কক্সবাংলা ডটকম(২০ জুন) :: নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে কি আসবে না- বিষয়টি নিয়ে এখন সর্বত্র আলোচনা চলছে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী মহলেও আলোচনার বিষয় এটি। তবে দলের নীতিনির্ধারকরা নির্বাচনে জয়ের কৌশল হিসেবে এমপি মনোনয়নে ব্যাপক পরিবর্তন আনার কথা ভাবছেন।
নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এই নির্বাচনে সংসদের বাইরে থাকা বিএনপি ও আওয়ামী লীগবিরোধী শক্তির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের। দলটি ধারাবাহিকভাবে দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় যেমন শুভাকাক্সক্ষী বেড়েছে তেমনি শত্রুর সংখ্যাও কম নয়। সেই সঙ্গে সারা দেশে মন্ত্রী-এমপি-দলীয় নেতাকর্মী ও তাদের আত্মীয়স্বজনদের বিরূপ আচরণে সাধারণ মানুষের সমর্থনও কমেছে।
আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জরিপগুলোয়ও দেখা গেছে, ব্যক্তি শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা বাড়লেও দলের জনপ্রিয়তা নিম্নগামী। এ ছাড়া ২০০৮-এর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাঠ আওয়ামী লীগের পক্ষে যে জনজোয়ার ছিল নানাবিধ কারণে তাতে ভাটার টান। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার একপেশে নির্বাচনও হবে না। সব মিলিয়ে একাদশ নির্বাচন নিয়ে বেশ চিন্তিত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী মহল। আসন্ন নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য প্রার্থী পরিবর্তনকেই উপায় হিসেবে ভাবছে দলটি। এ লক্ষ্যে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা একাধিকবার আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতা, মন্ত্রী-এমপিদের হুশিয়ার করেছেন।
তিনি জানিয়েছেন, মুখ দেখে আর মনোনয়ন দেওয়া হবে না। নির্বাচনী জরিপে যাদের অবস্থান ভালো, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, জিতে আসতে পারবে তারাই দলীয় মনোনয়ন পাবেন।
তিনি এটাও বলেছেন, গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি অনেকের দায়িত্ব নিয়েছি। এবার কারো দায়িত্ব নিতে পারব না। এ অবস্থায় দলীয় মনোনয়ন পাওয়া কঠিন হবে বলেই ভাবছেন আওয়ামী লীগের অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা। সম্প্রতি ১১ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যকে আওয়ামী লীগে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে তাদের জনপ্রিয়তার কারণে। নিজ নির্বাচনী এলাকায় জনপ্রিয়তা না থাকায় অনেক হেভিওয়েট প্রার্থীও বাদ পড়তে পারেন বলেও আলোচনা আছে দলটির ভেতরে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এ বিষয়ে বলেন, দশম সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল না বলে এমপি মনোনয়নে তেমন একটা পরিবর্তন হয়নি। কিন্তু এবারের নির্বাচনটা প্রতিযোগিতাপূর্ণ হবে। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার জন্য যা যা করা দরকার দলের পক্ষে তা-ই করা হবে। ইতোমধ্যে এ লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়েছে বলেও জানান তিনি।
আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, নির্বাচনী জরিপ দলের পক্ষে প্রতি ৬ মাস পর পরই করা হয়। নির্বাচনকে সামনে রেখে এ জরিপগুলো আরও ঘন ঘন করা হয়। এবারও জরিপ চলছে। জরিপের ফল মনোনয়নের ক্ষেত্রে বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বর্তমান দশম জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগে নির্বাচিত এমপি রয়েছেন ২৩৪ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ২১৬ এবং নারী ১৮ জন।
বিভিন্ন সংস্থা ও আওয়ামী লীগের পক্ষে পরিচালিত একাধিক জরিপের ফলের ভিত্তিতে দেখা গেছে, এই ২৩৪ এমপির মধ্যে প্রায় ৩৪ জন সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। বাকি ২০০ জনের প্রায় কমবেশি সবাই বিতর্কিত।
তাদের মধ্যে কেউ জনবিচ্ছিন্ন, কেউ আত্মীয়করণে জড়িত, কেউ দুর্নীতিবাজ, কেউ টিআর-কাবিখার অর্থ আত্মসাৎ করেছেন, কেউ চাকরি দেওয়ার নাম করে অর্থ লুটে নিয়েছেন।
কেউ আবার চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদকব্যবসা এবং দখলবাণিজ্যে জড়িত। আওয়ামী লীগের প্রথম সারির এক নেতার মতে, বাংলাদেশের বুর্জোয়া রাজনীতিতে এভাবে বাছাই করলে ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হওয়ার অবস্থা দাঁড়াবে! যাদের অবস্থান মোটামুটি ভালো এবং সবচেয়ে বড় কথা নির্বাচনে জিতে আসার মতো অবস্থান রয়েছে; তারাই পাবেন দলীয় মনোনয়ন।
Posted ৪:৫২ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২০ জুন ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta