কক্সবংলা ডটকম(২ মে) :: আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস ‘সত্যি’ করে বৃহস্পতিবার বজ্রবৃষ্টিতে স্নাত হয়েছে দেশের বেশ কিছু এলাকা। মাসাধিক কাল ধরে চলতে থাকা তাপপ্রবাহের মধ্যে এ বৃষ্টি কিছুটা হলেও স্বস্তি এনেছে জনমনে।
যদিও এ স্বস্তির মাঝে অস্বস্তির কাঁটা ফুটিয়েছে বজ্রঘাতে ছয়জনের মৃত্যুর খবর। তবে সারাদেশের তাপপ্রবাহের ওপর এ বৃষ্টিপাতের বেশ প্রভাব পড়েছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা, যশোর ও চুয়াডাঙ্গাসহ অতি উষ্ণ এলাকার তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রের্কড করা হয়েছে চুয়াডঙ্গায় ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশবাসী আরো স্বস্তির অপেক্ষায় থাকলেও আজ শুক্রবার ও কাল শনিবার বৃষ্টিপাত কমে যাবে। এরপরই ৫ মে আঘাত হানবে কালবৈশাখী।
ঢাকাসহ প্রায় গোটা দেশের উপর দিয়ে এ ঝড় বয়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, তিন থেকে পাঁচ দিন হালকা এবং দুই থেকে তিন দিন মাঝারি বা বড় ধরনের কালবৈশাখী হতে পারে। সেই সঙ্গে এ মাসের দ্বিতীয়ার্ধে বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টিরও আশঙ্কা করা হয়েছে।
এ মাসে বৃষ্টির প্রবণতা বাড়বে। হয়তো স্বস্তিও ফিরে আসবে। তারপরও স্বাভাবিক উষ্ণতার মে মাসে তাপপ্রবাহ থেকে মুক্তি মিলছে না। একটানা না হলেও লম্বা সময় ধরে বয়ে যেতে পারে তাপপ্রবাহ। এদিকে ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
গত এপ্রিল ছিল তাপপ্রবাহ ও তাপমাত্রার রেকর্ড সৃষ্টিকারী উষ্ণতম মাস। ৩১ মার্চ এ তাপপ্রবাহ শুরু হয় দেশজুড়ে। এপ্রিলের শেষ দিন চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ ও ১৯৭২ সালের পর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল যশোরে ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্বাভাবিকের চেয়ে এপ্রিলে কম বৃষ্টি হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, সারাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৮১ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। এছাড়া এপ্রিলে স্বাভাবিকের চেয়ে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। আর সারাদেশে গড় তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। অস্বাভাবিক তীব্র তাপে জনজীবন পুড়েছে। পুড়েছে প্রাণিকুল, জলজউদ্ভিদ, পরিবেশ, জনপদ ও ফসলের মাঠ। এর রেশ এখনো শেষ হয়নি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান জানিয়েছেন, আগামী কয়েক দিন সামগ্রিকভাবে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে।
আর আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, সামনের দিনগুলোতে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কিছুটা বাড়বে। পাশাপাশি তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকলেও তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা আছে। তিনি বলেন, আজ (বৃহস্পতিবার) বরগুনা, সুন্দরবন, খুলনা, হাতিয়া, সন্দীপ, লক্ষীপুর, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টি হয়েছে।
এতে কিছুটা হলে তাপমাত্রা প্রশমিত হয়েছে। তবে ৩ ও ৪ তারিখে বৃষ্টিপাত কম হবে। তাপমাত্রা আর তেমন বাড়বে না। ৫ তারিখে আবার বৃষ্টি বাড়বে, মানে কালবৈশাখী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ঝড় প্রায় সারাদেশেই বয়ে যাবে।
এদিকে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস দিতে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি বৃহস্পতিবার নিয়মিত বৈঠক করেছে। ঢাকার ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অধিদপ্তরের পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান মো. আজিজুর রহমান সভাপতিত্ব করেন।
দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস প্রতিবেদনে জানানো হয়, চলতি মাসে সামগ্রিকভাবে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে।
এ মাসে দেশে তিন থেকে পাঁচ দিন বজ্র ও শিলাবৃষ্টিসহ হালকা ধরনের কালবৈশাখী ঝড় এবং দুই থেকে তিন দিন বজ্র ও শিলাবৃষ্টিসহ মাঝারি বা তীব্র কালবৈশাখী ঝড় হতে পারে। এতে আরো বলা হয়, দেশের কোথাও কোথাও এক থেকে তিনটি মৃদু (৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বা মাঝারি এবং এক থেকে দুইটি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এ মাসে দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি এবং রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকতে পারে। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুইটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে।
এর মধ্যে একটি মাসের দ্বিতীয়ার্ধে নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। মে মাসে দেশের প্রধান নদনদীতে স্বাভাবিক প্রবাহ বিরাজমান থাকতে পারে জানিয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রতিবেদনে জানানো হয়, তবে উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদীর পানি সময় বিশেষে দ্রুত বাড়তে পারে এবং কিছু স্থানে বিপদসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হতে পারে।
তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা জারি :
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক স্বাক্ষরিত গতকাল বিকালে জারি করা এক তাপপ্রবাহের সতর্কবর্তায় বলা হয়েছে, চলমান তাপপ্রবাহ ঢাকা বিভাগের পশ্চিমাঞ্চলসহ খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে আজ (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা : গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডঙ্গায় ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এছাড়া যশোর, রাজশাহী ও ঈশ্বরদীতে ৪১, কুমারখালীতে ৪০ দশমিক ৫, খুলনায় ৩৮, ঢাকায় ৩৮ দশমিক ৩, রংপুরে ৩৭ দশমিক ৭, বরিশাল ও ময়মনসিংহে ৩৭, চট্টগ্রামে ৩৩ দশমিক ৮, সিলেটে ২৯ টাঙ্গাইল ও বগুড়ায় ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে তাপমাত্রা ছিল।
বৃষ্টিপাত :
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে কুতুবদিয়ায়। সেখানে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ২৭ মিলিমিটার। এরপর বেশি বৃষ্টি হয়েছে রাঙামাটিতে ২২ মিলিমিটার। এছাড়া কক্সবাজারে ১১, চট্টগ্রাম, স›দ্বীপ, ফেনীতে ৭, সীতাকুন্ডে ৮, মাইজদীকোর্টে ৪, সিলেটে ১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আর বরিশাল, কুমিল্লা, রংপুর, দিনাজপুর ও নেত্রকোণায় সামান্য বৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
স্বস্তির বৃষ্টি :
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই রাজধানী ঢাকার আকাশ ছিল মেঘে ঢাকা। ঘড়ির কাঁটায় যখন রাত ৯টা তখন রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় শুরু হয় বৃষ্টি। তাবদাহের মধ্যে দারুণ স্বস্তি নিয়ে এসেছে মধ্য বৈশাখের এ হালকা বৃষ্টি। পুরান ঢাকার সদরঘাট, ইসলামপুর, সূত্রাপুর, রায় সাহেব বাজার ও রায়েরবাগসহ একাধিক এলাকায় বৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। বৃষ্টি না হলেও অন্যান্য এলাকায় আকাশ ছিল মেঘলা। বৃষ্টি হওয়ায় গরমের নাভিশ্বাস থেকে একটু হলেও স্বস্তি এসেছে জনজীবনে। বৃষ্টি হওয়ায় অনেকেই স্বস্তির কথা জানিয়েছেন ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায়।
Posted ২:১৮ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta