কক্সবাংলা ডটকম(১০ সেপ্টেম্বর) :: ‘মুখোশ পরে ছেলেটারে ঝুলায়ে পিটাচ্ছে। এসব দেখে টাকা দিলাম কিন্তু ছেলেটারে ছাড়ে না, তারা আবার টাকা চায়।’ লিবিয়ায় অপহৃত আইয়ূব আলীকে নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়েছেন অপহরণকারিরা। সেই ভিডিও দেখে তার বাবা তসলিম প্রামাণিক কান্না জড়িত কণ্ঠে এসব কথা বলেন।
পরিবারের হাল ধরতে ২০১২ সালে নওগাঁর বাসীন্দা আইয়ূব আলী (২৫) পাড়ি জমান লিবিয়ায়। এর মাঝেই চলতি বছরের জুলাইয়ে স্বদেশী কোনো ভাই প্রস্তাব দিলেন ইতালি যাওয়ার। বিভিন্ন প্রলোভণ দেখিয়ে ইতালি যেতে রাজি করে নিয়ে গেলেন লিবিয়ার অজ্ঞাত স্থানে। তখনও আইয়ূব বুঝতে পারেননি তিনি আসলে অপহৃত হয়েছেন।
এরপর চলতে থাকে অমানবিক নির্যাতন। আর সেই নির্যাতনের ছবি-ভিডিও দেশে পরিবারের কাছে পাঠিয়ে চলতে থাকে মুক্তিপণ আদায়। কয়েকদফায় ৫ লাখ টাকা পাঠানোর পরও মুক্তি মেলেনি আইয়ূবের। বরং নির্যাতন চলতেই থাকে আর মুক্তিপণ দাবি করতে থাকে সেই অপহরণকারী চক্র।
আইয়ুবের বাবা পঞ্চাশোর্ধ্ব বৃদ্ধ তসলিম প্রামাণিক চোখের পানি মুছতে মুছতে বলছিলেন, সর্বশেষ ২০ হাজার টাকা ভিক্ষা করে পাঠিয়েছেন তিনি। এখন আর টাকা দেওয়ার মতো কোনো সামর্থ নাই তার। নির্যাতনের ছবি দেখে ছেলের মা স্ট্রোক করে হাসপাতালে ভর্তি। গণমাধ্যমের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমার ছেলেসহ সবাইরে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করেন।
এর পর সাংবাদিকদের সামনেই ছেলেকে ফোন করেন তসলিম প্রামাণিক। একই ফোনে অপহরণকারীদের সঙ্গে কথা বলে ছেলেকে মারধর না করতে অনুরোধ জানান তিনি। এ সময় ফোনের অপর প্রান্তে অপহরণকারী আরো ৫ লাখ টাকা দাবি করলে তাৎক্ষণিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তসলিম প্রামাণিক।
আইয়ূব আলী ছাড়াও লিবিয়া প্রবাসী এমন আরো প্রায় ১০০-১২০ জন বাংলাদেশিকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করে চলছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অপহরণ চক্রটি।
ওই চক্রের সাথে জড়িত বাংলাদেশে অবস্থানরত তিন বিকাশ এজেন্টসহ ছয় সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ঢাকা মেট্রোর একটি দল।
আটককৃতরা হলেন, কামাল উদ্দিন (৪৫), নাজনীন বেগম (৩৫), আবু কাশেম (৩৫), বেবী আক্তার (৩৫), মামুন মিয়া (৪২) এবং নুরুল হক (৪৫)।
আজ রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পিবিআই ঢাকা মেট্রোর কার্যালয়ে আটকদের বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিশেষ পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ বলেন, নওগাঁ এলাকার বাসিন্দা তছলিম প্রামাণিক জানান তার ছেলে আইয়ূবকে গত ২১ জুলাই লিবিয়া থেকে অপহরণ করা হয়।
একই এলাকার বাসিন্দা রাব্বানী জানান, তার ভাই রুবেলকেও আইয়ূবের সঙ্গে অপহরণ করা হয়। তিনিও কয়েকদফায় ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন।
আবুল কালাম আজাদ জানান, এমন অভিযোগের ভিত্তিতে টাকা পাঠানো বিকাশ নাম্বারের সূত্র ধরে ভৈরব ও নরসিংদী এলাকা থেকে ছয়জনকে আটক করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বিদেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ২০-২৫ জন এ অপহরণ চক্রে জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি। ওই চক্রটি ফোন করে দেশে অবস্থানরত নিজেদের পরিবারের বিকাশ নাম্বারে টাকা পাঠাতে বলা হয়। তারপর ভুক্তভোগীর পাঠানো টাকার ভাগ ওই চক্রের অন্যান্য সদস্যদের পরিবারের কাছে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়।
পুলিশের এই সুপার বলেন, বড় ধরনের লেনদেনে কয়েকজন বিকাশের এজেন্টের সম্পৃক্ততা আমরা পেয়েছি।
চক্রটি তিন থেকে চার বছর ধরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের কাজ করে আসছে এমন ধারনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, তবে এ পর্যন্ত মুক্তিপণ পেয়ে কাউকে ছেড়ে দেওয়ার তথ্য আমরা পাইনি। পরিবার যতো টাকাই দিচ্ছে, অপহরণকারীদের চাহিদা আরো বাড়ছে। সেই সঙ্গে চলছে নির্যাতনও।
অপহৃতদের উদ্ধারে কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা সেখানকার দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। সেখানকার বাঙালি কমিউনিটিকে বলেছি স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করতে।
Posted ৭:০২ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta