সংবাদ বিজ্ঞপ্তি(১৮ জানুয়ারি) :: জনাব, আপনার পোর্টালে প্রকাশিত খবরটি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এই খবরে সেভ দ্য চিল্ড্রেন ইন্টারন্যাশনালের বিরুদ্ধে যেসব তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে, তা বিভ্রান্তিমূলক।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে খোলাবাজার থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে ডাল কিনে প্যাকেটে ভরে রোহিঙ্গাদের দিয়ে প্রতি কেজি ডালের প্যাকেজিং খরচ দেখানো হচ্ছে ৯৩ টাকা! শুধু ডাল প্যাকেটজাত করে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ হিসেবে বিতরণ করে বাড়তি খরচ দেখিয়ে ১৭ লাখ টাকা পকেটে ভরেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) সেভ দ্য চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনাল।
সেভ দ্য চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনাল তাদের নিবন্ধিত ভেন্ডর (সরবরাহকারী) এবং উন্মুক্ত দরপত্র বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সকল প্রকার ক্রয় সম্পন্ন করে থাকে। ত্রানের “খাদ্য সহায়তা প্যাকেজ” ক্রয় প্রক্রিয়াটিও তার ব্যাতিক্রম হয়নি এবং সেভ দ্য চিলদ্রেন ইন্টারন্যাশনাল সীমিত এবং উন্মুক্ত দরপত্র বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এফডি৭ অনুমোদিত “খাদ্য সহায়তা প্যাকেজ” ক্রয় করেছে। উল্লেখ্য যে, আলাদা আলাদাভাবে প্রত্যেকটি / কোন আইটেম ক্রয় করা হয় নি বরং সমস্ত আইটেম একটি সম্পূর্ণ খাদ্য প্যাকেজ হিসাবে ক্রয় করা হয়েছে ।
একটি স্বচ্ছ ক্রয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সর্বনিম্ন মূল্যায়িত দরপত্র দাতা নির্বাচন করে ক্রয় চুক্তিগুলো প্রদান করা হয়েছে । এবং ভেন্ডরের আর্থিক মূল্যায়নের সময় সম্পূর্ণ প্যাকেজের মূল্য বিবেচনা করা হয়েছে, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল ৮ কেজি ডাল, ৪ লিটার তেল, ২ কেজি চিনি, ১ কেজি লবণ, ১ কেজি সুজি, ১ টি বস্তা এবং পরিবহন মূল্য। বিক্রেতা প্যাকেজের প্রতিটি একক আইটেমে বা প্যাকেজের বিভিন্ন আইটেমে এইসকল আনুসাঙ্গিক খরচ সমান অথবা বিভিন্ন অনুপাতে বিতরণ করতে পারে।
সুতরাং,সম্পূর্ণ প্যাকেজটি বিবেচনা না করে, কোন পৃথক আইটেম ধরে মূল্য বিবেচনা করলে ভুল হওয়াটা স্বাভাবিক, যা এক্ষেত্রে ঘটেছে। সেভ দ্য চিল্ড্রেন ইন্টারন্যাশনালের সাথে সংশ্লিষ্ট ভেন্ডরগণ শুধু মাত্র পণ্য কক্সবাজারে অবস্থিত গুদামঘরে পৌঁছে দেয়ার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। এরপর এই পণ্য গুদামঘর থেকে ক্যাম্পে পৌছানো, বিতরন করার যেই আনুসাঙ্গিক খরচ তা সেভ দ্য চিলড্রেন পরিচালনা করে এবং এটি ক্রয় আদেশে উল্লেখিত থাকে না। প্রতিবেদন অনুযায়ী,যে ১৬ টাকা প্যাকেজিং খরচ বলা হচ্ছে, তা প্রকৃতপক্ষে পূর্ণ খরচের একটি অংশ।
আরো বিবেচ্য যে্, এফডি৭ – এ উল্লিখিত ও অনুমোদিত মূল্য যেটি ধরা হয় তা আনুমানিক এবং প্রকৃত ক্রয় মূল্যের সাথে ভিন্নতা থাকতে পারে । সাধারনত কার্যক্রম শেষ হলে, যথাযথ অডিটের মাধ্যমে সকল খাতে খরচের বিবরণীসহ চূড়ান্ত আয়-ব্যয়ের প্রতিবেদন এনজিও ব্যুরো তে জমা দেয়া হয় যেখানে প্রকৃত খরচের পূর্ণাঙ্গ বিবরণী থাকে। কোন কার্যক্রম শেষে উদবৃত্ত অর্থ থেকে গেলে সাধারনত পুনরায় একটি এফডি ৭ এর অনুমোদন নিয়ে সংশ্লিষ্ট দাতার অনুমতিক্রমে নতুন উন্নয়ন কার্যক্রমে ব্যবহৃত হয়। অতএব, ১৭ লাখ টাকা পকেটে ভরার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, জেলা পরিদর্শকের সরেজমিনে তদন্তকারী দলের প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৩৩ টাকা দরের ডাল বিতরণ করার কথা। কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তারা ৮৫ টাকা কেজি দরের তীর মার্কা ব্র্যান্ডের কিছু ডাল কিনেছে। আর বাকি ডাল কিনেছে খোলাবাজার থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে। তারা এই ডালের প্যাকেজিং খরচ ধরেছে ৯২ টাকা ৯৬ পয়সা।
সেভ দ্য চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনাল বিভিন্ন ধাপে মোট ৪টি ভেন্ডরের কাছ থেকে অনুমোদিত নমুনা অনুযায়ী (স্ট্যান্ডার্ড ব্র্যান্ডেড প্যাক) খাদ্য সামগ্রী পেয়েছি । অনুমোদিত দুটি ব্র্যান্ড হল এসিআই এবং তীর, যা কক্সবাজারে বিতরন করা হয়েছে, । গত ৪ মাসে ক্রয় করা চালানগুলোর মধ্যে একটি ভেন্ডর তাদের ক্রয় আদেশ এর বিপরীতে শুধুমাত্র ৩৯,০৮০ কেজি ডাল খোলা পকেটে এবং বাকি ৩৬,৯২০ কেজি ডাল তীর ব্র্যান্ডেড প্যাকেটে সরবরাহ করেছে ।উক্ত ভেন্ডরের প্রয়োজনীয় সময়সীমার মধ্যে ৭৬০০০ কেজি ১কেজির প্যাকেট সরবরাহ করার কথা। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এইসংখ্যক ১ কেজির তীর ব্র্যান্ডের প্যাকেট না পাওয়ায়, উক্ত ভেন্ডর আমাদের পূর্ব অনুমতি না নিয়ে তীর এর ২৫ কেজির প্যাকেট ডাল ক্রয় করে তার থেকে ১ কেজি ওজনের আলাদা প্যাকেট তৈরী করে, যাতে তারা তীর ব্র্যান্ডের প্যাকেট ব্যবহার না করে সাধারন পরিষ্কার পলি প্যাক ব্যবহার করে। সেভ দ্য চিল্ড্রেন ইন্টারন্যাশনাল এই পলি ব্যাগের প্যাকেট নিয়ে প্রশ্ন করলে, ভেন্ডর তার ডাল ক্রয়ের নথির অনুলিপি জমা দেয় যা সিটি গ্রূপ (তীর ডাল এর প্রস্তুতকারক) প্রদান করেছে । এরপরও সেভ অনুসন্ধান করে প্রমান পেয়েছে যে সরবরাহ কালীন তীর ব্র্যান্ডেড ডাল এবং পরিষ্কার পলি প্যাকের ডালের মধ্যে কোন ভিন্নতা নেই, অর্থাৎ দুটি প্যাকেটেই ভেন্ডর অনুমোদিত তীর ব্র্যান্ডের ডাল সরবরাহ করেছে, শুধুমাত্র প্যাকেট ভিন্ন ছিল। এর কিছু নমুনা এখনো সেভ দ্য চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনালের কাছে রয়েছে। পরিশেষে, তীর অনুমোদিত ব্র্যান্ডেড প্যাকেজ থেকে বিচ্যুতির জন্য, ভেন্ডরের চূড়ান্ত পেমেন্ট থেকে একটি নির্দিষ্ট অংশ শাস্তি স্বরূপ কাটা হয়েছে । কাজেই আপনার পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী খোলাবাজার থেকে ৬৫ টাকা দরে ডাল কেনার অভিযোগটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
এক্ষেত্রে উল্ল্যেখ্য যে, সেভ ইতিমধ্যে সকল প্রয়োজনীয় নথি ও দলিল সহ একটি লিখিত ব্যাখ্যা এন জিও ব্যুরোকে জমা দিয়েছে।
প্রতিবেদনে সবশেষে বলা হয়েছে জেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই চাইল্ড রিক্রিয়েশন সেন্টার নির্মাণ করেছে, যা অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত।
শরণার্থী ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিশনার এর তত্বাবধানে কুতুপালং ক্যাম্পটি ২০ টি ব্লকে বিভক্ত। প্রতি ব্লকের জন্য নির্ধারিত একজন করে ক্যাম্প ইন-চার্জ রয়েছেন যিনি ওই ব্লকে পরিচালিত সকল বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত। ক্যাম্প ইন-চার্জ দ্বারা পরিচালিত সমন্বয় এবং সেক্টরাল বৈঠকগুলোতে সেভ দ্য চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনাল সক্রিয়ভাবে নিয়মিত অংশগ্রহণ করে আসছে। এই বৈঠকগুলোতে আলোচিত বিষয়বস্তু এবং পরামর্শের ভিত্তিতে কার্যক্রমগুলো (যার মধ্যে কোন নতুন স্থাপনার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নও সম্পৃক্ত) পরিচালিত হয়। সেভ দ্য চিল্ড্রেন ইন্টারন্যাশনালের ধারনা ছিল, শরণার্থী ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিশনের অনুমতি সাপেক্ষে সেন্টারগুলো স্থাপনা করা যাবে।যার কারনে অসাবধানতাবশত জেলা প্রশাসকের অনুমোদন নেয়া হয়নি। পরবর্তীতে সংস্থা এই অনিচ্ছাকৃত ভুলটি অনুধাবন করে, অতি দ্রুত জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে লিখিত অনুমতি প্রার্থনা করে আবেদন করে।
সেভ দ্যা চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনাল কক্সবাজারে রহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ব্যাপক পরিসরে কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে। এ পর্যন্ত, সেভ ৫০টি শিশু বিনোদন কেন্দ্র, ৭টি স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র চালু করার পাশাপাশি খাদ্য সামগ্রী বিতরন,নিরাপদ পানি ও পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।শিশু বিনোদন কেন্দ্রের মাধ্যমে এ পর্যন্ত সংস্থাটি ৩৬৭০০ এরও বেশী শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রের মাধ্যমে ইতিমধ্যে প্রায় ২৫ হাজার রহিঙ্গা জনগোষ্ঠির কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌছে দিয়েছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর সহায়তায় সেভ দ্য চিল্ড্রেন ইন্টারন্যাশনাল ইতিমধ্যে ৩৫০০০০ এর বেশী রহিঙ্গা জনগোষ্ঠির কাছে জরুরী খাদ্য সহায়তা পৌছে দিয়েছে। সরকার এবং অন্যান্য উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সাথে সমন্বয়ের মাধ্যামে সেভ দ্য চিল্ড্রেন ইন্টারন্যাশনাল নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
এরপরও সেভ দ্য চিল্ড্রেন ইন্টারন্যাশনালের বিরুদ্ধে এরকম একটি অসম্পূর্ণ এবং বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন আপনার পত্রিকায় ছাপাতে দেখে আমরা অত্যন্ত মর্মাহত। এতে শুধু পাঠকমহলে বিভ্রান্তি তৈরী হয়নি, সেভের মত একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের সুনাম ও ক্ষুন্ন হয়েছে। তাই এই প্রতিবাদপত্র পাঠাচ্ছি।
আশা করি, আমাদের এই প্রতিবাদকে সংবাদ আকারে প্রকাশ করে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা সেভ দ্যা চিল্ড্রেন ইন্টারন্যাশনাল সম্পর্কে পাঠকদের বিভ্রান্তি নিরসন করবেন।
প্রকাশিত সংবাদ প্রসঙ্গে..কক্সবাংলা’র বক্তব্য
———————-
গত সোমবার ‘রোহিঙ্গা ত্রাণের নামে এনজিওগুলোর বাণিজ্য’ শীর্ষক প্রকাশিত সংবাদের কিছু তথ্য বিভ্রান্তিমূলক অবহিত করে প্রতিবাদ পাঠিয়েছে বেসরকারি সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন।
সংবাদের ডালের দরের ব্যাপারে সংস্থাটির বক্তব্য হচ্ছে : পণ্য সরবরাহকারীদের কাছ থেকে চাল, চিনি, ডাল, তেল, লবণ, সুজি ইত্যাদি প্যাকেজ হিসেবে ক্রয় করা হয়। পৃথক আইটেম ধরে মূল্য বিবেচনা করলে ভুল হওয়া স্বাভাবিক, যা এক্ষেত্রে ঘটেছে।
চাইল্ড রিক্রিয়েশন সেন্টার নির্মাণ প্রসঙ্গে সংস্থাটি অসাবধানতাবশত ভুলের বিষয়টি স্বীকার করে দ্রুত জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অনুমতি প্রার্থনা করে আবেদন করে বলে উল্লেখ করেছে।
এ ব্যাপারে আমাদের বক্তব্য হচ্ছে: কোনো প্রতিষ্ঠানের মানহানির অভিপ্রায়ে কিংবা পাঠকদের বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্য উল্লেখিত সংবাদটি তৈরি করা হয়নি। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন গত ৪ জানুয়ারি এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক বরাবর সেভ দ্য চিলড্রেনসহ ৯টি সংস্থার কার্যাবলীতে অনিয়ম পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছিল। ওই প্রতিবেদনের তথ্যের ভিত্তিতে সংবাদটি তৈরি করা হয়েছে। এখানে রিপোর্টারের কোনো নিজস্ব বক্তব্য ও মনগড়া তথ্য নেই। আর এন জিও ব্যুরোকে পাঠানো কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের প্রতিবেদনটি সংরক্ষিত রয়েছে।
Posted ১:৪৪ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারি ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta