কক্সবাংলা ডটকম(২৮ জানুয়ারি) :: বাংলাদেশ জুড়ে বন্ধ ট্রেন চলাচল।
সোমবার মধ্যরাত থেকে কর্মবিরতি শুরু করেছে রেলের রানিং স্টাফরা(লোকো মাস্টার, গার্ড, টিটিই)। তাঁদের এই কর্মবিরতির জেরেই বাংলাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ।
এর জেরে ব্যাপক ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন যাত্রীরা।
রেল কর্মীরা আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, তাঁদের দাবি না মিটলে তাঁরা ট্রেন চালাবেন না।
অতিরিক্ত সময়ে কাজের জন্য ‘মাইলেজ ভাতা’, অবসরকালীন সুবিধা-সহ বিভিন্ন দাবি রয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির। এই দাবি মেনে নেওয়া না হলে সোমবার মাঝরাত থেকেই কর্মবিরতির হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।
শিডিউলে থাকা ট্রেনগুলোতে রানিং স্টাফরা উঠেনি। ফলে সারা দেশে বন্ধ রয়েছে ট্রেন চলাচল।
এদিকে মঙ্গলবার রাজধানীর ঢাকা (কমলাপুর) রেলওয়ে স্টেশনে সারা দেশে ট্রেন চলাচল চালু করতে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের নেতাদের নিয়ে দফায় দফায় সমঝোতার বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বৈঠকে শ্রমিকদের পক্ষে কথা বলছেন জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের প্রধান সমন্বয়ক শিমুল বিশ্বাস ও রেল শ্রমিক দলের পক্ষে ইমরুল কায়েস পলাশ। সরকারের পক্ষে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফাহিমুল ইসলাম ও রেলের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক নাজমুল ইসলাম উপস্থিত রয়েছেন বৈঠকে।
অপরিদিকে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাঈদুর রহমান বলেন, আমরা রেল ভবন থেকে কোনো সিদ্ধান্তের কথা জানতে পারিনি। রেল চলাচল বন্ধ রাখার বিষয়ে আমরা আমাদের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছি।
রেলের আন্দোলনরত কর্মীরা জানিয়েছেন, চলতি ট্রেনের কর্মীদের জরুরি স্টাফ বিবেচনায় মূল বেতনের বাইরে অতিরিক্ত ভাতা ও পেনশনের সঙ্গে অতিরিক্ত ৭৫ শতাংশ বেশি টাকা ব্রিটিশ আমল থেকে পেয়ে আসছেন রানিং স্টাফরা। কারণ চলতি ট্রেনের কর্মীদের ট্রেন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে ফিরে আসা পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ৮ ঘণ্টার কয়েকগুন বেশি ডিউটি করতে হয়।
ছবি : সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের নেতাদের নিয়ে সমঝোতার বৈঠক চলছে।
এছাড়া রানিং স্টাফদের সাপ্তাহিক ছুটিও নেই। এসব বিবেচনায় দীর্ঘদিন থেকে পেয়ে আসা এই সুবিধা ২০২১ সালে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বন্ধ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়।
এরপর থেকেই আর্থিক সুবিধা বহালের দাবিতে আন্দোলন করছেন রেলের রানিং স্টাফরা। এর আগেও ওভার টাইম ডিউটি না করা, রেলভবন ঘেরাওসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন তারা।
তবে বারবার আলোচনার পরও সুরাহা হয়নি কোনো। সবশেষ চলতি মাসের ২৮ জানুয়ারি মধ্যে দাবি না মানা হলে রেল ধর্মঘটের ডাক দেয় রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদ। কিন্তু কোনো সমাধান না হওয়ায় মধ্যরাত থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন রানিং স্টাফরা।
এদিকে ট্রেন চালানো বন্ধের ঘোষণা প্রত্যাহারে বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।
রেল মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা রেজাউল করিম সিদ্দিকীর পাঠানো গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফরা আগামী ২৮ জানুয়ারি থেকে কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছে। ফলে সারাদেশে রেল চলাচলে অচলাবস্থা ও চরম যাত্রী ভোগান্তির আশঙ্কা রয়েছে।
এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রেলওয়ে ও রেলপথ মন্ত্রণালয় তাদের দাবি-দাওয়া/চাহিদা পূরণে যথেষ্ট আন্তরিক ও সর্বোচ্চ সচেষ্ট। ইতোমধ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে রানিং স্টাফদের দাবি-দাওয়াগুলো অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে পত্র যোগাযোগের পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক আলোচনাও অব্যাহত আছে।
তবে রেলের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতি শুরুর পরও ঢাকা ছেড়েছে তিনটি ট্রেন। এসব ট্রেন ১২টার আগেই ছাড়ার কথা ছিল। ট্রেন তিনটি ছাড়তে ১২টা পেরিয়ে যায়।
স্টাফদের কর্মবিরতি শুরুর পর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে যাওয়া তিন ট্রেন হলো কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস, চট্টগ্রাম মেইল ও পঞ্চগড় এক্সপ্রেস।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমলাপুর রেলস্টেশন সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান, সবশেষ তিনটি ট্রেন নির্দিষ্ট সময়ের পর একে একে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বেরিয়ে যায়। তবে তিনটি ট্রেনই যাত্রীতে বোঝাই ছিল।
তিনি আরও জানান, ভোররাতের আগে কমলাপুর রেলস্টেশন ছেড়ে যাওয়ার আর কোনো ট্রেন নেই। শেষ তিনটি ট্রেন বিলম্বিত সময়ে ছেড়েছে।
Posted ১:৩৭ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারি ২০২৫
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta