হুমায়ূন রশিদ,টেকনাফ(২৯ ডিসেম্বর) :: চলতি বছরের শেষ দিন তথা থার্টি ফাস্ট নাইট উপলক্ষ্যে সাগর কন্যা নারকেল দ্বীপ জিনজিরায় দেশী-বিদেশী পর্যটকদের ভিড় বেড়ে গেছে। এতে জাহাজ, হোটেল-মোটেল এবং মৌসুমী ব্যবসায়ীরা উল্লাসিত হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে দমদমিয়া সেন্টমার্টিনগামী দমদমিয়াস্থ বিভিন্ন জাহাজ ঘাটে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। গত ১৩ নভেম্বর জেলা প্রশাসনের অনুমতি স্বাপেক্ষে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে পর্যটকদের যাতায়াত শুরু হয়।
এখন পর্যন্ত ৮টি বিলাস বহুল জাহাজ প্রবালদ্বীপে পর্যটক বহন করছে। এই সময়ে দেশী-বিদেশী কর্মব্যস্থ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ একটু বিনোদনের জন্য বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকত কক্সবাজারের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ভিড় করছে। এরই মধ্যে অন্যতম আকর্ষণীয় মনোরম পরিবেশ সম্পন্ন সাগর কন্যা প্রবালদ্বীপে বছরের শেষ সময় প্রিয়জনদের নিয়ে কাটানোর জন্য দলে দলে ছুটছে।
দমদমিয়া জাহাজ ঘাট হতে যাত্রা শুরু করে নাফনদীর বুকের শীতল ভেদ করে জাহাজ চলার পথে পাখির কলতান, মনোমুগ্ধকর অঙ্গ-ভঙ্গির মাধ্যমে পেছনে পেছনে গমন, আলোচিত মিয়ানমার সীমান্দ দর্শনসহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য অবলোকনের জন্য পর্যটকেরা নির্দিষ্ট আসন ছেড়ে জাহাজের নিয়ম অমান্য করে ছাদ ও ভ্যালকনিতে ভিড় জমিয়ে মনের আনন্দে বিভিন্ন ভঙ্গিতে সেলফি তুলতে ব্যস্থ হয়ে পড়ে।
এই রকম সেলফি তুলতে গিয়েই গত সপ্তাহে এক পর্যটক নদীতে পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। তাদের আনন্দ – উল্লাসে পুরো জাহাজ বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়। জাহাজের নাবিকেরা এই নৌপথে যাত্রাকালে পর্যটকদের অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা ও স্থানের বর্ণনা দিয়ে উৎসাহিত করেন। তাই এইসব বিষয়ের ফলে সেন্টমার্টিনগামী পর্যটকদের সংখ্যাক্রমশ বাড়ছে।
এদিকে প্রতিবছর শেষ দিনটি পালন করার জন্য পর্যটকের ঢল বেশী থাকে। কিন্তু অন্যান্য বারের তুলনায় ছুটিসহ বিবিধ কারণে এই বারের থার্টি ফাস্ট নাইট পালনের জন্য সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের বেশী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
অনেক পর্যটক এই বিশেষ মুর্হুতের জন্য আগেই হোটেল বুকিং করে রেখেছে। যার ফলে দ্বীপের ১শ ২০টির মতো আবাসিক হোটেল, কটেজ ও রেস্টুরেন্ট পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে। পর্যটক বেশী আসায় বিভিন্ন ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতাসহ দ্বীপবাসীর মুখে হাসির ঝিলিক লেগেছে বললেই অধ্যুক্তি হবেনা।
অনেক পেশাজীবি, গৃহিনী, ছাত্র ও শিশু পর্যটক সাগরে গোসল করে, বালিয়াড়িতে দৌড়াদৌড়ি এবং ছৈঁড়া দ্বীপে রোমাঞ্জকর হাঁটাহাঁটিসহ উল্লাসিতভাবে সময় কাটানোর নানা অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে শুনা গেছে।
এই বিষয়ে কেয়ারী ট্যুরের সেন্টমার্টিন ইনচার্জ নুরুল মোস্তফা বলেন,থার্টি ফাস্ট উপলক্ষ্যে আজ পর্যন্ত প্রায় ৫হাজার পর্যটক অবস্থান করছে। পর্যটকদের পদচারনায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা স্বস্থিতে রয়েছে।
কেয়ারী ট্যুরসের টেকনাফ ম্যানেজার শাহ আলম বলেন, গত মাসে আমরা আনুষ্ঠানিক পর্যটক বহনকারী জাহাজ চলাচল উদ্বোধনের পর পরই এই নৌপথে পর্যটকদের আনা-গোনা বেড়েছে। থার্টি ফাস্ট নাইট উপলক্ষ্যে প্রচুর পর্যটকদের আনা-গোনায় আমরাও উল্লাসিত।
পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি হয়রানিরোধের ব্যাপারেও আমরা সর্তক রয়েছি। এই ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ হাস্যেজ্জ্বল ভাষায় বলেন, ভাই দীর্ঘদিন পর পর্যটকদের আনা-গোনায় দ্বীপবাসী উল্লাসিত বলে দাবী করেন।
পর্যটকদের আগমনের ফলে ব্যবসায় চাঙ্গাভাব ফিরে এসেছে এবং তাদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের বিষয়টি মাথায় নিয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখা হয়েছে। তবে আজ পর্যন্ত প্রায় ৭হাজার পর্যটক দ্বীপে অবস্থান করছে।
টেকনাফ মডেল থানার অফির্সাস ইনচার্জ মোঃ মাইন উদ্দিন খাঁন বলেন,পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা রক্ষার পাশাপাশি বছরের বিশেষ দিন তথা থার্টি ফাস্ট নাইট পালনে যেকোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন সিদ্দিক বলেন,প্রবালদ্বীপে পর্যটকদের স্বাভাবিক ও নির্বিঘœ চলাফেরা নিশ্চিত করতে উপজেলা প্রশাসনের বিশেষ নজরদারী রয়েছে। তবে দ্বীপে অবস্থানকারী পর্যটকদের বাড়তি নিরাপত্তা ও সুবিধার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও সজাগ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
Posted ৭:১৩ অপরাহ্ণ | শনিবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta