মোসলেহ উদ্দিন,উখিয়া(২৯ নভেম্বর) :: মিয়ানমার সেনাদের দমন নিপীড়নের শিকার হয়ে এদেশে পালিয়ে আসা প্রায় ৭ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা ৫হাজার একর বনভূমি দখল করে আশ্রয় নিয়েছে। বিভিন্ন সরকার-বেসরকারি এনজিও সংস্থা ও দাতা গোষ্টি এসব রোহিঙ্গাদের খাদ্য, বস্ত্র, ওষুধ সহ অন্যান্য কিছু সরবরাহ করলেও রান্নার জন্য জ¦ালানী সরবরাহ করেনি। ফলে রোহিঙ্গারা বন থেকে জ্বালানী সংগ্রহ করায় সামাজিক বরায়ন উজাড় হচ্ছে।
প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা শতশত রোহিঙ্গা রোহিঙ্গা নিকটস্থ বন সম্পদ ও অংশিদারিত্বের ভিত্তিতে গড়ে তোলা সামাজিক বনায়নের মুল্যবান গাছ-গাছালি নির্বিচারে কর্তন করে জ¦ালানী হিসেবে ব্যবহার করছে। উখিয়া সদর ও ইনানী রেঞ্জের আওতাধীন ১৪টি বনবিটের শতাধিক বনকর্মী বনসম্পদ রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত থাকলেও তাঁরা এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ নির্বিকার বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
ইনানী বন রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ ইব্রাহিত হোসেনের সাথে বনসম্পদ রক্ষায় আলাপ করে জানাগেছে, অল্প লোকবল নিয়ে শতশত রোহিঙ্গাদের গাছ কর্তনে বাধা দেওয়া কোন ভাবেই সম্ভব নয়। ইনানী বন সম্পদ ও সামাজিক বনায়নের গাছ-গাছালি রক্ষার্থে বন রক্ষা সহায়ক কমিটির পাহারাদার সদস্যরা রোহিঙ্গাদের বেশ কয়েকবার লাকড়ি সংগ্রহে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে।
এসময় রোহিঙ্গারা তাদের উপর ক্ষেপে গিয়ে হামলা করার চেষ্টা করলে আত্মরক্ষার্থে পাহারা দলের সদস্যরা নির্বিকার অবস্থায় ঘটনাস্থল থেকে চলে আসতে বাধ্য হয়। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন এনজিও সংস্থা কৃত্রিম উপায়ে তৈরী লাকড়ি সরবরাহ করলে সামাজিক বনায়ন ও বনসম্পদ অনেকটা রেহাই পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তা না হলে এসব রোহিঙ্গারা এখানে দীর্ঘস্থায়ী বসবাসের সুযোগে বনসম্পদ ও সামাজিক বনায়ন উজাড় করে ফেলবে রোহিঙ্গারা। এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।
উখিয়া বন রেঞ্জ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম জানান, সদর বন রেঞ্জের অধীনে ৮টি বন বিটের আওতাধীন প্রায় ৫হাজার একর সামাজিক বনায়নের গাছ এখন বন সম্পদে পরিনত হয়েছে। এসব গাছ নিলামে বিক্রি করলে সরকার ও অংশিদারিত্বের ভিত্তিতে বন বাগানের সদস্যরা লাখ লাখ টাকা পাবে। অথচ রোহিঙ্গারা ওই সব মূল্যবান গাছ-গাছালি দিনে রাতে কেটে বস্তি নির্মাণ কাজে ব্যবহার করছে। পাশাপাশি জ¦ালানী হিসেবে পোড়াচ্ছে বিপূল পরিমাণ সামাজিক বনায়নের গাছ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি অভিযোগ করে জানান, রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে বিভিন্ন এনজিও সংস্থা সামাজিক বনায়নের কাঠ সম্পদ উজাড় করছে। এসব কাঠ ব্যবহার করে এনজিও কর্মীরা বিভিন্ন স্থাপনা তৈরী করছে। অথচ বন কর্মীরা ক্যাম্পে এক বারের জন্যও এসব গাছ কিভাবে, কোথা থেকে সংগ্রহ করা হল তার খোঁজ খবর নেয় নি। যার ফলে রোহিঙ্গারা আরো উৎসাহি হয়ে বন সম্পদ কেটে ওই সব গাছ এনজিওদের বিক্রি করে মোটা টাকার আয় করছে।
বুধবার থাইংখালী ঘোনারপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সর্বশেষ সীমান্তে গিয়ে দেখা যায়, একদল রোহিঙ্গা শিশু লাকড়ি সংগ্রহ করে নিয়ে আসছে। তাদের লাকড়ি বোঝা গুলো দেখে বুঝা যায়, সংগৃহীত লাকড়ি সামাজিক বনায়ন থেকে কাটা হয়েছে।
এ কথার সত্যতা স্বীকার করে রোহিঙ্গা শিশু হাকিমুল্লাহ ও মনিরা বেগম জানায়, লাকড়ি না আনলে তারা খাওয়া-দাওয়া করতে পারবেনা। তাই বন থেকে গাছ কেটে লাকড়ি সংগ্রহ করে আনা হচ্ছে। তারা আরো জানায়, তাদের মতো প্রতিটি রোহিঙ্গা পরিবারের কোন না কোন সদস্য বন থেকে প্রতিদিন লাকড়ি সংগ্রহ করছে।
উখিয়া উপজেলা বন রক্ষা সহায়ক কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী জানান, চাল দিয়েতো চাল খাওয়া যায়না। এ গুলো রান্না করতে জ¦ালানীর দরকার। এনজিওদের বুঝা উচিত ছিল রোহিঙ্গাদের ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের পাশাপাশি জ¦ালানী সরবরাহ করা। তা না হলে এদেশের বনসম্পদ রোহিঙ্গাদের দ্বারা ধ্বংস হয়ে যাবে। সামাজিক ও বন অস্থিত্ব সংকটের নেপথ্যে তিনি এনজিওদের দায়ী করে বলেন, অবিলম্বে রোহিঙ্গাদের জ¦ালানী সরবরাহ করা হউক।
Posted ১২:৪৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta