কক্সবাংলা ডটকম(২০ সেপ্টেম্বর) :: ভারতে রপ্তানি না করার সিদ্ধান্তের পর সামাজিক মাধ্যমে ইলিশে দাম কমার তথ্য দেখে সম্প্রতি বাজারে গিয়ে অনেকেই বিভ্রান্ত হচ্ছেন।
রপ্তানি না হওয়ার পরেও বাজারে মাছটির দাম নাগালের মধ্যে নেই বলে জানাচ্ছেন ক্রেতারা।
জেলের জালে ধরা পড়া ইলিশ তিন থেকে পাঁচ হাত ঘুরে ক্রেতার কাছে আসে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এসব জায়গায় দামের তারতম্যের ওপর বাজারও ওঠানামা করে।
কক্সবাজার ও চাঁদপুরের আড়তগুলোতে দুদিন আগে তিন থেকে চারশো গ্রাম ওজনের প্রতি মণ ইলিশ বিক্রি হয়েছে ২৫ হাজার টাকার আশেপাশে।
অন্য মাছের মতো ইলিশের ক্ষেত্রেও ওজনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে দাম। অর্থাৎ, মাছের আকার যত বড় হয়, কেজিপ্রতি দামও তত বেশি হয়ে থাকে।
এ ছাড়া, সমুদ্র-মোহনা থেকে ধরা মাছ আর নদীর উজানের মাছের ক্ষেত্রেও দামে বেশ কিছুটা পার্থক্য থাকে বলেও জানান মাছ বিক্রেতারা।
প্রায় এক কেজি ওজনের মাছের কেজিপ্রতি দাম উৎসে এক হাজার থেকে ১১০০ টাকা। আড়তে ওই আকৃতির মাছের দাম ওঠে ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা।
যা আরো দুই-তিনশো টাকা বেশি দামে কিনতে হয় ভোক্তাকে।
রাজধানীর হাতিরপুল বাজারে নয়শো গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের মাছের জন্য ১৮০০ টাকা পর্যন্ত হাঁকছেন বিক্রেতারা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ এ বছর ভারতে ইলিশ মাছ রপ্তানি করবে না।
কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশের বাজারে পর্যাপ্ত ইলিশের সরবরাহ নিশ্চিত করতেই রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেন দেশের মানুষের কাছে ইলিশ আরও সহজলভ্য হয়।
সাধারণত প্রতিবছর দুর্গাপূজার সময় ইলিশের ওপর থেকে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে বাংলাদেশ, বিশেষ করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জন্য।
মূলত বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ইলিশের উৎপাদন হয়। আর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবে ঢাকা থেকে যাওয়া ইলিশকে ভারতীয়দের জন্য উপহার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘ভারতে ইলিশ রপ্তানির জন্য আমাদের কাছে প্রায় ৫০টি আবেদন ঝুলে আছে। কিন্তু এ বছর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে আমরা কোনো রপ্তানির অনুমতি পাইনি।’
নীতিমালা অনুযায়ী, সাধারণত বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মতামতের ভিত্তিতে যেকোনো পণ্য রপ্তানির অনুমতি দিয়ে থাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা জানান, ইলিশের ক্ষেত্রে এ বছর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় রপ্তানির অনুমতি দেয়নি।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার একাধিক গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের বাজারে ইলিশের সরবরাহ বাড়াতে চায়।
মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারতে ৬৬৪ দশমিক ৮৬ টন ইলিশ রপ্তানি করেছে। যার রপ্তানি মূল্য ৭ দশমিক ৭১ মিলিয়ন ডলার।
তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ১ হাজার ৩৭৬ দশমিক ৪২ টন ইলিশ রপ্তানি করেছিল, যার মূল্য ১৩ দশমিক ৬৮ মিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশেও এ মাছের চাহিদা বেশি। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইলিশের আহরণ বাড়লেও দেশের বাজারে দাম এখনো বেশ চড়া।
মৎস্য তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে মোট ৫ লাখ ৭১ হাজার ৩৪২ টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন হয়েছিল ৫ লাখ ৬৬ হাজার ৫৯৩ টন।
প্রতি বছরের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে বঙ্গোপসাগর থেকে ডিম পাড়ার জন্য নদীতে আসে ইলিশ। তখন জেলেরা ইলিশ শিকার করেন। জেলেরা বছরে প্রায় ছয় রাখ টন ইলিশ ধরেন, যার সিংহভাগ আসে সমুদ্র থেকে।
২০১৭ সালে ইলিশ দেশের ভৌগোলিক সূচক বা জিআই স্বীকৃতি পায়।
কিন্তু বাংলাদেশের জাতীয় মাছ হওয়া সত্ত্বেও এখনো প্রান্তিক শ্রেণির অনেকের কাছে ইলিশ কেনা বিলাসিতা।
এদিকে রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকায় এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। খুচরা বাজারে এক কেজির কম ওজনের ইলিশের দাম ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে।
যেসব কারণে দাম কমে না
দেশের ইলিশ রক্ষায় সরকার প্রতি বছর পহেলা মার্চ থেকে ৩০শে এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাসের মাছ ধরা বন্ধ কর্মসূচি ঘোষণা করে।
এই নির্দিষ্ট সময়ে ইলিশের অভয়াশ্রমে মাছ ধরা, পরিবহন, বিক্রি ও মজুত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
এরপর মে-জুন থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত ইলিশ আহরণের মৌসুম।
এই সময়টাকে ‘পিক টাইম’ বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সভাপতি আবদুল বারী জমাদার বলছেন, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার এই সময়টায় মাছের দেখা মিলছে খুবই কম।
২০২২ সালে প্রতিদিন ১২০০ মণ ইলিশ আসতো আমাদের মোকামগুলোয়, গত বছর আসে সাত-আটশো মণ আর এইবার আসতেছে দুই-আড়াইশো মণ।
এ বছর ৪০ টি ট্রলারে দাদন (অগ্রিম অর্থ) দিয়েছেন জানিয়ে এখন পর্যন্ত একটি ট্রলার যথেষ্ট মাছ পায়নি বলে দাবি করেন তিনি। জানান, একেকটি ট্রলারে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা করে দিয়েছেন।
এই দাদনদাতাদের মাধ্যমেই জেলেদের মাছ বিক্রির বাধ্যবাধকতা থাকে। এতে কমিশন এজেন্ট হিসেবে তারা দশ শতাংশ অর্থ পান।
পর্যাপ্ত যোগান না থাকলে দাম হ্রাসের সুযোগ থাকে না বলেই জানাচ্ছেন অন্য ব্যবসায়ীরাও। আরেকটি কারণ, জেলে ও ট্রলারের খরচ তথা ব্যবসার বিনিয়োগ ও অন্যান্য ব্যয়।
এ ছাড়া, মাছের বাজারের উচ্চ দামের জন্য কেউ কেউ সিন্ডিকেটের অভিযোগও তুলে থাকেন। তবে, তা অস্বীকার করছেন মাছ ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশের মোট মৎস্য উৎপাদনে ইলিশ মাছের অবদান প্রায় ১২ শতাংশ।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, এর বার্ষিক উৎপাদন পাঁচ লাখ একাত্তর হাজার মেট্রিক টনে দাঁড়িয়েছে।
Posted ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta