কক্সবাংলা ডটকম(২৮ জানুয়ারি) :: ছোট্ট একটা স্টার্টআপ। এআই-এর দুনিয়ায় যার নাম আগে শোনাই যায়নি। সেই সংস্থার তৈরি এআই মডেল ডিপসিক (DeepSeek) সম্প্রতি কাঁপিয়ে দিয়েছে গোটা দুনিয়াকে।
ধসে গিয়েছে এআই এবং চিপ নিয়ে কাজ করা বৃহৎ প্রযুক্তি সংস্থার শেয়ারের দর। রাতারাতি আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড করা বিনামূল্যের অ্যাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে ডিপসিক।
ডাউনলোডের নিরিখে পেরিয়ে গিয়েছে চ্যাটজিপিটিকেও (ChatGPT)। চিনা স্টার্টআপের এই এআই প্ল্যাটফর্ম সারা বিশ্বেই এখন আলোচনার কেন্দ্রে। আর তার সঙ্গেই আলোচনায় উঠে এসেছে ডিপসিকের প্রতিষ্ঠাতা লিয়াং ওয়েনফেং-এর (Liang Wenfeng) নাম।
কে এই লিয়াং ওয়েনফেং?
এআই প্রযুক্তি নিয়ে এতদিন যত আলোচনা হয়েছে, তাতে বারবার যে যে সংস্থা ও ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে তাতে এতদিন পর্যন্ত শোনা যায়নি লিয়াংয়ের নাম। বরং শেয়ার মার্কেট সংক্রান্ত আলোচনায় একটু হলেও এই নাম শোনা গিয়েছিল।
ডিপসিক আসার পর চালচিত্র বদলে গিয়েছে অনেকটাই। বছর চল্লিশের লিয়াং চিনের ঝেজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক।
উদ্যোগপতি হিসেবে লিয়াংয়ের পথচলা শুরু বেশ কয়েক বছর আগে। ২০১৫ সালে হাই-ফ্লায়ার (High-Flyer) নামে একটি কোয়ান্টিটেটিভ হেজ ফান্ড (Hedge Fund) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন লিয়াং।
ট্রেডিংয়ে এআই-এর ব্যবহার শুরু হয়েছিল তাঁর হাত ধরে। মার্কেট ট্রেন্ড বুঝতে এবং বিনিয়োগ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে এআই-এর ব্যবহার শুরু করেন তিনি।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্ল্যাটফর্ম তৈরির জন্য অন্যতম প্রয়োজনীয় জিনিস GPU বা গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট। এআই ট্রেনিং এবং এআই ইন্টারফেস তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয় এগুলি।
গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট ডেটা সেন্টার তৈরির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাইডেনের আমলে চিনে এআই চিপ রপ্তানির উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল।
তার আগে ২০২১ সালে বিপুল সংখ্যায় এনভিডিয়া (Nvidia) গ্রাফিক্স প্রসেসর কিনতে শুরু করেন লিয়াং। সেই সময়ে মনে করা হয়েছিল স্রেফ ঝোঁকের বশে এআই সংক্রান্ত গবেষণার জন্য এত চিপ কিনছেন লিয়াং। কিন্তু তাঁর লক্ষ্য ছিল বহুদূর। তৈরি করলেন ডিপসিক নামে এআই প্ল্যাটফর্ম।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেছিলেন একমাত্র বাইটডান্স বা আলিবাবা-র মতো বৃহৎ তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা এআই প্ল্যাটফর্ম বানাতে পারবে, সেই ধারণা ভুল প্রমাণ করে স্টার্টআপ সংস্থার হাত ধরেই বাজারে এল DeepSeek।
সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর, ডিপসিক তৈরির পিছনেও রয়েছে অনেক লড়াই। গবেষণা থেকে শুরু করে দেখভাল, সব কিছুই নিজে হাতে করেছেন লিয়াং। চিনের প্রথমসারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলি থেকে বাছাই করে গবেষক ও কর্মী এনেছেন লিয়াং। বাইটডান্সের মতো বড় সংস্থার বেতনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেতন দিয়েছেন কর্মীদের।
২০২৩ সালের মে মাসে প্রতিষ্ঠা করা হয় ডিপসিক নামক সংস্থার। পরে যখন সামনে এসেছে ডিপসিক প্ল্যাটফর্ম, তখনই দেখা গিয়েছিল চ্যাটজিপিটির সমতুল্য কাজ করতে সক্ষম এই অ্যাপ। ডেটা অ্যানালিসিস, মেশিন লার্নিং থেকে শুরু করে আরও নানা পরিষেবা দিতে পারে এটি।
এছাড়াও এতে এমন আধুনিক ফিচার রয়েছে যা সামগ্রিক ভাবে ব্যবহারকারীদের জন্য লোভনীয় হয়েছে। তার জেরেই আমেরিকার মাটিতেও চাহিদার ভিত্তিতে প্রথম সারির অ্যাপের জায়গা পেয়েছে ডিপসিক। এতদিন যত আলোচনা হয়েছে তাতে বারবার বড় সংস্থাগুলির তরফ থেকে বলা হয়েছে যে, এআই মডেল তৈরি করতে বিপুল খরচ হয়। এই ডিপসিক তার থেকেও অনেক কম খরচে উন্নত এআই মডেল তৈরি করেছে বলে বিভিন্ন প্রতিবেদন সূত্রের দাবি।
আল জাজ়িরার প্রতিবেদন সূত্রের খবর, ২০২৩ সালে চিনের একটি মিডিয়া সংস্থা ওয়েভস (waves)-কে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন লিয়াং। সেখানে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, যেহেতু এআই প্রযুক্তি অত্যন্ত খরচসাপেক্ষ সেই কারণে কোনও স্টার্টআপ সংস্থার এই ময়দানে নামা উচিত কিনা। সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছিলেন লিয়াং। তাঁর মতে, গবেষণার মানের উপরেই জোর দিয়েছিলেন তিনি। ওই সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেছিলেন, শুধুমাত্র ‘কৌতূহল’ থেকেই এআই-এর কাজ শুরু করেছিলেন তিনি।
শেয়ার বাজারেও বড়সড় প্রভাব ফেলেছে ডিপসিকের রকেট উত্থান। এনভিডিয়ার স্টকের দাম পড়েছে ১৭ শতাংশ। আমেরিকার টেকনোলজির স্টকগুলির সূচক ন্যাসডাক (Nasdaq) সোমবার ৫ শতাংশ পড়ে গিয়েছিল। এআই প্রযুক্তিতে আমেরিকার সংস্থাগুলির একচেটিয়া প্রভাব এ বার খর্ব হতে পারে, এটা ভেবেই কি শঙ্কিত হচ্ছেন লগ্নিকারীরা?
আপাতত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকলেও এআই-এর মাঠ অনেকটা লম্বা। এই ময়দানে টিকে থাকতে গেলে মাইক্রোসফট, গুগল, মেটা, ওর্যাক্ল, ওপেনএআই-এর মতো বৃহৎ সংস্থাগুলির সঙ্গে প্রতিনিয়ত টক্কর দিতে হবে ডিপসিককে। ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য থেকে অর্থনীতি, শিক্ষা থেকে প্রতিরক্ষা, সর্বত্র এআই নির্ভরতা আরও বাড়তে পারে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই পরিস্থিতিতে ডিপসিকের হাত ধরে এআই দুনিয়ায় চালকের আসনে বসতে আমেরিকা ও চিনের লড়াই আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
Posted ১২:৩১ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৯ জানুয়ারি ২০২৫
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta