কক্সবাংলা ডটকম(২৫ ডিসেম্বর) :: ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা ও জাভাতে হওয়া সুনামিতে মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৪০০ জনে উপনীত হয়েছে। উদ্ধারকর্মীরা উপকূলীয় অঞ্চল জুড়ে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন জীবিতদের সন্ধানে। উদ্ধারকারীদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইন্দোনেশিয়ার সেনাবাহিনীও।
এদিকে নতুন করে সুনামির আশঙ্কায় ইন্দোনেশিয়ার আনাক ক্রাকাতাউ আগ্নেয়গিরির কাছের উপকূলবর্তী মানুষদের সমুদ্র সৈকত থেকে দূরে থাকার সতর্কতা জারি করা হয়েছে। রবিবার আগ্নেয়গিরিটি আবারও সক্রিয় হয়ে ওঠার কারণে এই সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
দেশটির জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার মুখপাত্র সুতোপো পুরো নুগ্রহো এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, আনাক ক্রাকাটাওয়ের লাভা উদগীরণ অব্যাহত থাকায় আরেকটি সুনামির আশঙ্কা রয়েছে।
শনিবার আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সমুদ্র তলদেশে ভূমিধসে সুনামি সৃষ্টি হয়। সুমাত্রা ও জাভা দ্বীপের উপকূলবর্তী শহরগুলোতে আঘাত হানা এই সুনামিতে এখন পর্যন্ত ২৮১ জন নিহত ও এক হাজার ১৬ জন আহত হয়েছেন। সুনামির আঘাতে ৫৫৮টি বাড়িঘর, ৬০টি হোটেল, ৩৫০টি নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা। সুনামিটি আবাসিক ও পর্যটন এলাকাতেই আঘাত হেনেছে বলে জানানো হয়েছে।
প্যানদেগ্ল্যাং অঞ্চল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তবে বিদেশী কোন পর্যটকের মৃত্যুর খবর এখনোও পাওয়া যায় নি। ধ্বংসস্তূপের কারণে রাস্তা বন্ধ থাকায় উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছে তবে সুনামি আঘাত হানা অঞ্চল গুলোতে ভারি যন্ত্রপাতি দিয়ে উদ্ধারকাজ চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থার দুবর্লতার কারণে নিহতের সংখ্যা এত বেড়েছে বলে স্বীকার করেছেন সুতোপো। টুইট বার্তায় তিনি বলেন, প্রচলিত ব্যবস্থায় ভূমিকম্পের পর সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়। তবে শনিবার এ ব্যবস্থা কাজ করে নি কারণ সেদিন ভূমিকম্প নয় বরং আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সমুদ্রে ভূমিধ্বসের ঘটনা ঘটে। আর সাধারণভাবে এটি আগে থেকে বোঝা খুব কঠিন। সাগরের তলদেশে ভূমিকম্প হলে উপকূলের পানি সরে যায় এবং পরে বড় ঢেউ আঘাত হানে। তবে ভূমিধ্বসের ঘটনায় এরকম কিছুই ঘটে নি তাই মানুষও দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারেনি।
সুন্দা প্রণালীর আনাক ক্রাকাতাউ দ্বীপের আগ্নেয়গিরি সমুদ্রের তলদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত। আগ্নেয়গিরি বিশেষজ্ঞ জেস ফিনিক্স বিবিসিকে বলেন, অগ্ন্যুৎপাতের ফলে উত্তপ্ত লাভা সাগরের নিচে ঠাণ্ডা মাটির স্তর ভেদ করে ভেতরে প্রবেশ করে। এতে সাগরের তলদেশের মাটি সরে গিয়ে ধ্বসের সৃষ্টি হয়। আর এর ফলে মাটির সাথে বিপুল পরিমাণ পানিও সরে যায়, যা সুনামির সৃষ্টি করে। ইন্দোনেশিয়ার ভূ-তাত্ত্বিক সংস্থার মতে শুক্রবার দুই মিনিট বার সেকেন্ড ধরে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত হয়। আর এতে প্রায় চারশ মিটার পর্যন্ত ছাই উড়তে দেখা যায়। শনিবারের সুনামিতে ১০ ফুট উঁচু ঢেউয়ের সৃষ্টি হয় বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম।
প্রশান্ত মহাসাগরের ভূমিকম্পপ্রবণ ‘রিং অব ফায়ার’ এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় ইন্দোনেশিয়ায় প্রায়ই ভূকম্পন ও অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা ঘটে থাকে। বিশ্বের মোট সক্রিয় আগ্নেয়গিরির ১৩ শতাংশই ইন্দোনেশিয়ায় অবস্থিত। আনাক ক্রাকাতাউ আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনাও এই প্রথম নয়।
২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ভারত মহাসাগরে ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট সুনামিতে ১৩ দেশের ২ লাখ ২৬ হাজার মানুষ নিহত হয়েছিলেন। এদের মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি নিহত হয়েছিলেন শুধু ইন্দোনেশিয়াতেই। ১৮৮৩ সালে এবারের আগ্নেয়গিরিটিরই অগ্ন্যুৎপাতের কারণে ধারাবাহিকভাবে কয়েকটি সুনামি হয়েছিল, যাতে প্রাণ হারিয়েছিল ৩৬ হাজারের বেশি মানুষ।
Posted ১:৪৬ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta