ঘোষণা করেন রানা দাশগুপ্ত।
তিনি জানান, একই দিন দেশের সব জেলা ও মহানগর সদরে এ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেওয়া হবে।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা-নির্যাতনের ঘটনা তুলে ধরে রানা দাশগুপ্ত বলেন, দেশে বেশ কয়েকটি উপাসনালে হামলা, বিগ্রহ ভাংচুর ও চুরি, জমি জবর-দখলের ঘটনা ঘটেছে এবং তা অব্যাহত আছে।
এসব হামলার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “নির্বাচন যেখানে উৎসব নিয়ে আসার কথা আপামর জাতির সামনে, সেখানে আজ এদেশের ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী নির্বাচনের কথা শুনলেই ভয় পায়, আঁতকে উঠে। কারণ নির্বাচন তাদের কাছে নির্যাতনের ভয়াবহ রূপ হিসেবে দেখা দেয়।”
রানা দাশগুপ্ত বলেন, “নির্বাচনী সহিংসতার পেছনে জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। এসব কারণে অতীতের নির্মম অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশের মধ্যে নির্বাচন বিমুখতাও পরিলক্ষিত হচ্ছে; যা দেশ, জাতি ও গণতন্ত্রের জন্য কিছুতেই শুভ ফল বয়ে আনবে বলে আমরা মনে করি না।”
এ দেশের ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী ‘অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে’ বলেও দাবি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এই প্রসিকিউটর।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশন, বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি, বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোট, জগন্নাথ হল অ্যামালনাই অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ হিন্দু লীগ, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজ সংস্কার সমিতি, বাংলাদেশ মাইনরিটি সংগ্রাম পরিষদ, হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিজ, শ্রী শ্রী ভোলানন্দগিরী আশ্রম ট্রাস্ট, স্বজন, বাংলাদেশ ঋষি পঞ্চায়েত ফোরাম, বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদ এবং অনুভব-কে নিয়ে গঠিত সংখ্যালঘু সমন্বয় কমিটির শীর্ষ নেতরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।