মোসলেহ উদ্দিন,উখিয়া(১৯ ডিসেম্বর) :: মিয়ানমার থেকে পারিয়ে আসা উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। দাতা সংস্থারা তড়িগড়ি করে বসানো নলকূপের মান সম্মত নির্মাণ কাজ না হওয়ায় অধিকাংশ টিউবওয়েল অকেজো হয়ে পড়েছে। ফলে বিভিন্ন ক্যাম্পে দেখা দিয়েছে খাবার পানি সংকট।
ইতিমধ্যে বিভিন্ন এনজিও সংস্থা গভীর নলকূপ স্থাপনের কাজ শুরু করলেও তা দীর্ঘসুত্রাতার কারনে খাবার পানি নিয়ে রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দাতা সংস্থা প্রায় ৮হাজারের অধিক নলকূল স্থাপন করেছে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন জানান, টিউবওয়েল অকেজো ও টিউবওয়েলের মাথা চুরি হয়ে যাওয়ার সত্যতা স্বীকার করেন।
তিনি বলেন, পানিরস্থর গভীরে নেমে পড়ায় কিছু কিছু টিউবওয়েলে পানি পাওয়া যাচ্ছেনা। তবে ভুক্তভোগী রোহিঙ্গারা জানান, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক নির্মিত সবকটি টিউবওয়েল এখন অকেজো হয়ে পড়ে আছে।
কুতুপালং নতুন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সেক্রেটারী হোসেন আহমদ জানান, সরকারি ভাবে যেসব টিউবওয়েল বসানো হয়েছে, ওই সব টিউবওয়েল ৩০মিটার পর্যন্ত গভীরে যাওয়ার কথা শুনেছি, কিন্ত ১০/১৫ মিটার পাইপ দিয়ে টিউবওয়েল বসানো হয়েছে। গভীরতা কম হওয়ার কারনে ৪/৫দিন যেতে না যেতেই টিউবওয়েল গুলো অকেজো হয়ে পড়ে।
সে আরো জানান, এসব টিউবওয়েল গুলো সংস্কার করে দেওয়ার জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীকে অনুনয়,বিনয় করা হলেও তিনি গুরুত্ব দেননি। যার ফলে অকেজো টিউবওয়েলের মাথা গুলো রাতের আধারে কে বা কারা চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে কুতুপালং নতুন ক্যাম্পের লম্বাশিয়া, মধুরছড়া, গুলশান পাহাড়, মদিনা পাহাড় এলাকা ঘুরে সেখানে বসবাসরত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের এলাকায় যেসব টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়েছে সব গুলো টিউবওয়েল পানিশূণ্য হয়ে পড়েছে।
মধূরছড়া ক্যাম্পের রোহিঙ্গা গৃহবধূ হালিমা খাতুন (৩৫) জানান, পানির অভাবে তারা রান্নাবান্না, কাপড়,ছোপড় ধোয়া মাঝার কাজ করতে পাচ্ছেনা। খাবার পানি আনতে হচ্ছে এক কিলোমিটার দুর থেকে।
একই ক্যাম্পের আরেক মহিলা নছিমা খাতুন (৩৯) জানান, তাদের টিউবওয়েল গুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারনে পাশ^বর্তী গ্রামের বাড়ী ঘর থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। তাও আবার স্থানীয় পরিবারের সদস্যদের নানান ধরনের খুচা মারা কথাবার্তা শুনতে হচ্ছে। এভাবে শতশত মহিলার খাবার পানি সংকটের কারণে তাদের দুঃখ, দুর্দশার চিত্র তুলে ধরলেন।
কুতুপালং লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি হামিদ হোসেন মাঝি জানান, ঢালাও ভাবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সুযোগে যেসব ঠিকাদারী সংস্থা টিউবওয়েল বসানো কাজ পেয়েছে তারা মূলত চুক্তিভুক্তিত কাজ না করে টিউবওয়েল স্থাপনের নামে টাকা লুটপাট করেছে। যে কারনে বর্তমানে প্রায় টিউবওয়েল অকেজো হয়েছে পড়েছে। দেখা দিয়ে খাবার পানি সংকট। সে জানায়, সামনে সুষ্ক মৌসুমে পানি সংকট আরো তীব্রতর হতে পারে বলে আশংখা করা হচ্ছে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন উখিয়া-টেকনাফের ১২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২১৯৩টি টিউবওয়েল স্থাপনের কথা স্বীকার করেছে। কতটি টিউবওয়েল অকেজো হয়ে পড়েছে জানতে চাওয়া হলে, তিনি জানান, ১০শতাংশ টিউবওয়েল অকেজো অবস্থায় রয়েছে। তবে ভুক্তভোগী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্থাপন করা ৫০শতাংশ টিউবওয়েলে পানি পাওয়া যাচ্ছেনা।
Posted ৪:০৯ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta