রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

ঐক্যে গরমিল

বুধবার, ০৩ অক্টোবর ২০১৮
340 ভিউ
ঐক্যে গরমিল

কক্সবাংলা ডটকম(২ অক্টোবর) :: মুখে ঐক্যের তাগিদ দিলেও বাস্তবে নিজস্ব কৌশলেই চলছে বিএনপি। ড. কামালের ঐক্য প্রক্রিয়া ও বি. চৌধুরীর যুক্তফ্রন্টকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথের সহযোগী হিসেবে চাইলেও একমঞ্চে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি পালনে আগ্রহী নয় দলটি। কথিত ‘জাতীয় ঐক্য’ প্রক্রিয়াকে মূলত সরকারকে চাপে রাখার কৌশল হিসেবে নিয়েছে দলটি।

আসন্ন নির্বাচন ও নির্বাচন পরবর্তী সময় পর্যন্ত এই ঐক্যকে টেনে নেয়ারও কোনো ইচ্ছা নাই তাদের। অন্যদিকে, বিএনপির সঙ্গে ঐক্যের আলোচনায় থাকা দলগুলোও আছে নিজেদের তালে। তারাও সম্ভাব্য ঐক্যে লাভক্ষতির হিসাব কষছে।

এই ঐক্যের মাধ্যমে আদৌ কোনো অর্জন হবে কিনা তা খতিয়ে দেখছে ছোট ছোট দলগুলো। বিএনপিসহ সংশ্লিষ্ট দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন মনোভাবই পাওয়া গেছে।

বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জামায়াত প্রশ্নে বি. চৌধুরীর ঘোর আপত্তি রয়েছে। ড. কামালও এ বিষয়ে দ্বিধান্বিত। অন্যদিকে জামায়াতসহ ২০ দলের অর্ধেক শরিকই কামাল-বি. চৌধরীর সঙ্গে বিএনপির ঐক্য নিয়ে নাখোশ। এ ছাড়া আসন সমঝোতা ও পদ-পদবির দর কষাকষিতেও বিব্রত বিএনপি।

বিএনপি নেতারা মনে করেন, ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে অতীতে ড. কামালের ইতিহাস খুব একটা সন্তোষজনক নয়। সামগ্রিক বিবেচনায় জাতীয় ঐক্যের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে বিএনপি। তবে ঐক্য না হওয়ার দায়ও নিজেদের ঘাড়ে নিতে চান না দলটির নীতিনির্ধারকরা।

এ কারণে প্রকাশ্যে জোরালোভাবে ঐক্যের কথা বললেও বাস্তবে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি দলের পক্ষ থেকে। দলটির এক নেতা জানান, কামাল-বি. চৌধুরীর সঙ্গে একমঞ্চে আন্দোলন ও নির্বাচনের ঐক্য বাস্তবসম্মত নয়। কারণ তাদের এজেন্ডা ও বিএনপির এজেন্ডা এক নয়।

বরং নির্বাচন সামনে রেখে সরকারকে চাপে রাখার জন্য ‘নির্বাচনকালীন সরকার, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ‘কমন ইস্যুতে’ ক্ষমতাসীন জোটের বাইরে থাকা দলগুলো পৃথক মঞ্চ থেকে যুগপথ কর্মসূচি পালন করলে ভালো হবে। তা না হলে ঐক্যের ব্যাপারে ধীরে চলো নীতিতে চলবে বিএনপি।

ঐক্য প্রক্রিয়ার সার্বিক বিষয় নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ঐক্যপ্রক্রিয়ার চূড়ান্ত রূপ নিয়ে এখনো কথা বলার সময় আসেনি। আমাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। কারণ, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিক যাত্রা এখনো শুরু হয়নি। এটিকে সাংগঠনিক রূপ দিতে সময় লাগবে।

সবে তো আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে আমরা যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। কারণ, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ও আমাদের দাবি-দাওয়া প্রায় একই। তাই আলাদাভাবে কর্মসূচি পালন করলেও খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

সূত্র জানায়, জোট নিয়ে বিএনপির প্রত্যাশা ফিকে হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ বি. চৌধুরী। সম্প্রতি তার কিছু কার্যক্রমে ঐক্য-জোটে ঘোর সন্দেহ ও অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়। সেই সন্দেহের চক্রে ঘুরপাক খাচ্ছে বিএনপির আন্দোলন ও নির্বাচনী ছক। গুলশান কার্যালয়ে বিএনপি নেতাদের নিয়মিত বৈঠকে উঠে আসছে এই বিষয়গুলো।

দলটির শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, জামায়াত ইস্যুসহ বি. চৌধুরীর ব্যক্তিগত ও দলীয় চাওয়া-পাওয়াকে কেন্দ্র করে শেষ পর্যন্ত বৃহত্তর এই রাজনৈতিক জোটে বড় ধরনের ধাক্কা লাগতে পারে। কারণ, বি. চৌধুরীর দল বিকল্পধারা সরকারবিরোধী জোটের পাশাপাশি সরকারি জোটের সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে বলে বিএনপির কাছে তথ্য আছে।

তাছাড়া জামায়াত ইস্যুতে বি. চৌধুরীর ছেলে মাহী বি. চৌধুরী টেলিভিশনের টকশোগুলোতে রীতিমতো বিএনপি নেতাদের তুলোধুনো করছেন। যা দলটির নেতাদের চরমভাবে বিব্রত করছে। তবে সমালোচনা যতই হোক না কেনো ১৯ বছরের পুরনো মিত্র জামায়াতকে ছাড়বে না বিএনপি। দলের নেতারা মনে করছেন, রাজপথের শক্তি ও ভোটের হিসাবে জামায়াত আগামীদিনের নির্ভরযোগ্য জোটসঙ্গী।

বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের শরিক অলি আহমদ মনে করেন, বিকল্পধারা যেসব শর্ত বিএনপিকে দিচ্ছে, তাতে জাতীয় ঐক্যে বিএনপিকে না রাখার ইঙ্গিত। বি. চৌধুরী যখন বিএনপিতে ছিলেন, তখন জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির ঐক্য ছিল।

বিএনপি-জামায়াত একসঙ্গে চলেছে। আর এখন বি. চৌধুরীর দল ঐক্যের জন্য জামায়াতবিরোধিতার যে কথা বলছে, তা মূলত বিএনপিকে দূরে রাখার কৌশল। তিনি বলেন, বি. চৌধুরীর ছেলে মাহী বি. চৌধুরী ভিওআইপির ব্যবসা করেন। এই ব্যবসা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগই দিয়েছে।

এক বছরের বেশি সময় পরে গত রোববার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করেছে বিএনপি। সেই জনসভায় জামায়াত ইসলামীসহ ২০ দলীয় জোটের শরিক নেতাসহ যুক্তফ্রন্ট ও বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ার শরিক নেতাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। অত্যন্ত কৌশলগতভাবে দলীয় ব্যানারে এ জনসভা বেশ ভালোভাবেই সফল করেছে বিএনপি। দলটির পক্ষ থেকে ২০ দল ও জোটের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি এমনটা বলা হলেও জোটের পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করা হয়েছে।

একই দিন রাজধানীর বনানী চেয়ারম্যানবাড়ি মাঠে বিকল্পধারা বাংলাদেশ-এর সহযোগী সংগঠন প্রজন্ম বাংলাদেশের উদ্যোগে ছাত্র-যুব সমাবেশ ও স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচিতে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বি. চৌধুরী বেশ ক্ষোভের সঙ্গেই বলেন, বিএনপির সমাবেশে তাদের দাওয়াত দেয়া তো দূরের কথা এ বিষয়ে কোনো আলাপই হয়নি।

ঐক্য নিয়ে মাহী বি. চৌধুরী বলেন, জাতীয় ঐক্যে তো আমরা আগে থেকেই আছি, এখনো আছি। প্রশ্ন হলো, বিএনপি কত দূর এগিয়ে? আমরা তো বৃহত্তর ঐক্যে তাদের চাই। বিএনপিকে আমরা শর্ত দিয়েছি জামায়াতে ইসলামীকে ছেড়ে জোটে আসতে হবে। কিন্তু বিএনপি বলছে, তারা এককভাবে জাতীয় ঐক্যে আসবে।

আলাদাভাবে নেতৃত্ব দেবে ২০ দলীয় জোটের। সেখানে তো জামায়াত আছে। তার মানে, আমরা কি পরোক্ষভাবে জামায়াতের সঙ্গে ঐক্য করব? সেটা তো হবে না। দুই নৌকায় পা দিলে বিপদে তারাই পড়বেন।

জানা গেছে, নানা কারণে বিএনপির পাশাপাশি ড. কামালের ঐক্যপ্রক্রিয়া এবং বি. চৌধুরীর যুক্তফ্রন্টও কষছে ভিন্ন হিসাব। লাভ-ক্ষতির হিসাবে তারাও পিছিয়ে নেই। বিএনপির নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার বিষয়টিও বেশ ভাবিয়ে তুলেছে তাদের। তাদের মতে, বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ না নেয় তাহলে তাদের সঙ্গে ঐক্যজোট করে লাভ নেই। কারণ বড় বড় পদ চান ছোট ছোট দলের এই নেতারা।

সেক্ষেত্রে অযথা আন্দেলনের জোটে থেকে লাভ নেই। সেই কারণে কর্মসূচি দেয়ার বিষয়েও তারা বিএনপির সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। সামনে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বিএনপির শক্তি সামর্থ্য পরীক্ষা করেই বৃহত্তর ঐক্যকে কাক্সিক্ষত আকার দেয়ার বিষয়ে মত তাদের। সেক্ষেত্রে চলতি অক্টোবর মাসটাকে টেস্টকেস হিসেবে দেখবেন জোটের নেতারা।

বিএনপি মনে করে, নির্বাচনের আগে আগে বিভিন্ন দল ও জোটে আরো অনেক ভাঙাগড়া হবে। কোন দল বা জোট ক্ষমতায় যাবে, তার পূর্বাভাস বেশ কিছু দলের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করে দেবে। বিকল্পধারাকে বিএনপি সেই গোত্রীয় দল বলেই মনে করে। এলডিপির ক্ষেত্রেও বিএনপি নেতাদের একই মত। দলটি বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সদস্য।

কিন্তু খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর থেকে এলডিপির প্রধান অলি আহমেদ জোটের কোনো বৈঠকে অংশ নেননি। সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে অলি আহমেদ ২০ দলীয় জোটে নেতৃত্ব দেয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। কিন্তু বিএনপির তাতে আগ্রহ দেখায়নি। শেষ পর্যন্ত এই দলও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে থাকবে কি না সন্দেহ।

ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গত ২২ সেপ্টেম্বর সমাবেশের মাধ্যমে বৃহত্তর সরকারবিরোধী জোটের যাত্রা শুরু হয়েছে। সেখানে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনের আহ্বান জানানো হয়। সমাবেশে ড. কামাল বলেছেন, বৃহত্তর ঐক্যের মধ্য দিয়ে জনগণের ভোট, মানবাধিকার ও সাংবিধানিক অধিকার আদায় করবেন।

বি. চৌধুরী সরকারের পতন চেয়েছেন, গণতন্ত্র চেয়েছেন এবং সব রাজবন্দির মুক্তি চেয়েছেন। কিন্তু আলাদা করে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার নাম মুখে নেননি।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দুঃসময়ে মুক্তির পথ দেখিয়েছেন ড. কামাল। তবে শেষ পর্যন্ত জোটের এই ত্রিশূল একবিন্দুতে মিলবে কিনা- সেটাই আগামী দিনের রাজনীতির হাওয়া-বাতাস নির্ধারণ করে দেবে।

340 ভিউ

Posted ২:৩৩ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০৩ অক্টোবর ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com