কক্সবাংলা ডটকম(১ জুলাই) :: নব্য জেএমবি তাদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করে হামলার জন্য ঢাকার কূটনৈতিক এলাকা বেছে নিয়েছিল। গুলশানের হলি আর্টিসানে হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে দেশে আতঙ্ক সৃষ্টির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অন্য জঙ্গিদের কাছে তাদের বার্তা পেঁৗছে দেওয়া ছিল এর উদ্দেশ্য।
২০১৬-এর ১ জুলাইয়ের হামলার পর দেশে আরও দুটি হামলা চালাতে সক্ষম হয় তারা। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্রুত পদক্ষেপে একই সময়ে দেশব্যাপী অভিযান, ‘বন্দুকযুদ্ধ’ ও বোমা বহনে নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা তামিম চৌধুরীসহ ৭০ জন নিহত হয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে হলি আর্টিসানের মতো বড় হামলা চালানোর শক্তি-সামর্থ্য কোনোটাই নেই তাদের।
অন্যদিকে, দেশের ইতিহাসে বর্বরোচিত এ হামলায় কোনো জঙ্গির কী ভূমিকা ছিল তার আদ্যোপান্ত উঠে এসেছে তদন্তে। চলতি বছরের মধ্যে চার্জশিট দেবে মামলার তদন্ত সংস্থা।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, হলি আর্টিসানে হামলার মাধ্যমে দেশকে বড় ধরনের ‘ধাক্কা’ দিয়েছিল নব্য জেএমবি। তখন মনে করা হচ্ছিল; ধর্মান্ধতায় ডুবে থাকা উগ্রপন্থিরা ‘জিতে’ যাচ্ছে। তবে জঙ্গিদের মনোবলে বড় ধরনের আঘাত হানতে সময়ক্ষেপণ করেনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গুলশান ও শোলাকিয়ার হামলার এক মাসের মধ্যে গত বছরের ২৬ জুলাই রাজধানীর কল্যাণপুরে অপারেশন স্টর্ম-২৬ চালায় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল
ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। এতে ৯ জঙ্গি নিহত হয়।
মূলত কল্যাণপুর থেকেই জঙ্গিদের ওপর পাল্টা আঘাত শুরু করা হয়। সেই থেকে এই অভিযান দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলমান রয়েছে। হলি আর্টিসানে হামলার পরই মূলত দেশজুড়ে জঙ্গিবিরোধী সচেতনতা তৈরি হয়। সরকারের একাধিক মন্ত্রণালয় ও সংস্থা জঙ্গিবিরোধী সভা-সমাবেশ, সেমিনারের আয়োজন করে। তবে ধীরে ধীরে সরকারের এ উদ্যোগ ঝিমিয়ে পড়েছে।
গত বুধবার সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জঙ্গি দমনে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করে জঙ্গি দমনে সারাবিশ্বে বাংলাদেশ আজ ‘রোল মডেল’। জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ ‘প্রো-অ্যাকটিভ’ পুলিশিংয়ের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘হলি আর্টিসানের হামলার পর সরকারের নেওয়া পদক্ষেপে জঙ্গিদের তৎপরতা নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। অবশ্য পুরোপুরি তাদের শেকড় উপড়ে ফেলা গেছে এটা বলব না। হলি আর্টিসানের ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। সম্পূর্ণ নির্ভুলভাবে চার্জশিট দাখিল করা হবে।’
সিটিটিসির প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘গুলশান হামলার সবকিছু পরিষ্কার হয়েছে। যাদের খোঁজা হচ্ছে তাদের দু’একজনকে পাওয়া গেলে চলতি বছরই চার্জশিট দেওয়া হবে। জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে পুলিশের সাফল্যের কথা অনেক দেশই জানতে চায়।’
গুলশান মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা সিটিটিসির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার এসএম নাজমুল হক বলেন, ‘চার্জশিটে আসামিদের সংখ্যা দেখে হয়ত এ ঘটনার ভয়াবহতা বোঝা যাবে না। এ ঘটনায় যারা মূল ভূমিকা পালন করেছিল তাদের প্রায় সবাই বিভিন্ন সময় পুলিশের অভিযানে নিহত হয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়া রহমান বলেন, হলি আর্টিসানে হামলার পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জঙ্গিবাদবিরোধী অভিযান সফল হলেও দীর্ঘমেয়াদে এর সুফল পেতে হলে সরকারের সকল সংস্থার সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করা জরুরি। এ জায়গাটায় এখনও অনেক ঘাটতি রয়েছে। এক সময় মাদ্রাসা ছাত্ররা জঙ্গিবাদে ঝুঁকত বেশি। হলি আর্টিসানের ঘটনায় দেখা গেল মাদ্রাসা ছাত্রদের পাশাপাশি ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করা ধনাঢ্য পরিবারের সন্তানরাও জঙ্গিবাদে ঝুঁকছে। কেন কী কারণে এ পরিবর্তন এ নিয়ে গবেষণা প্রয়োজন।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশিদ বলেন, এখন জঙ্গিবাদকে ভূ-রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ধর্মান্ধতার দীক্ষা দিতে কিছু প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল, ব্যবসায়ী ও আন্তর্জাতিক অনেক গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে। যে সব দেশ নানাভাবে জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আসছিল তারা নিজেরাই এখন চাপে রয়েছে। বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় হয়তো কিছু দিন দেশে বড় জঙ্গি হামলার আশঙ্কা কমেছে। তবে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জঙ্গিবাদ মোকাবেলার সমন্বিত প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে হবে।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, গত এক বছরে গুলশান হামলার তদন্তে এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেক কিছু উঠে এসেছে। শূরা বোর্ডে ভোটাভুটি ছাড়াই নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা তামিম চৌধুরী একক সিদ্ধান্তে হলি আর্টিসানে হামলার পরিকল্পনা করে। এরপর সদস্য সংগ্রহ, প্রশিক্ষণ, অস্ত্র-বোমা জোগাড় করে হামলার জন্য পাঁচ তরুণকে আত্মঘাতী হতে প্রস্তুত করা হয়। হলি আর্টিসানে হামলার পরিকল্পনা, বোমা তৈরি, সরাসরি অংশগ্রহণ, প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন পর্যায়ে জড়িত ছিল ২১ জন।
সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার করা হয় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিম ও ব্যবসায়ীপুত্র তাহমিদ হাসিব খানকে। এরই মধ্যে তদন্তে তাহমিদ সন্দেহমুক্ত হন। তিনি জামিনে বেরিয়ে গেছেন। তবে হাসনাত করিম এখনও সন্দেহভাজন হিসেবে কারাগারে থাকলেও গুলশান হামলা পরিকল্পনায় তিনি সম্পৃক্ত এমন সুনির্দিষ্ট তথ্য পুলিশের হাতে নেই। হাসনাতের তিন সন্তান হলি আর্টিসানের পাশেই একটি ক্লিনিকে জন্মগ্রহণ করে। স্মৃতিজড়িত হাসপাতালের পাশের হলি আর্টিসানে প্রায়ই পরিবারসহ খেতে যেতেন হাসনাত।
সিটিটিসির এডিসি আবদুল মান্নান জানান, গুলশান হামলার পরিকল্পনায় যুক্ত আরও আটজনকে খোঁজা হচ্ছে। তাদের মধ্যে রয়েছে নব্য জেএমবির সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ ওরফে নসরুল্লাহ, বাশারুজ্জামান, রাশেদুল ইসলাম ওরফে র্যাশ, হাদিসুল ইসলাম সাগর, মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান, মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও জুনায়েদ খান। নব্য জেএমবির প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ নেতা নিহত হওয়ায় মামলার চার্জশিটে পলাতক এই আটজনকে আসামি করা হতে পারে। পলাতক ৮ জনের মধ্যে হাতকাটা মাহফুজ ও রাশেদুলকে গ্রেফতারের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। গুলশান হামলায় তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। তাদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
জঙ্গি কর্মকাণ্ডের ওপর প্রায় ১০ বছর ধরে নজর রাখছেন এমন একজন কর্মকর্তা জানান, তামিম চৌধুরী ২০১৩ সালে কানাডা থেকে দেশে ফেরার পর নব্য জেএমবির যাত্রা শুরু। তামিম যে ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ নিয়ে এসেছিল, একই অ্যাসাইমেন্টে আসে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের নাগরিক সামিয়ুন রহমান ওরফে ইবনে হামদান। কমলাপুর থেকে পুলিশ তাকে গ্রেফতারের পর সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
সিটিটিসির এডিসি নাজমুল হক জানান, ২০১৩ সালের পর থেকে লেখক, ব্লগার, যাজক, পুরোহিত, পীরের অনুসারী, সমকামীদের অধিকার কর্মী, বাহাই সম্প্রদায়ের নেতা, শিয়া ও আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকদের টার্গেট করে হত্যা শুরু করে এবিটি ও পুরনো জেএমবি। ছোট ছোট টার্গেট কিলিংয়ের পর বড় ধরনের হামলা চালিয়ে তামিম নব্য জেএমবির নেতা হিসেবে নতুন বার্তা দিতে চেয়েছিল। যার ফলে গুলশানের হলি আর্টিসানে হামলা।
কীভাবে উচ্চশিক্ষিত তিন তরুণকে জঙ্গিরা টার্গেট করেছিল এমন প্রশ্নে ওই কর্মকর্তা আরও জানান, আগে থেকেই রোহান, মুবাশীর ও নিবরাস তাদের ফেসবুক আইডিতে উগ্রবাদী কিছু লেখা পোস্ট করেছিল। জঙ্গিদের একটি শক্ত অনলাইন মনিটরিং টিম রয়েছে। এই টিমের মাধ্যমে উগ্রবাদী লেখা পোস্ট করে তাদের জালে ফেলতে টোপ দেয় জঙ্গিরা। এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই ঢাকা থেকে তিন শিক্ষিত তরুণকে জঙ্গিবাদে যুক্ত করা হয়েছে। থ্রিমা অ্যাপসে ‘ওস্তাদ’ নামে একটি আইডি থেকে তাদের চূড়ান্ত মগজধোলাই করে তামিম। গুলশান হামলায় জড়িত পাঁচ তরুণকে প্রথমে কল্যাণপুরে ‘ইনডোর ট্রেনিং’ দেওয়া হয়। তাদের রিক্রুট করে নব্য জেএমবির নেতা তারেক, রাজীব গান্ধী ও রিপন।
একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, গুলশানে হামলার জন্য অস্ত্র সংগ্রহে সম্পৃক্ত ছিল সাগর, বড় মিজান ও ছোট মিজান। বোমা তৈরিতে যুক্ত ছিল সোহেল মাহফুজ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে অস্ত্র এনেছিল ছোট মিজান। এরপর সেই অস্ত্র হাতবদল হয়ে যায় রাশেদের কাছে। মারজানের কাছে সেই অস্ত্র পেঁৗছে দেয় রাশেদ। এ ছাড়া যশোর থেকে আরেকটি অস্ত্রের চালান এনে মারজানের কাছে দেয় সাগর। হলি আর্টিসানে হামলার খরচের জন্য টাকা দুবাই ও সৌদি আরব থেকে হুন্ডির মাধ্যমে এসেছিল। এ অর্থের বিদেশি কানেকশনে কারা জড়িত তা এখনও বের করতে পারেনি মামলার তদন্ত সংস্থা। এ ছাড়া অস্ত্র সরবরাহের বিদেশি সূত্রও বের করা যায়নি। যদিও তদন্তে বেরিয়ে আসে অস্ত্র এসেছিল পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, জঙ্গিদের ব্যবহৃত অস্ত্র ও বিস্ফোরকের জোগান বন্ধ করা পুলিশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, টার্গেট করে বড় ধরনের হামলা চালাতে প্রথমে বনানী কফি শপ, বারিধারা পার্ক, যমুনা ফিউচার পার্ক, গুলশান ক্লাব ও লেডিস ক্লাবের মধ্যে যে কোনো একটি নির্বাচন করার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের। এসব স্পট রেকিও করেছিল নব্য জেএমবির সদস্যরা। একসঙ্গে অনেক বিদেশি নাগরিক পাওয়া এবং দুর্বল নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে শেষ পর্যন্ত হলি আর্টিসানকে বেছে নেওয়া হয়। হামলার আগের দিন সবাইকে অভিযানের সময় পরিধেয় পোশাক, অস্ত্র ও গ্রেনেড সম্পর্কে বুঝিয়ে দেয় বাশারুজ্জামান। ঘটনার দিন সর্বশেষ ৯ ধরনের নির্দেশনা দিয়ে পাঁচ তরুণকে হলি আর্টিসানে রওনা করিয়ে দেয় তামিম। নির্দেশনাগুলোর মধ্যে ছিল_ এক. মুশরিকদের ওপর দয়া করা যাবে না। দুই. কেউ বন্দি হলে নিজেকে শেষ করে দিতে হবে। তিন. একজনের গুলি শেষ হলে আরেকজনকে ব্যাকআপ দিতে হবে। চার. তাড়াহুড়ো নয়; অপারেশন গুরুত্ব সহকারে করতে হবে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পাঁচ জঙ্গি হলি আর্টিসানের ভেতরে ঢুকে প্রথমে গুলি করে আতঙ্ক তৈরি করে। আতঙ্কিত হয়ে অনেকে টেবিল-চেয়ারের নিচে শুয়ে পড়েন। এরপরই বিদেশি নাগরিকদের আলাদা করে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে জঙ্গিরা। হলি আর্টিসানে প্রবেশের পর প্রথম ৪৫ মিনিটের মধ্যে দু’একজন বাদে অধিকাংশদের হত্যা করা হয়। দু’জন বিদেশি নাগরিক ভয়ে ফ্রিজের মধ্যে লুকান। পরে তাদের খুঁজে বের করে একই কায়দায় খুন করা হয়েছে। ১৭ বিদেশি ও তিন বাংলাদেশি নাগরিককে ঠাণ্ডা মাথায় গুলি, জবাই ও ছুরিকাঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে জঙ্গিরা। নৃংশস ছবিগুলো প্রথমে মারজান ও তামিমের কাছে পাঠায় জঙ্গিরা। হলি আর্টিসানে জিম্মিদের মোবাইল ব্যবহার করে এসব ছবি বাইরে পাঠানো হয়েছিল। পাঁচ তরুণের কেউ হলি আর্টিসানের ভেতরে মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করেনি। দেশের ইতিহাসে বর্বর এ হামলা প্রতিরোধ করতে গিয়ে পুলিশের এএসপি রবিউল করিম ও বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন আহম্মেদ নিহত হন। আহত হন পুলিশের ৫৯ সদস্য।
সংশ্লিষ্টরা জানান, শেওড়াপাড়ার একটি বাসায় বসে ঘটনার সময় সব নির্দেশনা দিচ্ছিল তামিম ও মারজান। পাঁচ তরুণের প্রতি তামিমের সর্বশেষ নির্দেশনা ছিল_ ‘সব কোপ’। এই নির্দেশনা পেয়ে জঙ্গিরা আরও নৃশংসতা চালায়। গুলিতে যারা আগেই নিহত হয়েছিলেন তাদের শরীরের ওপর বর্বরোচিত ছুরি চালানো হয়। এমন নৃশংসতার কারণ জানতে চাইলে সিটিটিসির এক কর্মকর্তা জানান, নব্য জেএমবি বিশ্বাস করে কুপিয়ে হত্যা করলে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়।
শুরু হয় ২০১৬ সালের ১ জুলাই হলি আর্টিসান থেকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পরিচালিত হয় ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’। তার পর গত এক বছরে দেশের বিভিন্ন এলাকাতেই এভাবে অন্তত ২৪টি আলোচিত জঙ্গিবিরোধী অপারেশন চালানো হয়েছে। যার সর্বশেষটি ছিল চলতি বছরের ১১ জুন রাজশাহীর তানোরে পরিচালিত ‘অপারেশন রি- বার্থ’। এসব অভিযানে নিহত হয়েছে ৫৬ জন। অভিযান ছাড়াও পুলিশ-র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা গেছে আরও অন্তত ১১ জঙ্গি। এ ছাড়া হামলার উদ্দেশ্যে বোমা বহন করতে গিয়ে বিস্ফোরণে মৃত্যু ঘটেছে আরও ৩ উগ্রপন্থির। সর্বমোট ৭০ জঙ্গি নিহত হয়েছে গত এক বছরে। তাদের মধ্যে ৮ জন নারী জঙ্গি। এত সংখ্যক উগ্রপন্থি এক বছরে নিহত হওয়ার ঘটনা দেশের ইতিহাসে এই প্রথম। এই সময়ে জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারান পুলিশ-র্যাব ও ফায়ার সার্ভিসের ৮ সদস্য। আহত হয়েছেন ৫৯ জন।
নিহতদের তালিকায় রয়েছে নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা তামিম চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মারজান, সারোয়ার জাহান ওরফে আবদুর রহমান, মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম, মাইনুল ইসলাম মুসা প্রমুখ। জঙ্গি উগ্রপন্থিদের মনোবিকলন এতই ছিল তীব্র যে, তাদের সঙ্গে থাকা পাঁচ শিশুকেও বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেদের সঙ্গে উড়িয়ে দেয়।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, গত এক বছরে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) অপারেশনে ৪৬ জঙ্গি ও তাদের আস্তানায় থাকা পাঁচ শিশু মারা গেছে। র্যাবের অভিযানে নিহত হয়েছে ৮ জন। র্যাব গ্রেফতার করে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের ১৫০ সদস্যকে। একের পর এক অভিযানে জঙ্গিদের সংগঠন নব্য জেএমবির সাংগঠনিক শক্তি অনেকটাই কাবু হয়ে পড়েছে। তবে এতে আত্মতুষ্টির কিছু নেই। কারণ সতর্ক না থাকলে আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারে নব্য জেএমবিসহ অন্যান্য যে কোনো উগ্রপন্থি সংগঠন। নব্য জেএমবিকে নিয়ে আতঙ্ক তাই পুরোপুরি কাটেনি।
প্রাণ ঝরেছে অভিযানকারী ও সাধারণ মানুষেরও :
Posted ২:১২ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০১ জুলাই ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta