কক্সবাংলা ডটকম(২৬ জুন) :: আজ রাত ১২টায় শুরু হতে যাওয়া ম্যাচের আগে আর্জেন্টাইন সমর্থকরা আশায় বুক বাঁধতে পারেন দুই দেশের অতীত ফলাফলের কারণে। এ পর্যন্ত বিশ্বকাপে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে চারবারের মোকাবেলায় সব ম্যাচই জিতেছে আর্জেন্টিনা। এসবের ফাঁকে নাইজেরিয়ার সম্ভাবনার বিষয়টিও কিন্তু মাথায় রাখতে হবে। আর্জেন্টিনাকে হারালে ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গী হয়ে পরবর্তী পর্বে যাবে সুপার ঈগলরা।
গ্রুপের শেষ ম্যাচগুলোর আগে সামনে চলে আসে অনেক জটিল হিসাব নিকাশ। এক দলের ফলাফলের উপর নির্ভর করে থাকতে হয় অন্য দলকেও। তেমনি বেশ কিছু জটিল সমীকরণের উপর ঝুলছে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ ভাগ্য।
সেই সমীকরণগুলোর দিকে একটু নজর দেয়া যাক।
আগে গ্রুপ ‘ডি’ এর বর্তমান পয়েন্ট টেবিলের দিকে তাকানো যাক। দুই ম্যাচে পূর্ণ ছয় পয়েন্ট নিয়ে এরই মধ্যে পরের পর্ব নিশ্চিত করে ফেলেছে ক্রোয়েশিয়া। বাকি একটি পজিশনের জন্য লড়াইয়ে আছে তিন দলই। আপাতত তিন পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে নাইজেরিয়া। আর আইসল্যান্ড ও আর্জেন্টিনার পয়েন্ট সমান এক করে। তবে গোল ব্যবধানে পিছিয়ে থাকায় গ্রুপের শেষ স্থানে আছে মেসির আর্জেন্টিনাই।
তবে শেষ ম্যাচ শেষে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসার বেশ কয়েকটি রাস্তা খোলা আছে আর্জেন্টিনার সামনে। সবার আগে মূল শর্ত হলো, যেভাবেই হোক হারাতে হবে নাইজেরিয়াকে। নাইজেরিয়ার বিপক্ষে পূর্ণ তিন পয়েন্ট না পেলে আর কোন হিসাবেই পরের পর্বে যাওয়ার সুযোগ থাকবে না আর্জেন্টিনার।
তবে শুধু নাইজেরিয়াকে হারালেই পরের পর্ব নিশ্চিত হচ্ছে না মেসি বাহিনীর, তাকিয়ে থাকতে হবে ক্রোয়েশিয়া-আইসল্যান্ড ম্যাচের দিকেও। ক্রোয়েশিয়া যদি আইসল্যান্ডকে হারিয়ে দেয়, বা ম্যাচ ড্র হয়, তাহলে নাইজেরিয়াকে হারালেই সরাসরি পরের পর্বের টিকিট পেয়ে যাবে আর্জেন্টিনা। অর্থাৎ আর্জেন্টিনা জিতলে ও আইসল্যান্ড জয় বঞ্চিত হলেই শেষ ষোলো নিশ্চিত মেসিদের।
কিন্তু আর্জেন্টিনার পাশাপাশি যদি আইসল্যান্ডও জিতে যায়, তাহলে সামনে আসবে আরেক সমীকরণ। নিজ নিজ ম্যাচে জিতে গেলে আর্জেন্টিনা-আইসল্যান্ড দুই দলের পয়েন্টই হবে সমান চার। তখন সামনে চলে আসবে গোল ব্যবধানের হিসাব। এই মুহূর্তে গোল ব্যবধানের দিক থেকে আইসল্যান্ডের চেয়ে পিছিয়ে আছে আর্জেন্টিনা। আইসল্যান্ডের গোল ব্যবধান -২, ক্রোয়েশিয়ার কাছে ৩ গোলে হারায় আর্জেন্টিনার গোল ব্যবধান -৩। সেক্ষেত্রে আইসল্যান্ড ও আর্জেন্টিনা দুই দলই যদি একই ব্যবধানে জেতে, তাহলে গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকার সুবাদে পরের পর্বে নবাগত আইসল্যান্ডই।
গোল ব্যবধান কমিয়ে আনার জন্য তাই আর্জেন্টিনাকে আইসল্যান্ডের চেয়ে অন্তত এক গোল বেশি ব্যবধান রেখে জিততে হবে। যেমন, আইসল্যান্ড যদি ক্রোয়েশিয়াকে ২-০ গোলে হারায়, আর্জেন্টিনাকে তখন অবশ্যই ন্যূনতম ৩-০ গোলে জিততে হবে। তখন দুই দলের গোল ব্যবধানই সমান হয়ে যাবে, আর বেশি গোল করার সুবাদে শেষ ষোলোতে উঠবে আর্জেন্টিনা।
তবে আইসল্যান্ড-আর্জেন্টিনার এত হিসাব নিকাশে জল ঢেলে দিতে নাইজেরিয়ার জয়ই যথেষ্ট। আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে দিলে এই গ্রুপ থেকে ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গী হবে নাইজেরিয়া, আর কোন হিসাব নিকাশেরই দরকার পড়বে না তখন। জমজমাট এই গ্রুপ তাই অনেক রোমাঞ্চই বাকি রেখেছে ফুটবলপ্রেমীদের জন্য!
মেসি তো অন্যদিকে মুসা। আজ রাতে কাকে ছেড়ে কাকে দেখবেন? রাশিয়া বিশ্বকাপের গ্রুপ ‘ডি’ এর আর্জেন্তিনা বনাম নাইজেরিয়া ম্যাচটি হঠাৎই হয়ে উঠেছে সারা ফুটবল বিশ্বের পাখির চোখ। মেসিদের পিঠ এখন এক রকম ঠেকে রয়েছে সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামের দেওয়ালেই।
নাইজেরীয় সুপার ঈগলসদের বিরুদ্ধে আর একবার পদস্খলন মানেই এবারের মত ‘বিদায় বিশ্বকাপ’ বলা ছাড়া আর উপায় থাকবে না সাম্পাওলি ব্রিগেডের সামনে আর অন্য দিকে এই ম্যাচে মেসিদের পরাজিত করতে পারলেই মুসাদের জন্য দরজা খুলে যাবে টুর্নামেন্টের শেষ ষোলর।
তবে মেসিরা এই ম্যাচ থেকে পুরো তিন পয়েন্ট পেলেও কিন্তু তাদের তাকিয়ে থাকতে হবে আইসল্যান্ড বনাম ক্রোয়াশিয়া ম্যাচের দিকেও। এরই সাথে আর্জেন্তিনা–নাইজেরিয়া হাইভোল্টেজ ম্যাচের বাইরেও কিন্তু উত্তাপ ছড়াচ্ছে আরও এক যুদ্ধ। মেসি এবং মুসার। রাশিয়ার মাটিতে কিন্তু ইতিমধ্যেই দু’দুটি গোল করে ফেলেছেন নাইজেরিয়ান এই স্ট্রাইকার। রাশিয়ার রণভূমিতে নয়া নামও পেয়ে গিয়েছেন তিনি।
তাঁর ভক্তদের কাছে মুসা এখন ‘নাইজেরিয়ান মেসি’। অন্যদিকে মেসি নিজে এখনও পর্যন্ত টুর্নামেন্টে কোন গোল তো করতে পারেনইনি বরং আইসল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচেই পেনাল্টি মিস করে দলকে ডুবিয়ে বিশ্ব জুড়ে তাঁর কোটি কোটি সমর্থকদের হৃদয় ভেঙেছেন তিনি।
তাই স্বভাবতই গোল সংখ্যার বিচারে কিন্তু মুসা ম্যাচ শুরুর আগেই দু’গোল দিয়ে রেখেছেন তথাকথিত ফুটবল ঈশ্বরকে। প্রসঙ্গত, আইসল্যান্ড ম্যাচেই আসে মুসার সেই দুই গোল। আর তাঁর গোলের দৌলতেই তিন পয়েন্ট নিয়ে বিশ্বকাপের খাতা খুলেছেন নাইজেরীয় ‘সুপার ঈগলসরা’।
অন্য দিকে মেসি তাঁদের আইসল্যান্ড ম্যাচে মোট ১১টি গোলমুখী শট নিলেও গোলের মুখ কিন্তু খুলতে পারেননি তিনি। একবারের জন্যও তিনি পরাস্ত করতে পারেননি আইসল্যান্ডের গোলকিপার ‘হ্যান পর হেল্ডারসনকে’। আর শুধু তা-ই নয়, ক্রোয়েশিয়া ম্যাচেও সুযোগ তৈরী করেও গোল করতে ব্যর্থই হয়েছেন এলএম টেন।
তাই মঙ্গলবারের এই ম্যাচে সেন্ট পিটার্সবার্গে শুধু যে নাইজেরীয় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখিই হচ্ছেন মেসি তা-ই নয় একই সাথে তিনি মাঠে নামছেন নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জকে সঙ্গী করেও।