মোসলেহ উদ্দিন,উখিয়া(৭ ডিসেম্বর) :: শুরুতেই এনজিও সংস্থা ব্রাক রোহিঙ্গা সেবার নামে কার্যক্রম শুরু করে পয়োনিষ্কাশনের জন্য যে সমস্ত নিম্নমানের লেট্টিন স্থাপন করেছে ওই সমস্ত ব্যবহার অনুপযোগী লেট্টিন থেকে নির্গত হওয়া দুর্গন্ধে রোহিঙ্গারা পড়েছেন স্বাস্থ্য ঝুকিতে। পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই বিভিন্ন হাসপাতালে মৃত্যু সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
এসব লেট্টিনের পঁচা দুর্গন্ধ বাহিরে ছড়িয়ে পড়ার কারনে স্থানীয়রাও আক্রন্ত হচ্ছে। এ ঘটনা নিয়ে পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিকট একটি অভিযোগ করেছে।
সরজমিন উখিয়ার থাইংখালী তাজনিমারখোলা ঘুরে রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এনজিও সংস্থা ব্রাক ৬ফুট গর্ত করে ১ফুট প্রস্থে একটি রিং দিয়ে তড়িগড়ি করে লেট্টিন স্থাপন করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
ভোক্তভোগী রোহিঙ্গা নাগরিক আয়াতুল্লাহ (৩৫) এনায়াতুল্লাহ (৪০) আজিজুল্লাহ (৩২) সহ একাধিক রোহিঙ্গা নর-নারী অভিযোগ করে জানান ব্রাক নির্মিত লেট্টিনের দুর্গন্ধে ক্যাম্প এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে।
তারা জানান, এসব কাছাকাছি যে সমস্ত টিউবওয়েল স্থাপন করেছে তার গভীরতা ৩৫ থেকে ৪০ ফুট। টিউবওয়েল কম হওয়ার কারণে লেট্টিনের সাথে টিউবওয়েলের পানি সংযুক্ত হয়ে খাবার পানি দুষিত হয়ে পড়েছে।
ফলে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শতশত নারী,পুরুষ,শিশু। রোহিঙ্গা নাগরিক অলি উল্লাহ (৩৯) তার ৩শিশু সহ ক্যাম্পে প্রায় ৫শতাধিক শিশুর পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার নেপথ্যে দায়সারা ভাবে বসানো লেট্টিন গুলোকে দায়ী করছেন।
লেট্টিন নির্মাণ কাজে কর্মরত বেশ কয়েকজন ঠিকাদারের সাথে আলাপ করে জানা যায়, ব্রাক কর্মকর্তার নিকটতম পরিচিত জনদের অর্থের লেনদেন বিনিময়ের মাধ্যমে লেট্টিন ও টিউবওয়েল বসানোর কাজ দেওয়া হয়েছে। যে কারনে ব্রাকের বসানো লেট্টিন গুলো এখন রোহিঙ্গাদের মরণ ফাঁদের পরিনত হয়েছে।
স্থানীয় ঠিকাদার জসিম উদ্দিন জানান, ব্রাকের যে সমস্ত উন্নয়ন কাজ করা হচ্ছে সে গুলো প্রথম দিকে ব্রাক কর্মকর্তা পছন্দের লোকজনদের দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে যে সমস্ত লেট্টিন ও টিউবওয়েল বসানোর কাজ চলছে তা সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করছে ঢাকা অফিস। তাও আবার ইন্টারনেটের মাধ্যমে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন ঠিকাদার জানান, তাদের চাহিদামতো কমিশন চুক্তি ভিত্তিক কাজ দেওয়া হচ্ছে।
থাইংখালী তাজনিমারখোলা ক্যাম্পে দায়িত্বরত এনজিও সংস্থা ব্রাকের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার আলী আজম জানান, প্রথম দিকে ৬ফুট গর্ত করে ১টি রিং ১টি স্লেপ দিয়ে যে সমস্ত লেট্টিন নির্মান করা হয়েছিল ওই সমস্ত লেট্টিন পূনঃ সংস্কারের কাজ চলছে। তার ক্যাম্পে প্রায় দেড় কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হয়েছে।
পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, উন্নয়নের নামে ব্রাক কর্মকর্তারা মোটা অংকের টাকা লুটপাট করেছে। আর তাদের নির্মিত লেট্টিন ও টিউবওয়েলের পানি খেয়ে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় গ্রামবাসিও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট একটি অভিযোগ করা হয়েছে। কোন প্রকার টেন্ডার ছাড়া স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে কাজ ভাগাভাগি করে বরাদ্দকৃত অর্থ লুটপাটের ব্যাপারে জানার জন্য ১২টি রোহিঙ্গা অস্থায়ী ক্যাম্পে উন্নয়ন কর্মকান্ডে দায়িত্ব নিয়োজিত প্রোগাম ম্যানেজার খালেদ মুরশেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি আরেক কর্মকর্তা মাহাবুবের মুঠোফোনের নাম্বার দেন। তার নাম্বারের যোগাযোগ করা হলে তিনি আরো একটি নাম্বার দেন।
ওই নাম্বারে ব্রাকের রোহিঙ্গা মানবিক সংকট ব্যবস্থাপনা কর্মসূচীর প্রধান ইফাত নেওয়াজের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ব্রাকের অনিয়ম,দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি,রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ তথা সুশীল সমাজের লোকজন গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান বলেন, পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরীর অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন। এ ব্যাপারে ব্রাকের কর্মকর্তাদের ঢেকে এনে তাদের নির্মিত অস্বাস্থ্যকর লেট্টিন পুনরায় সংস্কার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
Posted ৮:২৫ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta