কক্সবাংলা রিপোর্ট(১৭ ফেব্রুয়ারী) :: কক্সবাজারের টেকনাফে বহুল আলোচিত যে ইয়াবা কারবারিরা শনিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল তাদের আদালতের নির্দেশে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, ইয়াবা কারবারিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে (নং-২৬ ও ২৭)।
এই দুুটি মামলায় টেকনাফের সরকারদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির ভাই আবদুস শুক্কুরকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। তার অপর তিন ভাই আমিনুর রহমান, শফিকুল ইসলাম ও ফায়সাল রহমানকেও এই মামলায় আসামি করা হয়েছে (২, ৮ ও ৯ নম্বর আসামি)।
এ ছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদের ছেলে দিদার মিয়াকে ৪ নম্বর এবং জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে লেদার নুরুল হুদাকে ৩ নম্বর ও এনামুল হককে ১০ নম্বর আসামি করা হয়েছে। শাহেদুর রহমান নীপুকে ৫ নম্বর ও ডেইল পাড়ার নুরুল আমিনকে ৬ নম্বর আসামি করা হয়েছে।
এদিকে গত শনিবার দুপুরে আত্মসমর্পণের পর ১০২ ইয়াবা কারবারিকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, রবিবার পর্যন্ত আত্মসমর্পণকারীদের পক্ষে কেউ জামিনের আবেদন করেননি।
অপরদিকে এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা টেকনাফ থানার পরিদর্শক এবিএমএস দোহা জানান, অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা দায়ের হলেও এটি একটি ব্যতিক্রমী মামলা। কাজেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী মামলার তদন্ত সম্পন্ন করা হবে।
জেলা পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণকারী ১০২ জনকে পাচারের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন বলেও জানিয়েছে পুলিশ। এ জন্য পুলিশ রিমান্ড আবেদন জানাবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা পাচারকারীদের রিমান্ডে আনার জন্য আদালতে আবেদন জানানো হবে। পরে অন্যদের রিমান্ড চাওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করতে চায়।
জেলা পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন বলেন, ‘মামলার তদন্তের স্বার্থে তদন্তকারী কর্মকর্তার যা যা করণীয়, তদন্তকারী কর্মকর্তা তা-ই করবেন।’ তিনি বলেন, ‘মামলার তদন্তের স্বার্থে যদি রিমান্ডে আনা প্রয়োজন মনে করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা, তাহলে তিনি আদালতে আবেদন করতেই পারেন।’
আত্মসমর্পণকারী ১০২ জন ইয়াবা কারবারি পুলিশের হেফাজতে ছিল না- এমন তথ্যই দিয়েছে পুলিশ। বরং পুলিশ বলছে, শতাধিক ইয়াবা কারবারি আত্মসমর্পণের উদ্দেশ্যে গত শনিবার ভোর রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বিচ হ্যাচারি এলাকায় জড়ো হয়েছিল। এই খবর পেয়ে টেকনাফ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এবিএমএস দোহার নেতৃত্বে ওই এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশের একটি দল।
পুলিশ সদস্যদের দেখে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা অস্ত্র ও ইয়াবা ফেলে আত্মসমর্পণ করে। সেখান থেকে ১০২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় সাড়ে ৩ লাখ ইয়াবা ও ৩০টি আগ্নেয়াস্ত্র।
টেকনাফ মডেল থানায় যে মামলা দায়ের করা হয়েছে তাতে এ কথাগুলোই উল্লেখ করেছেন মামলার বাদী টেকনাফ থানার পরিদর্শক অপারেশন শরীফ ইবনে আলম। আর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে থানার অপর পরিদর্শক (তদন্ত) এবিএমএস দোহাকে। টেকনাফ পুলিশের এক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অথচ, এই ইয়াবা কারবারিরা আত্মসমর্পণের জন্য গত জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই কক্সবাজার পুলিশ লাইনসে জড়ো তাকেন। এ নিয়ে গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদনও হয়েছে। কিন্তু পুলিশের দায়ের করা মামলার এজাহারে এ প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
অবশ্যই পুলিশ কখনই স্বীকার করেনি যে আত্মসমর্পণ করার জন্য ইয়াবা কারবারিরা তাদের হেফাজতে আছেন। কিন্তু আত্মসমর্পণকারীদের স্বজনরা কক্সবাজার পুলিশ লাইনসে নিয়মিত তাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। খাবার দিয়েছেন। এটা বিভিন্ন সময়ে স্বজনরা সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন।
প্রসঙ্গত, শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির ১৪ স্বজন, ৮ জনপ্রতিনিধিসহ ১০২ জন ইয়াবা কারবারি আত্মসমর্পণ করেছেন।অনুষ্ঠানের শুরু থেকে আত্মসমর্পণকারীদের বেশ বিব্রতকর অবস্থায় দেখা যায়। অনেকে লজ্জায় মুখে কাপড় বেঁধে পরিচয় লুকানোর চেষ্টা করেছেন।
Posted ২:২৮ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta