শাহিদ মোস্তফা শাহিদ,সদর(২৮ নভেম্বর) :: কক্সবাজার সদর, রামু, নাইক্ষ্যংছড়ি, আলীক্ষ্যংসহ বিভিন্ন বনাঞ্চলের হরেক প্রজাতির কাঠ গিলে খাচ্ছে বৃহত্তর ঈদগাঁও’র প্রত্যন্ত ইউনিয়নে স্থাপিত অবৈধ করাত কলগুলো দিবারাত্রি চিরাই হচ্ছে বনাঞ্চলের কাঠ। এসব গাছ রাতের আধারে সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে এনে চিরানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে প্রত্যক্ষ মদদ দিচ্ছে স্থানীয় বনবিভাগের অসাধু কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা।
মঙ্গলবার বিকালে বিভিন্ন ইউনিয়নে কয়েকটি স’মিল ঘুরে দেখা যায়, ঈদগাঁও বাজারস্থ বাশঘাটায় ৫টি, ইসলামাবাদ ইউছুপেরখীল রাস্তার মাথায় ২টি, জালালাবাদের বঙ্কিম বাজারে ৩টি, পুলিশ বিটের পূর্ব পার্শ্বে ২টি, বাজারের ভূমি অফিসের পাশে ১টি, ফরাজী পাড়ায় ৩টি, চৌফলদন্ডীর হায়দর পাড়ায় ১টি, পোকখালীর পূর্ব গোমাতলী ঘাটঘর এলাকায় ১টি, ইসলামপুর বাজারে ২টি, ঈদগাঁও কালির ছড়া মহাসড়কের পার্শ্বে ১টি, কালিরছড়া বাজারের পশ্চিমে ১টি, মাছুয়াখালী ২টি লাইসেন্স বিহীন করাত কল রয়েছে।
সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ৩ কিলোমিটার অভ্যন্তরে কোন প্রকার করাতকল বসানোর নিয়ম না থাকলেও মাছুয়াখালীর ২টি করাত কল সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ২ কিলোমিটার ভিতরে বসানো হয়েছে। এমনকি কয়েকটি স’মিলের বিরুদ্ধে শব্দ দূষণ আইন অমান্য করে ভোর ৬টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।
অথচ সংশ্লিষ্ট আইনে লিখা রয়েছে ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চালু রাখা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ১ কিলোমিটার দূরে স্থাপনের নিয়ম থাকলেও মানা হয়নি এ নির্দেশ। যার ফলে প্রতিনিয়ত শব্দ দূষণে ভূগছে সাধারণ শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সরকারী কর্মকর্তা জানান, পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পূর্ব পাশের্^ লাগোয়া ২টি করাতকলে দিন-রাত ২৪ ঘন্টা কাঠ চেরাই হওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। ৩ বছর যাবত বনবিভাগ কিংবা সংশ্লিষ্টদের কোন ধরণের অভিযান পরিচালিত না হওয়ায় এলাকাবাসীকে ভাবিয়ে তুলেছে। বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, এসব করাত কলের মালিকানায় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি থাকায় সহজে উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না।
সূত্রে জানা যায়, কালিরছড়ায় অবস্থিত ৩টি করাতকলে দেদারছে চিরাই হচ্ছে বনাঞ্চলের কাঠ। এছাড়া কয়েকটি করাত কলের আশপাশ এলাকায় লক্ষাধিক ঘনফুট গাছ মজুদ রয়েছে। স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ীরা জানান, এসব গাছ রাতের অন্ধকারে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঈদগড়, বাইশারী, আলীক্ষ্যং, নাইক্ষ্যংছড়ি খুটাখালী ও ইসলামপুরের গহীন জঙ্গল থেকে অসাধু চোর সিন্ডিকেট দ্বারা সংগ্রহ করে আনা হয়।
স্থানীয় বনদস্যু ও বনবিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ ইন্ধনে করাত কলের মালিকরা রাতের আধারে প্রতিদিন গাছ পাচার করে নিয়ে আসছে। ঈদগাঁও থেকে সামান্য দুরে হওয়ায় বনাঞ্চল থেকে সবচেয়ে বেশি কাঠ চিরাই হচ্ছে এ ঈদগাঁওয়ে।
স্থানীয় রমজান, আবছার, কফিল, ইসলামপুরের জসিম, বেলাল, জালালাবাদের সাইফুল, বাজার এলাকার নারায়ন কান্তি, জাফর, জানান, লাইসেন্স বিহীন করাতকলের কারনে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারালেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন মাথাব্যাথা নেই। করাতকল মালিকদের কাছ থেকে নিয়মিত অনৈতিক সুবিধা আদায় করে তাদেরকে কাঠ উজাড় করতে সহায়তা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরকারী নিয়মানুযায়ী ৩ কিলোমিটারের মধ্যে কোন প্রকার করাতকল বসানোর নিয়ম না থাকলেও মাছুয়াখালীর প্রভাবশালী ব্যক্তির মালিকানাধীন ২টি অবৈধ লাইসেন্স বিহীন করাতকল বসিয়েছে। যার ফলে সরকার লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা হক মাহবুব মোর্শেদের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সংযোগ না পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
অপরদিকে এক রেঞ্জ কর্মকর্তা জানান, করাতকলের বিরুদ্ধে টাক্সফোর্স গঠন করে অভিযান পরিচালনা করার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলেও কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় কিছুই করা সম্ভব হচ্ছে না।
Posted ১২:৩৩ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta