কক্সবাংলা ডটকম(২৬ মে) :: সুপ্রিম কোর্টের সামনে স্থাপিত গ্রিক দেবী থেমিসের আদলে নির্মিত ভাস্কর্যটি বৃহস্পতিবার রাতে সরিয়ে নেওয়ার পর প্রথম সকাল বিষণ্ন। মূল গেটের সামনে জনা দশেক অ্যাক্টিভিস্ট দিনের পরের কর্মসূচি নিয়ে ছক কষছেন, ডান পাশে বসে রাতের ক্লান্তি দূর করছেন কয়েকজন পুলিশ। সব স্বাভাবিক, কেবল ভাস্কর্যটা আগের জায়গায় নেই। এদিকে, সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণের অ্যানেক্স ভবনের সামনে প্রতিস্থাপন করার কথা থাকলেও শুক্রবার পুনঃস্থাপিত হচ্ছে না ভাস্কর্যটি।
ভোর পাঁচটার দিকে ঢাকা মেট্রো ন ১৬-১৫০৪ নম্বরের পিকআপ ভ্যানে করে ভাস্কর্যটি হাইকোর্টের অ্যানেক্স ভবনের ভেতর পানির পাম্পের পাশে রাখা হয়েছে।
আর ভাস্কর্য সরানোর সময় রাতভর আদালতের ফটকের সামনে বিক্ষোভ করেছেন বিভিন্ন প্রগতিশীল রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। রাতেই ওই ভাস্কর্য সরানোর কাজ শেষ হয়।
কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামসহ ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলের অব্যাহত দাবির মুখে সুপ্রিম কোর্ট চত্বর থেকে ভাস্কর্যটি সরানো হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত সাড়ে ১২টার দিকে ভাস্কর্য সরানোর খবর পাওয়ার পর বিভিন্ন এলাকা থেকে সর্বোচ্চ আদালতের সামনে ছুটে আসেন বিক্ষুব্ধরা। দুইটার দিকে বেশ কিছু তরুণ সুপ্রিম কোর্টের মূল ফটকের বাইরে স্লোগান দিতে থাকেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নেতা-কর্মী ও সাধারণ ছাত্রদের একটি মিছিল আসে। রাত আড়াইটার দিকে বিক্ষুব্ধরা আদালতের ফটক ধরে ধাক্কাধাক্কি করেন।
এ সময় কিছুক্ষণের জন্য ভাস্কর্য সরানোর কাজ বন্ধ থাকে। ভেতর থেকে ফটকের কাছে আসেন কর্তব্যরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
তবে সাময়িক উত্তেজনার পর বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ ফটকের সামনে ও অন্য একটি অংশ রাস্তার একপাশ বন্ধ করে রাস্তার ওপর অবস্থান নেন। থেমে থেমে স্লোগান দিচ্ছিলেন তাঁরা। স্লোগান ওঠে ‘ন্যায়বিচারের ভাস্কর্য অপসারণ করা যাবে না’, ‘আপস না রাজপথ?—রাজপথ, রাজপথ’, ‘হেফাজতের আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘মৌলবাদের আস্তানা, ভেঙে দাও জ্বালিয়ে দাও’ ইত্যাদি।
বিক্ষোভের মধ্যেই ভাস্কর্যটি অপসারণের কাজ শেষ হয়। সেখান থেকে ক্রেনের সাহায্যে ভাস্কর্যটি একটি ছোট ট্রাকে তোলা হয়। ভাস্কর্যটি অ্যানেক্স ভবনের ভেতরে পানির পাম্পের পাশে নিয়ে রাখা হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
এর মধ্যে ভাস্কর মৃণাল হক সেখানে একাধিকবার গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন।
মৃণাল হক বলেন, এ ভাস্কর্য কোনো গ্রিক দেবীর নয়। বরং এটি বাঙালি মেয়ের ভাস্কর্য। যার হাতে ন্যায়বিচারের প্রতীক।
মৃণাল হক বলেন, আমার কিছু বলার নেই। আমাকে চাপ দিয়ে ভাস্কর্যটি সরানো হচ্ছে। এখন এটি সরানো হচ্ছে, এরপর নির্দেশ আসবে অপরাজেয় বাংলা ভাঙার। তিনি বলেন, দেশের শান্তি রক্ষার স্বার্থে যত্ন করে ভাস্কর্যটি সরাচ্ছেন। তিনি না থাকলে এটি নয় টুকরা করা হতো। কিন্তু এখন এটি অক্ষত অবস্থায় অপসারণ করা সম্ভব হয়েছে।
ভোর চারটার দিকে ভাস্কর্য অপসারণের কাজ শেষ হওয়ার পর আরও ঘণ্টাখানেক অবস্থান করে বিক্ষোভকারীরা সেখান থেকে চলে যান। এরই মধ্যে বিক্ষোভকারীদের কাছ থেকে আলাদা দুটি কর্মসূচির ঘোষণা আসে।
ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী ঘোষণা করেন, বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) রাজু ভাস্কর্যের সামনে তাঁরা জমায়েত হবেন। সেখান থেকে সুপ্রিম কোর্ট অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে যাবেন।
পরে ব্লগার ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্টদের পক্ষ থেকে অ্যাকটিভিস্ট অনিমেষ রহমান জানান, সকাল ১০টায় শাহবাগে তারা জমায়েত হবেন। পরে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, সেটা ঘোষণা করা হবে।