বুধবার ১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বুধবার ১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

কক্সবাজার সীমান্তে নীরবে ৮০ হাজার রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ!

সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
28 ভিউ
কক্সবাজার সীমান্তে নীরবে ৮০ হাজার রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ!

বিশেষ প্রতিবেদক :: কক্সবাজারের সীমান্ত এলাকাগুলো দিয়ে দালালেরর মাধ্যমে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে নীরবে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকছে এবং এটিকে আটকানো খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ সীমান্তে মিয়ানমার অংশের পুরোটা আরাকান আর্মি দখল করায় এবং সীমান্ত পরিস্থিতির সুযোগে রোহিঙ্গারা দুর্নীতির মাধ্যমে ঢুকছে।

অর্থের বিনিময়ে তারা নৌকা নিয়ে ঢুকছে। তারা যে একটিমাত্র সীমান্ত দিয়ে ঢুকছে, বিষয়টি এমনও নয়, বিভিন্ন জায়গা দিয়ে ঢুকছে।

নির্দিষ্ট পথ না থাকায় এটিকে আটকানো খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া আরাকান আর্মি রাষ্ট্রবিহীন হওয়ায় তাদের সঙ্গে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের দর কষাকষিও সম্ভব হচ্ছে না। এই অনুপ্রবেশ বন্ধে এবং রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারকেই উদ্যোগ নিতে হবে।

রোহিঙ্গা মানবাধিকার কর্মী অভিযোগ করেছেন, আরাকান আর্মি তাদের আক্রমণের সময় উত্তর রাখাইনে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে লক্ষ্যবস্তু করেছে, ফলে কয়েক হাজার মানুষ নিরাপত্তার জন্য পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। তবে আরাকান আর্মি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

জানা গেছে, রাখাইনের মংডু অঞ্চলের বেশিরভাগই এখন রোহিঙ্গা বিরোধী বলে পরিচিত আরাকান আর্মির দখলে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ বাড়ছে। সীমান্তে কড়া নজরদারিও কাজে আসছে না।

এর আগে গত অক্টোবর মাসে এক আলোচনায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানিয়েছিলেন, অক্টোবর পর্যন্ত ৪৩ হাজার রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছে।

সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবরে বলা হয়, এ পর্যন্ত ৬০ হাজার রোহিঙ্গার বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। তবে প্রকৃত সংখ্যা ৮০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে দাতা গোষ্ঠী এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা মনে করছে।

রবিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশসহ নানা ইস্যুতে একথা বলেন। এই সময় তিনি সীমান্ত পরিস্থিতি, থাইল্যান্ডে বৈঠকসহ নানা প্রশ্নের খোলামেলা জবাব দেন।

উল্লেখ্য, মিয়ানমারের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে থাইল্যান্ডে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভারত, চীন ও লাওসের মধ্যে অনুষ্ঠিত অনানুষ্ঠানিক পরামর্শ সভায় যোগ দেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। ঢাকায় ফিরে তিনি এ সভা সম্পর্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

এর আগে সকালে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যেও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বঙ্গোপসাগরের সম্ভাবনা উন্মোচনে শান্তি ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন গুরুত্বপূর্ণ।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, যুদ্ধ- বিধ্বস্ত মিয়ানমারকে বলেছি, সীমান্ত আর তোমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। অন্যদের হাতে চলে গেছে। আমরা তো রাষ্ট্র হিসেবে নন-স্টেট অ্যাক্টর (আরাকান আর্মি) যারা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে, তাদের সঙ্গে দর কষাকষি করতে পারি না। কাজেই তোমাদের দেখতে হবে কোন পদ্ধতিতে সীমান্ত এবং রাখাইনের সমস্যার সমাধান করবে।

আরও একটি রোহিঙ্গা ঢলের আশঙ্কা রয়েছে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমি মনে করি না ভবিষ্যতে আরও একটি রোহিঙ্গা ঢল আসবে। তবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহল আশঙ্কা করছে, ভবিষ্যতে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ আরও বাড়বে, এটি আমরা বৃহত্তর পরিসরে সবাইকে জানিয়েছি।

উল্লেখ্য, থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিস সাঙ্গিয়াম্পংসারের সভাপতিত্বে বৈঠকে মিয়ানমারের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী উ থান সোয়ে, লাওসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেলুয়েমেস্কেই কোমাসিথ, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিসরি ও চীনের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী মা ঝাউজু নিজ নিজ দেশের নেতৃত্ব দেন। বাংলাদেশের নেতৃত্বে ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।

ওই আলোচনা সভার বিষয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, মূল বিষয় ছিল তিনটি। সীমান্ত, মাদক ও অস্ত্র, মানব পাচার। আর মিয়ানমারের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ও বর্তমান অবস্থা নিয়ে। সবাই মিয়ানমারকে সমর্থন করতে চায়। তারা (মিয়ানমার) যদি সমস্যা মিটিয়ে ফেলে তাহলে তাদের জন্য একটা পথ ঠিক করুন।

একজন অবশ্য বলেছেন, একটা কেন্দ্রীয় কাঠামো প্রত্যাশিত। কেউ বিশ্বাস করেন না যে, মিয়ানমার তিন বছর বা পাঁচ বছর আগে যে অবস্থায় ছিল সেই অবস্থায় ফিরে যাবে। উপদেষ্টা বলেন, যদি প্রত্যাশা করত এই আলোচনার দরকার ছিল না। সবাই বলেছে, আমরা মিয়ানমারকে সমর্থন করব, তারা যদি করতে চায় (ফেডারেল স্ট্রাকচার) আমরা হস্তক্ষেপ করব না। কিন্তু আমরা চাই সমাধান হোক।

সীমান্ত ইস্যুতে আলোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, সীমান্তের ব্যাপারে প্রধানত, উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ সীমান্ত নিয়ে বেশি কথা হয়েছে। এ ছাড়া পশ্চিমের সীমান্ত, যেখানে আমাদের স্বার্থ আছে। কিছু স্ক্যাম সেন্টার সেখানে গড়ে উঠেছে, যেটায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত হয়; সেই অপরাধ নিয়ে তারা খুব উদ্বিগ্ন। এ ছাড়া মাদক তো আছেই। অপরাধ এবং সীমান্ত ইস্যুতে বলা হয়েছে, মিয়ানমার যেন যথাযথ ব্যবস্থা নেয়।

গত দুই মাসে রাখাইন থেকে বাংলাদেশে নতুন করে ৬০ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, আমাদের নীতিগতভাবে অবস্থান ছিল আর কোনো রোহিঙ্গাকে ঢুকতে দেব না। তবে পরিস্থিতি কখনো কখনো এমন দাঁড়ায় যে আমাদের কিছু আর করার থাকে না। সে রকম পরিস্থিতিতে আমরা ৬০ হাজার রোহিঙ্গাকে ঢুকতে দিয়েছি। আনুষ্ঠানিকভাবে যে তাদের ঢুকতে দিয়েছি, তাও নয়, তারা বিভিন্ন পথে ঢুকেছেন।

রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পুরো অঞ্চলে কীভাবে অশনিসংকেত সৃষ্টি করছে, তা জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, এখন বয়স্ক যেসব রোহিঙ্গা আছেন, তারা হয়তো পরিস্থিতি মেনে নেবেন। তবে আগামী ৫ বছর পর যেসব তরুণ রোহিঙ্গার বয়স ২০ বছর হবে, তারা বেপরোয়া হয়ে উঠবেন। তখন আমাদের সমস্যা বেশি হবে ঠিকই, তবে সেই সমস্যা প্রত্যেকেরই হবে। এর মধ্যেই নৌকায় রোহিঙ্গারা অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত পৌঁছে গেছেন।
মিয়ানমার সীমান্তবর্তী কিছু স্ক্যাম সেন্টার চীন নষ্ট করে দিয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

এখন স্ক্যাম সেন্টারগুলো মূলত থাইল্যান্ড ও লাওসের সীমান্তে আছে বলেও জানান তিনি। বলেন, এসব সেন্টারে অনেক বাঙালি আটকে পড়েছেন। সবাই যে পাচারের মাধ্যমে গেছেন, তাও নয়। অনেকেই লোভে পড়ে সেখানে গেছেন।

সকালে পৃথক এক সেমিনারে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বঙ্গোপসাগরের সম্ভাবনা উন্মোচনের জন্য মিয়ানমারে শান্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বলেন, গৃহযুদ্ধ-জর্জরিত প্রতিবেশী দেশটিতে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় এর রাখাইন রাজ্যে টেকসই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন অপরিহার্য। তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত মিয়ানমারে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা নিরাপত্তা ও অধিকার নিয়ে তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে পারবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত মিয়ানমার ও এই অঞ্চলে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে আসবে না।

তৌহিদ হোসেন বলেন, বঙ্গোপসাগরের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে মিয়ানমারসহ সমুদ্র উপকূলীয় রাজ্যগুলোতে শান্তি ও সম্প্রীতি অপরিহার্য। মিয়ানমারে বর্তমানে গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত সাত বছরে চরম নৃশংসতার শিকার হয়ে রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হওয়া ১২ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তৌহিদ আরও বলেন, তাদের প্রত্যাবাসনে কোনো অগ্রগতি হয়নি এবং একটি অ-রাষ্ট্রীয় পক্ষ, আরাকান আর্মি বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের সমগ্র সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।

উল্লেখ্য, সর্বপ্রথম ১৯৭৮ সালে দুই লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশ-মায়ানমারের সীমান্ত জেলা কক্সবাজারে আসে। ১৯৯০-এর দশকের প্রথম দিকে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযানের শিকার হয়ে কক্সবাজারে আসে আরো ৫০ হাজার রোহিঙ্গা। এরপর ২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধ সন্ত্রাসীদের পরিকল্পিত হামলা গণহত্যা চালানোর পর কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আসে আরো সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী। এদের সাথে আগে থাকা উল্লিখিতরা মিলে কক্সবাজার জেলা এখন ১৫ লাখ রেহিঙ্গা শরণার্থীর আবাসভূমি। এদের ছয় লাখ এখন আছে শরণার্থীদের জন্য নির্মিত কুতুপালং মেগা শিবিরে। আর এটি হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির।

28 ভিউ

Posted ১২:২৫ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : Shaheed sharanee road, cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com