কক্সবাংলা রিপোর্ট(১৮ জানুয়ারী) :: বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু হচ্ছে আগামী সপ্তাহ থেকে। এ নিয়ে চলতি সপ্তাহেই নেপিদোয় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের উচ্চপর্যায়ের এক প্রতিনিধি দলের মধ্যে আলোচনা ও এর পরিপ্রেক্ষিতে একটি চুক্তি সই হয়েছে।
আলোচনায় বাংলাদেশ পক্ষে অংশ নেয়া প্রতিনিধি দলের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল, প্রতিদিন ৩০০ জন করে সপ্তাহে দেড় হাজার করে রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়া হবে।
কিন্তু মিয়ানমারের শ্রম, অভিবাসন ও জনসংখ্যাবিষয়ক মন্ত্রী উ থেইন সোয়ের বরাত দিয়ে সে দেশের একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, দিনে প্রায় ১৫০ জন করে উদ্বাস্তুকে গ্রহণ করবে মিয়ানমার। সে হিসেবে সপ্তাহে মাত্র ৭৫০ জন করে উদ্বাস্তুকে গ্রহণ করতে যাচ্ছে মিয়ানমার।
মিয়ানমার টাইমসকে বুধবার দেয়া এক সাক্ষাৎকারে উ থেইন সোয়ে বলেন, ‘আমরা বলেছি, প্রতিদিন ১৫০ জন করে সপ্তাহে পাঁচদিন তাদের (উদ্বাস্তুদের) গ্রহণ করা হবে।’ সে হিসাবে প্রতি সপ্তাহে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসিত রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুর গড় সংখ্যা দাঁড়ায় ৭৫০ জন করে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, দুই বছরের মধ্যে প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শেষ করার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে ঢাকা ও নেপিদো। মিয়ানমারের মন্ত্রীর বক্তব্য সঠিক হলে এ দুই বছরের মধ্যে ১০৪ সপ্তাহে উদ্বাস্তু প্রত্যাবাসন সম্ভব হবে ৭৮ হাজারের কিছু বেশি।
অন্যদিকে গত বছরের আগস্টে মিয়ানমারের উত্তর রাখাইন প্রদেশে সংঘাত শুরু হওয়ার পর সেখান থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে প্রায় ৬ লাখ ৫৫ হাজার রোহিঙ্গা।
এ সংখ্যায় কোনো হেরফের না হলে দৈনিক ১৫০ জন হিসেবে সপ্তাহে পাঁচদিন উদ্বাস্তু প্রত্যাবাসন কার্যক্রম চালালে, এদের ফিরিয়ে নিতে সময় লাগবে সাড়ে ১৬ বছরেরও বেশি। (বছরে ৫২ সপ্তাহ হিসাবে প্রত্যাবাসন কার্যক্রম চালু ও বন্ধ থাকবে যথাক্রমে ২৬১ ও ১০৪ দিন। ১৫০ জন করে ২৬১ দিনে প্রত্যাবাসন করা যাবে ৩৯ হাজার ১৫০ জন)।
উ থেইন সোয়ে জানান, রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের মধ্যে যাদের কোনো অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নেই, তাদের একটি তালিকা তার দপ্তর এরই মধ্যে ঢাকার হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘উদ্বাস্তুদের মধ্যে যারা মিয়ানমারে বসবাস করে আসছিলেন, তাদের একটি পুরনো তালিকা মন্ত্রণালয়ের (মিয়ানমারের শ্রম, অভিবাসন ও জনসংখ্যাবিষয়ক মন্ত্রণালয়) কাছে আছে। এরা যদি নিরপরাধ হয় এবং ফিরে আসতে চায়, সেক্ষেত্রে তাদের গ্রহণের ক্ষেত্রেও একটি তালিকা দেয়া হবে। বিশেষ করে হিন্দু জনগোষ্ঠীর সদস্যরা ফিরে আসতে চাইছে। আমরা তাদের একটি তালিকা পাঠিয়েছি এবং একটি তালিকা পেয়েছি।’
তিনি জানান, হিন্দু ধর্মাবলম্বী উদ্বাস্তুদের মধ্যে ফিরে আসার তীব্র ইচ্ছা রয়েছে। কিন্তু যারা প্রকৃতপক্ষেই রাখাইনে বসবাস করত, তাদের অগ্রাধিকার দিয়ে গ্রহণকৃতদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
মিয়ানমারে প্রত্যাবাসিত উদ্বাস্তুদের আবাসনের জন্য কয়েকটি গ্রাম ও শিবির প্রস্তুত করে রেখেছে সে দেশের কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে মংডু শহরের কাছাকাছি তং পিও লেতওয়ে ও নগা খু ইয়া গ্রাম উল্লেখযোগ্য। প্রথমে গ্রাম দুটিতে রাখার পর উদ্বাস্তুদের হ্লা পো খং অস্থায়ী শিবিরে স্থানান্তরিত করা হবে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক উ কো কো নাইং বলেন, ‘অস্থায়ী শিবিরে তাদের (উদ্বাস্তুদের) বেশিদিন রাখা হবে না। যদি তাদের ঘরবাড়ি পুড়ে না গিয়ে থাকে, তাহলে তারা তাদের গ্রামে ফিরে যেতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে তাদের নতুন বাসস্থান একটু ভিন্ন ধরনের হতে পারে। কারণ তাদের মাছ ধরার ও চাষবাসের স্থানের মতো জীবিকাস্থলের কাছাকাছি নতুন গ্রাম ও শহর গড়ে তোলা হচ্ছে।
Posted ৩:৩৯ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারি ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta