কক্সবাংলা রিপোর্ট(২ জুন) :: কক্সবাজারের টেকনাফে বন্দুকযুদ্ধে পৌর কাউন্সিলর একরামুল হক মারা যাওয়ার আগে সন্তান ও স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলার অডিও টেপ নিয়ে সামাজিক গণমাধ্যমে ঝড় বইছে। এর মধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষ থেকে স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে ভুল পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে কথা বলেছেন সড়ক ও পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আরও সতর্কতার সঙ্গে এই অভিযান চালানো উচিত। কোনোভাবেই মাদকবিরোধী এই অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না। কারণ মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর পর সাধারণ মানুষ স্বাগত জানিয়েছিল। তাই কোনো মহল যাতে সুযোগ না নিতে পারে সেজন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আরও অধিকতর সতর্ক হতে হবে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বিকালে বলেন, এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বক্তব্য দিয়েছেন। উনার বক্তব্যের পর আর আমার কোনো বক্তব্য হয় না।
জানা গেছে, কথোপকথনের অডিও টেপটিও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। পুরো কথোপকথনও তারা দফায় দফায় শুনছেন। একই সঙ্গে কেউ যাতে এর অপব্যবহার না করতে পারে সেদিকেও দৃষ্টি রাখছেন তারা। এই কথোপকথনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসার পর একাধিক সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিজেদের মধ্যে বৈঠকও করেছেন।
কথোপকথনে যা আছে :
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হওয়া ১৪ মিনিট ২২ সেকেন্ডের ওই কথোপকথনের অডিও ক্লিপটি চারটি কথপোকথন মিলিয়ে একসঙ্গে রেকর্ড করা হয়েছে। অডিও রেকর্ডটি শুনে বোঝা যায়, একপ্রান্তে কম বয়সী এক মেয়ে ও অপর প্রান্তে তার বাবার মধ্যকার কথোপকথন। সর্বশেষ এই প্রান্তে যুক্ত হন মেয়েটির মা।
অডিওতে একপ্রান্ত থেকে একটি মেয়ে তার বাবাকে ফোন করে জানতে চাইছেন, তিনি কোথায় আছেন। উত্তরে বাবা বলেন, ‘মেজর সাহেব’ ডাকছিলেন, ওখান থেকে তিনি টিএনও (ইউএনও) অফিসের দিকে যাচ্ছেন। এটা তার আম্মুকে জানানোর জন্য। আসতে দেরি হবে কি না? মেয়ের এমন প্রশ্নের জবাবে বাবার উত্তর ছিল, খুব বেশি দেরি হবে না। এর পরপরই লাইন কেটে যায়। পরের কলটিতে আবার মেয়ের প্রশ্ন ছিল, তার (বাবা) অবস্থান কোথায়? উত্তরে অপর প্রান্ত থেকে উত্তর ছিল, তিনি টিএনও অফিসের দিকে যাচ্ছেন। বাসায় ফিরতে মিনিট বিশেক লাগবে না…চলে আসব ইনশা আল্লাহ। ঘুমানোর পরামর্শও দেন মেয়েকে। পরবর্তী আরেকটি কলের শুরুতে একপ্রান্ত থেকে বাবার (মেয়েটির) অবস্থান জিজ্ঞেস করা হলে উত্তর ছিল, তিনি হ্নীলা যাচ্ছেন জরুরি কাজে। ফিরতে খুব বেশি দেরি হবে না। যেতে হচ্ছে তাই। মেয়ে তখন জানতে চায়, তার বাবা কেন কাঁদছে। এই অবস্থায় ফোন নেন আরেকজন। তিনি হ্যালো, হ্যালো করতে করতেই ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
সর্বশেষ ফোন কলটি রিসিভের পর এ প্রান্ত হতে আমি উনার মিসেস বলতেছি, হ্যালো, হ্যালো, আমি কমিশনারের সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছি। এমন সময় ফোনের অপর পাশে কাউকে বলতে শোনা যায় ‘তুমি যেটা বলছ, জড়িত না? কেউ একজন বলেন, নাহ। এরপর আগ্নেয়াস্ত্র কক করার শব্দ এবং দুটি গুলির শব্দ শোনা যায়। সেই সঙ্গে মরণাপন্ন কারও চিৎকার। ওই আওয়াজে এ প্রান্তে চিৎকার করে কেঁদে ওঠেন অনেকেই… একজন বলতে থাকেন, ও আল্লাহ আমার জামাই কিছু করে নাই। আমার জামাই কিছু করে নাই। আমরা বিনা দোষী…।’
মহৎ কাজে দু-একটি ভুল হয় :
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কোনো মহৎ কাজ করতে গেলে দু-একটি ভুল হতেই পারে। সে ভুলের জন্য যারা দায়ী তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা মহানগরীতে নারীদের জন্য দোলনচাঁপা বাস উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, মাদকবিরোধী অভিযানে টেকনাফের যুবলীগ নেতা ও পৌর কাউন্সিলর একরামুল হক নিহত হওয়ার ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মাদকবিরোধী অভিযানে নিরীহ কেউ যদি ভিকটিম হয় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একরামুল হক নিরপরাধ হলে দোষীদের আইনের আওতায় এনে বিচার করা হবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, একরাম আমাদের পার্টির একজন কর্মী, এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একটা বক্তব্য দিয়েছেন। এরপর আমার মনে হয় কিছু বলা উচিত নয়। এ ছাড়া তথ্য-প্রমাণ ছাড়া একরামুল যে নির্দোষ, সে বিষয় নিয়ে আমি কিছু বল?তে পারছি না। কিন্তু যে-ই অপরাধী হোক না কেন, সরকার কাউকে ছাড় দেবে না।
ম্যাজিস্ট্র্রেট তদন্ত করবেন :
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, কক্সবাজারের টেকনাফে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ওয়ার্ড কাউন্সিলর একরামুল হকের পরিবারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করা হয়নি। ওই অডিও রেকর্ড আমাদের কাছে কেউ দেয়নি। তারপরও অডিও রেকর্ডটি শুনেছি। একরামের ঘটনাটি একজন ম্যাজিস্ট্রেট তদন্ত করবে। কেউ প্রলুব্ধ হয়ে কোনো কিছু করছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। তদন্ত শেষে ওই ম্যাজিস্ট্রেট যে রিপোর্ট দেবেন তার ভিত্তিতেই জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজধানীতে নিজ বাসভবনে নিহত একরামুল প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি এসব বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। যদি কেউ অন্যায় কাজ করে থাকে কিংবা প্রলুব্ধ হয়ে বা স্বপ্রণোদিত হয়ে অথবা উদ্দেশ্যমূলকভাবে কিছু করে থাকে, তাহলে তার বিচার হবে। অন্যায় করলে আমাদের প্রধানমন্ত্রী কাউকে ছাড় দেন না। সেটাও আপনারা দেখেছেন।
আসাদুজ্জামান খান আরও বলেন, মাদকবিরোধী অভিযান শুধু মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরই করে না, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও ওই তালিকা করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনছে। যারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ডাকে সাড়া দিচ্ছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। যারা নির্দোষ তাদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। শুধু অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
Posted ৩:০৯ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০৩ জুন ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta