কক্সবাংলা ডটকম(১ অক্টোবর) :: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দোরগোড়ায়। কিন্তু এতে অংশ নেয়ার প্রশ্নে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি এখনো অবস্থান স্পষ্ট করতে পারেনি। এক নেতা বলেন, ‘যাবো না কেনো, যাবো’; তো আরেক নেতা বলেন, ‘যেতে পারি, কিন্তু কেনো যাবো?’।
আন্দোলন না নির্বাচন- এ নিয়ে পুরো দলই দ্বিধা-বিভক্ত। একপক্ষ যেকোনো পরিস্থিতিতে নির্বাচনে অংশ নিতে উদগ্রীব। আরেক পক্ষ নির্বাচন বর্জন করে রাজপথে আন্দোলনে নামার হুঙ্কার দিচ্ছে।
এই দো-টানা ভাব আছে নীতিনির্ধারক থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত। দুপক্ষের এমন অবিচল অবস্থানের কারণে দলটির মধ্যে সমন্বয়হীনতা দৃশ্যমান। অচিরেই এই বিরোধ সামনে চলে আসবে বলে দলীয় সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে।
বিএনপির যে অংশটি নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে তাদের যুক্তি হলো- খালেদা জিয়ার মুক্তি, বিএনপির নিবন্ধন রক্ষা, লাখ লাখ নেতাকর্মীকে হামলা মামলা থেকে বাঁচাতে নির্বাচনে অংশ নেয়ার কোনো বিকল্প নেই।
অন্যপক্ষের যুক্তি সরকার আবারো একতরফা নির্বাচনের দিকে হাঁটছে। এ নির্বাচনে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগকে আরো একবার ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে না বিএনপি।
এ কারণে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামতে হবে। আন্দোলনের মাধ্যমেই এবার সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব। ২০১৪ সাল আর ২০১৮ এক নয়। ইচ্ছা করলেই সরকার একতরফা নির্বাচন করতে পারবে না। জনগণ মানবে না। বিদেশি উন্নয়ন সহযোগী ও মিত্ররা সহজভাবে নেবে না।
যেকোনো পরিস্থিতিতে নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহাবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ দলটির মধ্যম ও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের একটি বিরাট অংশ।
তাদের এ অবস্থানকে সমর্থন করেছেন দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি আর কোনো নির্বাচন বর্জনের পক্ষে নন, কারাগার থেকে এমন বার্তা দিয়েছেন দলটির সিনিয়র নেতাদের।
নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নেয়া দলীয় নেতারা খালেদা জিয়াকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন, সরকার আবারো একতরফা নির্বাচনের নীল নকশা করছেন। নীল নকশার অংশ হিসেবেই খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকে রেখেছে। বারবার জামিন পেয়েও তাকে কারামুক্ত করা যাচ্ছে না।
বিএনপি যাতে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া না হলে নির্বাচন করব না- এমন গো ধরে নির্বাচন বর্জনের পথ বেছে নেয়। বিএনপি যদি সরকারের পাতা এমন ফাঁদে পা দেয় তবে বিএনপির আম ও ছালা দুটোই যায়।
নির্বাচনে অংশ না নিয়ে ছিটকে পড়বে সংসদ ও রাজনীতির ময়দান থেকে। পাশাপাশি খালেদা জিয়ার কারামুক্তিও হবে না। এমনকি সরকার প্রভাব খাটিয়ে নির্বাচন কমিশন থেকে বিএনপির নিবন্ধন বাতিল করবে। দলটির নেতাকর্মীদের হামলা মামলায় জর্জরিত করা হবে। দল ভাঙতে সরকার প্ররোচনা দেবে।
এর চেয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমানের মামলা প্রত্যাহার ও স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বিষয়ে সরকারকে চাপে রাখা যাবে। যদি গনেশ উল্টে নিজেদের ক্ষমতায় আসার পথ তৈরি হয় তাহলে তো পোয়া বারো। নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নেয়া নেতাদের এমন যুক্তিও পরামর্শ খালেদা জিয়া মেনে নিয়েছেন বলেও তথ্য দিয়েছে দলীয় সূত্র।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, মুক্ত খালেদা জিয়ার চেয়ে বন্দি খালেদা জিয়া অনেক বেশি শক্তিশালী। তিনি এখন নেতাকর্মীসহ দেশবাসীর ‘মা’য়ে পরিণত হয়েছেন। তার মুক্তির জন্য আন্দোলনের পাশাপাশি ম্যান্ডেট হবে ব্যালট। নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করার জন্য বিএনপি প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেশবাসী ধানের শীষে ভোট দেয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে।
অন্যদিকে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খানসহ মধ্যম ও তৃণমূলের আরেকটি বড় অংশ খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠাসহ বিএনপির পক্ষ থেকে যে ৭ দফা দাবি ঘোষণা করা হয়েছে তার একটি দফা পূরণ বাকি থাকা পর্যন্ত নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
তাদের বিশ্বাস নির্বাচন দোরগোড়ায় হলেও সরকার নির্বাচন পিছিয়ে নেয়া কিংবা পন্ড করার উপায় খুঁজছে। এজন্য সরকার আদালতের ঘাড়ে সওয়ার হতে পারে। কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা অন্যকোনো বিকল্প শক্তির সহায়তা নিতে পারে। যা বিএনপির জন্য বিপর্যয় হবে।
সে ক্ষেত্রে খালেদা জিয়াকে কারাগারে, তারেক রহমানকে বিদেশেই থাকতে হবে। নির্বাচন বর্জনের পক্ষে অবস্থান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি লন্ডন থেকে ইতোমধ্যেই নেতাদের আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সারাদেশের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন।
নেতাকর্মীদের বলছেন, ডাক আসা মাত্র ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। নেতাকর্মীদের তিনি মূলমন্ত্র শেখাচ্ছেন ‘যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ, যদি তুমি এগিয়ে যাও তবে তুমি বাংলাদেশ’। তাই ধাপে ধাপে কঠোর থেকে কঠোর কর্মসূচি দিয়ে সরকারের পতন নিশ্চিত করতে হবে। তাদের বিশ্বাস, সরকার এখন বালির বাঁধের ওপর অবস্থান করছে। জোরে একটি ধাক্কা দিতে পারলে হুড়মুড়িয়ে পড়ে যাবে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, অনেক রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তি ঐক্যবদ্ধ হওয়ায় জাতীয় ঐক্যমত সৃষ্টি হয়েছে এই সরকারের পতন ঘটানোর জন্য। আন্দোলনের মাধ্যমেই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া কোনো নির্বাচনে বিএনপি যাবে না।
স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা বলছি, আমরা নির্বাচন চাই। বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা পরিবর্তন হবে সেটাই আমরা বিশ্বাস করি। যদি নির্বাচনী প্রহসন হয় কিংবা নির্বাচনী খেলা হয় আমরা সেখানে যোগদান করতে আগ্রহী নই।
দলের অভ্যন্তরে নেতাদের এমন পরস্পরবিরোধী অবস্থান ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে- যা দলটিকে আবারো একটি ভাঙনের দিকে নিয়ে যেতে পারে বলে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
Posted ১:৫৫ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০২ অক্টোবর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta