কক্সবাংলা ডটকম(১৯ ডিসেম্বর) :: কর ফাঁকি প্রতিরোধ ও অর্থ পাচার ঠেকাতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লেনদেনকারী ৯২১টি কোম্পানি চিহ্নিত করে তাদের তথ?-উপাত্ত সংগ্রহের শুরুতেই বড় ধরনের হোঁচট খেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ‘ট্রান্সফার প্রাইসিং সেল’।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ৯২১টি কোম্পানির মধ্যে ৭৭১টি বহুজাতিক কোম্পানি আয়কর আইন লঙ্ঘন করে তাদের রিটার্নে আন্তর্জাতিক লেনদেনের তথ্য গোপন রাখছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় এ চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রায় ৯২১টি বহুজাতিক সংস্থা (এমএনসি) বিভিন্ন খাতে তাদের শাখা, লিয়াজোঁ ও প্রতিনিধি অফিস নিয়ে বাংলাদেশে ব্যবসা করছে। এর মধ্যে কেবল ১৫০টি কোম্পানি নিয়মিত তাদের আন্তর্জাতিক লেনদেনের আসল তথ্য নিয়ে আয়কর বিবরণী জমা দেয়, বাকিরা তা দেয় না। এর মাধ্যমে তারা কর ফাঁকি নিয়ে অর্থ পাচার করছে বলে মনে করে এনবিআর।
এ বিষয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ বলেন, বেশিরভাগ বহুজাতিক কোম্পানি মূলত আমদানিতে বাড়তি মূল্য দেখানোর মাধ্যমে কর ফাঁকি এবং অর্থ পাচার করে। ২ ডলারের পণ্য আমদানিতে হয়তো ১০ ডলার দেখায়। এর বাইরে আরও অনেক উপায়ে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর একটি অংশ কর ফাঁকি দেয়। ফলে বড় অঙ্কের কর ফাঁকি দেওয়া সম্ভব।
এর আগে এনবিআরের ট্রান্সফার প্রাইসিং সেল (টিপিসি) ৯২১টি বহুজাতিক সংস্থার কাছ থেকে আন্তর্জাতিক লেনদেনগুলো
যাচাই-বাছাইয়ের জন্য তাদের ব্যবসার প্রোফাইল এবং কার্যক্রমের বিশদ তথ্য চেয়েছিল।
এছাড়া ব্যবসার ধরন, বাংলাদেশে পরিচালনার সময়কাল, কর্মীদের পদ, শীর্ষ কর্মকর্তার নাম, তাদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য সরবরাহ করতে বলা হয় এবং কীভাবে তারা বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় মেটাচ্ছে তাও দিতে বলা হয়। কোম্পানিগুলো গত ছয় বছরে আয়কর রিটার্ন এবং লেনদেনের যাবতীয় তথ্য ১৫ জানুয়ারির মধ্যে এনবিআরকে সরবরাহ করে।
এ বিষয়ে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, চেয়ারম?্যানের নির্দেশ পেয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে তথ?্য সংগ্রহ করার কাজ শুরু ট্রান্সফার প্রাইসিং সেল’ হয়েছে। ৯২১টি প্রতিষ্ঠানকে ধাপে ধাপে নিরিক্ষার আওতায় আনা হয়েছে।
এর আগে এনবিআরের ট্রান্সফার প্রাইসিং সেলকে পুনর্গঠন করা হয়। সেন্ট্রাল ইন্টিলিজেন্স সেলের (সিআইসি) যুগ্ম মহাপরিচালক মো. শাব্বির আহমদকে ট্রান্সফার প্রাইসিং সেলের সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, বিদেশি কোম্পানিগুলোর শাখা, কোম্পানির মুনাফা, কোনো সম্পদ কিংবা কোনো পণ্যের মূল্য মূল কোম্পানিতে পাঠায়। এছাড়া পণ্য বা সেবা আমদানির মূল্যও মূল কোম্পানি বা অন্য কোনো কোম্পানিকে পাঠায়। যা ট্রান্সফার প্রাইসিং হিসেবে পরিচিত।
তবে পণ্যের দর কম বা বেশি দেখিয়ে কিংবা মুনাফার অর্থ প্রেরণে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার মাধ্যমে কর ফাঁকির পাশাপাশি অর্থ পাচারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
অভিযোগ রয়েছে, এর ফলে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে থাকে। সাধারণত যেসব দেশে কর হার বেশি সে দেশের প্রতিষ্ঠান থেকে নানা কৌশলে কর হার কম এমন দেশের সহযোগী প্রতিষ্ঠানে অর্থ স্থানান্তর করা হয়। ফলে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের আয় বাড়ে কিন্তু কর কম দিতে হয়। যা এক ধরনের অর্থপাচার। এতে প্রাপ্য রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অপেক্ষাকৃত বেশি কর রয়েছে এমন দেশগুলো।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাপী ট্রান্সফার প্রাইসিংয়ের মাধ্যমে কর ফাঁকি ঠেকাতে বেশ আগে থেকেই কার্যক্রম শুরু করা হলেও বাংলাদেশ তাতে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। ভারতে ২০০১ সালে এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার পর কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৬ সালে। শ্রীলঙ্কায় শুয় হয়েছে ২০০৮ সালে। কিন্তু বাংলাদেশে ২০১২ সালে এ সংক্রান্ত আইন হলেও কার্যক্রম শুরু হতেই দীর্ঘ সময় পার করেছে।
প্রসঙ্গত, বহুজাতিক কোম্পানিসহ আন্তর্জাতিক লেনদেনে স্বচ্ছতা আনার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত কর আদায়ের লক্ষ্যে সরকার ২০১২ সালে ট্রান্সফার প্রাইসিং আইন প্রণয়ন করে। তবে এটি কার্যক্রম শুরু করে ২০১৪ সালে। এ লক্ষ্যে ট্রান্সফার প্রাইসিং সেল গঠন করা হয়। কিন্তু এই প্রথম বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর লেনদেন সংক্রান্ত নথি বিশেষায়িত নিরীক্ষা কার্যক্রমের আওতায় আনা হয়েছে।
এর মূল কারণ হিসেবে বরাবরই এনবিআর লোকবলে ঘাটতি ও কৌশলগত কারণকে দায়ী করে আসছে।
অভিযোগ রয়েছে, অনেক এমএনসি তাদের সহযোগী কোম্পানির মাধ্যমে পণ্য ও পরিষেবার লেনদেনের সময় ওভার-ইনভয়েসিং এবং আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে ট্রান্সফার প্রাইসিং সিস্টেমের অপব্যবহার করে কর ফাঁকি দিচ্ছে।
Posted ২:৪০ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta