অথচ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু-র বৈঠকের পরে যে ৭টি ক্ষেত্রে চুক্তি সই হলো, তাতে সন্ত্রাস-সহযোগিতার নামগন্ধ নেই। বরং রয়েছে জল, কৃষি, মহাকাশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে শক্তিশালী সমঝোতা। নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘‘ভারত ও ইজরায়েলের এই বিবাহ স্বর্গে রচিত হয়েছিল, বাস্তবায়ন হল মর্ত্যে!’’ পাশে দাঁড়িয়ে মধুরতর স্বরে মোদী পাল্টা বলেছেন, ‘‘গতরাতের নৈশাহারে প্রধানমন্ত্রী তাঁর পরিবার ও পিতা সম্পর্কে যা বলেছেন, এই সুন্দর দেশ সম্পর্কে আমার ধারণাটাই তাতে অন্য মাত্রায় পৌঁছে গিয়েছে।’’

কিন্তু এই দর্শনীয় যুগলবন্দির মোড়কে যে যৌথ বিবৃতিটি প্রকাশ হলো, তাতে কিন্তু নাম না করে সরাসরি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার ইঙ্গিত রয়েছে। বলা হয়েছে, ‘‘সন্ত্রাসবাদ, সন্ত্রাসবাদী সংগঠন, তাদের নেটওয়ার্ক এবং যারা এই জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলোকে নিরাপদ আশ্রয় দেয়, তাদের আর্থিক সাহায্য করে সমর্থন জোগায়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার উপরে দুই রাষ্ট্রনেতাই জোর দিয়েছেন।’’ এখানেই না থেমে যৌথ বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘‘সন্ত্রাসের কোনও যুক্তি বা ব্যাখ্যা হয় না, তা সে যে ভাবেই দেখা হোক না কেন।’’

কার্গিল যুদ্ধের সময় থেকেই তেল আভিভের সঙ্গে নিরাপত্তা এবং সন্ত্রাস মোকাবিলার প্রশ্নে হাতে হাত মিলিয়ে চলছে নয়াদিল্লি। কিন্তু তা কখনওই এ ভাবে বিজ্ঞাপিত হয়নি। আজ আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসে যখন ভারত কোণঠাসা, কাশ্মীর যখন ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে, ঠিক সেই সময়ে ইজরায়েলের মাটিতে দাঁড়িয়ে সে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে এই যৌথ যুদ্ধ ঘোষণা ইসলামাবাদকে কিছুটা চাপে ফেলবে বলে আশাবাদী বিদেশ মন্ত্রক।
এ নিয়ে ইসলামাবাদ সরকারি ভাবে কোনও মন্তব্য না করলেও গতকাল থেকেই ইজরায়েল-ভারতের এই বন্ধুত্ব নিয়ে সরগরম পাক সংবাদমাধ্যম। আজই আবার ভূপৃষ্ঠ থেকে ভূপৃষ্ঠ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘নাসের’-এর সফল পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করেছে পাকিস্তান।
সাত পাকে বাঁধা দু’দেশের মধ্যে আজ যে সব চুক্তি হলো
• যৌথ শিল্প গবেষণা এবং প্রযুক্তির তহবিল
• জল সংরক্ষণ
• জলের ব্যবহার সংক্রান্ত সংস্কার
• কৃষিক্ষেত্রে আগামি তিন বছরের উন্নয়নক্ষেত্রে সহযোগিতা
• অ্যাটমিক ক্লক উৎপাদনে সহযোগিতা
• অপ্টিকাল লিঙ্কে সহযোগিতা
• উপগ্রহ নির্মাণক্ষেত্রে সহযোগিতা

এর আগে ইজরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ভারতকে যে সহযোগিতা করেছে, আজকের সিলমোহরের পরে সরকারি ভাবে তা বেশ কয়েক গুণ বাড়বে বলেই সূত্রের খবর। মূলত ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত এবং কাশ্মীরের ক্ষেত্রে ভারতীয় গোয়েন্দা এবং প্রতিরক্ষাকর্মীদের সঙ্গে এ বার দেখা যাবে ইজরায়েলি প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ এবং মোসাদের প্রত্যক্ষ উপস্থিতিও। এই নিয়ে দুই নেতার একান্ত বৈঠকে সবিস্তার কথা হলেও, স্বাভাবিক ভাবেই প্রকাশ্যে এই নিয়ে মুখ খোলেননি তাঁরা। সন্ত্রাস এবং নিরাপত্তা ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো নিয়ে দুই রাষ্ট্রনেতার মধ্যে কথা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে— অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, সাইবার সন্ত্রাস, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে যৌথ উৎপাদন, ইজরায়েলের উচ্চ প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি ভারতে হস্তান্তরের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো। যৌথ বিবৃতিতেও এই সব বিষয় রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘‘ভারত এবং ইজরায়েল দু’দেশই জটিল ভৌগলিক অবস্থানে রয়েছে। আমরা জানি যে সুস্থিতি এবং অঞ্চলের শান্তিকে বিঘ্নিত করা হচ্ছে। সন্ত্রাসবাদের ঘৃণা ও হিংসার ভুক্তভোগী ভারত এবং ইজরায়েল। আমি এবং প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু মৌলবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বাড়বাড়ন্ত রোধে আরও বেশি সহযোগিতা করার প্রশ্নে একমত।’’ তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘আমরা দু’দেশই সন্ত্রাসবাদের শিকার। গোটা বিশ্বের শান্তি ও সুস্থিতির জন্য এ বার আমরা একসঙ্গে কাজ করব।’’

পাকিস্তানের মদতপ্রাপ্ত সন্ত্রাস বিরোধিতার প্রতীকী ছবিও আজ নিপুণভাবে তৈরি করেছে ভারত। ন’বছর আগের মুম্বই সন্ত্রাসে নিহত ইজরায়েলি দম্পতির সন্তান এগারোর বছরের মোশে হোলৎসবার্গের সঙ্গে আজ দেখা করেন মোদী। তৈরি হয় এক আবেগঘন মুহূর্ত।

নেতানিয়াহু বলেন, ‘‘বালক মোশে-র সঙ্গে দেখা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা শুভ শক্তিকে রক্ষা করার জন্য একসঙ্গে লড়ব।’’