কক্সবাংলা ডটকম :: চার মাসের বেশি সময় আগে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরু করলে অনেকে মনে করেছিলেন, তিন-চার দিনেই প্রতিবেশী দেশটি দখল করে নিতে সক্ষম হবে মস্কো। বিপরীতে, হামলা শুরুর পরপরই নজিরবিহীন পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়া পর্যুদস্ত হয়ে পড়বে বলে ধারণা ছিল বেশিরভাগ মানুষের।
বাস্তবে এর কোনোটাই ঘটেনি। বিশ্বের অন্যতম সামরিক শক্তি রাশিয়ার বিরুদ্ধে এখনও শির উঁচু করে লড়ছে সব দিক থেকে বহু পিছিয়ে থাকা ইউক্রেন।
দেশটি দখল করে সেখানে পুতুল সরকার বসানোর টার্গেট ছিল রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভদ্মাদিমির পুতিনের। তিনি সেই আশা বহু আগেই ত্যাগ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পাশ্চাত্যের বিপুল অর্থ ও ব্যাপক অস্ত্র সহায়তার মাধ্যমে বীরবিক্রমে লড়াইয়ের মাধ্যমে ইউক্রেন পুতিনের লম্বা প্রত্যাশাকে দিন দিনই খাটো করে দিয়েছে। তবে পুতিনও খালি হাতে ফিরতে রাজি নন। তিনি সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের অংশ ইউক্রেনের কৌশলগত অংশ দখল করে নিতে মরিয়া।
ফলে যুদ্ধ শুধু দীর্ঘায়িতই হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল ইউক্রেন যুদ্ধের ১২৭তম দিন। রাশিয়ার মতো বিপুল সমরশক্তির বিরুদ্ধে একটি ক্ষুদ্র দেশের এতদিন টিকে থাকা অনেকটা বিস্ময়কর হলেও কিয়েভকে কিন্তু চরম মাশুল দিতে হচ্ছে।
ইউক্রেনের বিশাল অংশ দখল করে নিয়েছে রাশিয়া। আক্রান্ত দেশটিতে বিপুল প্রাণহানির পাশাপাশি অন্তত প্রায় ৮৪ লাখ লোক উদ্বাস্তু হয়েছে। প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ ইউক্রেনীয় সেনা নিহত হচ্ছে।
রাশিয়ার ক্ষতিও কম কিছু হয়নি। অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে রাশিয়া এখন কার্যত একঘরে। রাশিয়ার হাজার হাজার সেনা নিহত এবং বিপুল সমরাস্ত্র ধ্বংস হয়েছে। রাশিয়ার মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে পাশ্চাত্য আবার এক কাতারে দাঁড়িয়েছে। মস্কোর বিরুদ্ধে ন্যাটো জোট আবার শক্তিশালী হয়েছে। বস্তুত, ইউক্রেনে হামলার পর রাশিয়ার নিরাপত্তা ঝুঁকি আরও বেড়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে চলা যুদ্ধে রাশিয়া এখন পর্যন্ত তার টার্গেটের কাছাকাছিও পৌঁছাতে পারেনি। শুরুতে রাশিয়া রাজধানী কিয়েভসহ দেশজুড়ে হামলা চালালেও দ্রুতই বুঝতে পারে যে তার পরিকল্পনায় ত্রুটি আছে। এরপর দ্রুত সামরিক টার্গেট সংকীর্ণ করে ফেলে মস্কো। কিয়েভ ও খারকিভের মতো বড় বড় শহর দখলের সম্ভাবনা শূন্য দেখতে পেয়ে পুতিন পূর্বাঞ্চলীয় দোনবাস অঞ্চল দখলে সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। এতে তিনি কিছুটা সাফল্যও পেয়েছেন।
রাশিয়ার বাহিনী প্রাথমিকভাবে দক্ষিণেও দ্রুত সাফল্য অর্জন করেছিল। তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ক্রিমিয়া। এ অঞ্চলটি ২০১৪ সালে দখল করেছিল রাশিয়া। দোনেস্ক এবং লুহানস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দখলে থাকা অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি স্থল করিডোর তৈরি করার চেষ্টায় আছে মস্কো। তাই দোনবাসেই এখন সবচেয়ে তীব্র যুদ্ধ চলছে।
কিন্তু পশ্চিমে মাইকোলাইভ এবং মারিউপোলের কাছে ইউক্রেনীয় বাহিনীর শক্তিশালী প্রতিরোধ রাশিয়ার অগ্রগতি উল্লেখযোগ্যভাবে ধীর করে দিয়েছে। দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা অবরোধ গত ২০ মে শেষ হওয়ার পর রাশিয়া এখন বন্দরনগরী মারিউপোলের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। রাশিয়ার সেনারা জাপোরিজিয়া, খেরসন, মাইকোলাইভ এবং ডিনিপ্রোপেট্রোভস্কের দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে ইউক্রেনের অবস্থানে গোলাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের পরিচালক এভ্রিল হেইনস বলেছেন, এই যুদ্ধ দীর্ঘদিন স্থায়ী হতে পারে। তবে এ গোয়েন্দা কর্মকর্তার অনুমান, রাশিয়ার পক্ষে দ্রুত লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। তিনি বলেছেন, সমস্ত ইউক্রেন নিয়ন্ত্রণ করার ইচ্ছা এখনও পরিত্যাগ করেননি পুতিন। তবে তিনি বুঝতে পেরেছেন, একসময়ের আস্থাভাজন সামরিক বাহিনী তাঁর প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম নয়।
রাশিয়ার জন্য সর্বশেষ বিপর্যয় ডেকে এনেছে ইউক্রেনের দ্বীপ স্নেক আইল্যান্ড। পশ্চিমা আধুনিক অস্ত্রের সাহায্যে ইউক্রেনীয় সেনাদের অব্যাহত হামলার মুখে সেখান থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়েছে রাশিয়া। এটি মস্কোর বাহিনীর জন্য একটি ধাক্কা এবং সম্ভবত গুরুত্বপূর্ণ শিপিং লেনের ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণকে দুর্বল করে দেবে। এর ফলে সমুদ্রপথে ইউক্রেনের রপ্তানির দ্বার খুলে যাবে।
তবে রাশিয়ার অর্জনও কম নয়। এক মাস আগেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ৬ লাখ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ইউক্রেনের প্রায় ২০% ভূখ দখল করে নিয়েছে রাশিয়া। তবে এর মধ্যে ক্রিমিয়াও অন্তর্ভুক্ত।
প্রাণের মায়াকে তুচ্ছ করে অমিত সাহস দেখিয়ে বিশ্বের অনেকের কাছে বীরের মর্যাদায় আসীন জেলেনস্কি বলেছেন, ‘শুধু কল্পনা করুন! ক্রমাগত লড়াই চলছে। যুদ্ধটা এক হাজার কিলোমিটারেরও বেশি এলাকাজুড়ে চলছে।’ তিনি জানান, পুতিনের বাহিনী ইউক্রেনের যত এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে তা প্রায় সমগ্র নেদারল্যান্ডসের সমান।
Posted ২:২৩ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০১ জুলাই ২০২২
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta