কক্সবাংলা ডটকম(৯ ডিসেম্বর) :: ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টে ইমানুয়েল মেক্রোনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক এবং জলবায়ুবিষয়ক ‘ওয়ান প্ল্যানেট সামিটে’ অংশ নিতে আসছে ১১ ডিসেম্বর ফ্রান্সের প্যারিস সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে ফ্রান্স প্রেসিডেন্টসহ অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন তিনি। সফর উপলক্ষে গভীর উচ্ছ্বাস জানিয়েছেন ফ্রান্স প্রবাসী বাংলাদেশীরা।
দীর্ঘদিন পর প্রধানমন্ত্রীকে কাছ থেকে দেখার পাশাপাশি সফরে প্রবাসীদের কল্যাণে তাঁর ভূমিকা তুলে ধরবেন বলে প্রত্যাশা প্রবাসীদের। ফ্রান্সে বাংলাদেশীদের দীর্ঘ দিনের দাবি, বাংলাদেশী প্রবাসীদের মরদেহ সম্পূর্ণ সরকারি খরচে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা।
প্রবাসী বাংলাদেশীদের মরদেহ সরকারি খরচে দেশে পাঠানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবগতি করা হবে বলে জানান ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূত।
ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেন বলেন ‘ফ্রান্স প্রবাসীদের অন্যতম একটি দাবি হচ্ছে সরকারি খরচে মরদেহ বাংলাদেশে পাঠানো। বাংলাদেশ কর্মিদের সরকারি খরচে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা রয়েছে। কর্মি হিসেবে যারা বিএমইটি’র ছাড়পত্র নিয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য।’ প্রবাসীরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট তাদের দাবি তুলে ধরবেন বলেও জানান রাষ্ট্রদূত। রাষ্ট্রদূত আশা করেন, প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের এ দাবির বিষয়ে একটি পরিকল্পনা গৃহীত হবে।
এ বিষয়ে কমিউনিটি নেতা মিজান চৌধুরী মিন্টু অভিযোগ করেন, ‘প্রবাসী বাংলাদেশীদের মরদেহ সরকারি খরচে দেশে পাঠানোর দীর্ঘ দিনের দাবি কোনো সরকারই পূরণ করেননি। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট সবিনয় আবেদন তিনি যেন ফ্রান্স বাংলাদেশী প্রবাসীদের আবেদন কার্যকর করেন।’
নারী উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে প্রবাসী নারী ফাতেমা খাতুন মরিয়ম জানান, ‘দীর্ঘ দিন পর শেখ হাসিনা ফ্রান্সে আসছেন। আমরা অনেক খুশি। আমার দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন তাঁকে কাছ থেকে দেখার। দেশের নারীদের উন্নয়নে তিনি অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। আশা করবো ফ্রান্সের প্রবাসী নারীদের উন্নয়নেও তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন।’
এদিকে ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেন আরও জানান, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মেক্রোনের আমন্ত্রণে ‘ওয়ান প্ল্যানেট সামিটে’ অংশ নিতে ১১-১৩ ডিসেম্বর প্যারিসে আসছেন। এসময় জলবায়ুবিষয়ক পরিবর্তন ইস্যুতে তিনি অংশগ্রহণ করবেন। জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশে চরম প্রভাব ফেলছে, যেটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরবেন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দেশীয় পর্যায়ে কিভাবে অ্যাডজাস্ট করা যায় এবং যে পদক্ষেপগুলো সরকারিভাবে নেয়া হয়েছে সেগুলোও তিনি উল্লেখ করবেন।’
এছাড়া রোহিঙ্গা ইস্যুতে রাষ্ট্রদূত বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর যে নির্যাতন হয়েছে তা আগে কখনও ঘটেনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মানবিকভাবে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।’ তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।
এমনি মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ রাখতে, আন্তর্জাতিক মহলকে ওয়াকিবহাল রাখতে আমাদের প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। ইউনিয়ন থার্ড কমিটিতে একটি রেজুলেশন গৃহীত হয়েছে। এর পাশাপাশি মানবাধিকার কাউন্সিলে আরেকটি রেজুলেশন গৃহীত হয়েছে।’
এ সফরে অন্যতম অংশ জুড়ে থাকবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সাক্ষাত এবং একটি গণসংবর্ধনায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অংশ নিবেন, জানান রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন প্রবাসীদের সম্পর্কে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য খুবই স্পষ্ট। দেশের ১৬ কোটি জনগণের পাশাপাশি দেশের বাইরে যে এক কোটি বাংলাদেশি আছেন তাদের পাশে তিনি সকল সময় দাঁড়িয়েছেন, তাদের ভালমন্দের খোঁজ খবর রেখেছেন।
রাষ্ট্রদূতদের সম্মেলনে তিনি সুস্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, প্রবাসীদের কল্যাণ ও স্বার্থে রাষ্ট্রদূতের দূতাবাস যেন সকল সময় সচেষ্ট থাকে। ফ্রান্সের প্রবাসীরা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে অবদান রাখছেন তা বাংলাদেশ সরকার সজাগ দৃষ্টি রাখছেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।’
এদিকে ব্যবসা ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে প্রধানমন্ত্রীর এ সফর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন ফ্রান্সের বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা।
চেম্বার ইকোনোমিক ফ্রান্সের সভাপতি কাজী এনায়েতুল্লাহ বলেন, ‘ফ্রান্স ও ইউরোপের সঙ্গে যে ব্যবসা বাণিজ্য রয়েছে তা আরো সমৃদ্ধ করা সম্ভব। বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা থাকলে আমরা ফ্রান্স ও ইউরোপের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আরো অবদান রাখতে পারবো। এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বাংলাদেশের ইকোনোমিক প্রসেসিংয়ে যারা আছেন তারা যেন আমাদের সঙ্গে নিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করেন।’
বাণিজ্য প্রসঙ্গে ফ্রান্সকে বাংলাদেশের অত্যন্ত বন্ধুপ্রতিম উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেন জানান, বাংলাদেশ প্রায় দু’শো মিলিয়ন ডলারের অধিক রপ্তানি করে। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পঞ্চম রপ্তানি ক্ষেত্র হচ্ছে ফ্রান্স। সে বিবেচনায় ফ্রান্সের সঙ্গে বাংলাদেশের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। দু’দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো সুদৃঢ়, প্রসারিত এবং এর পাশাপাশি ফ্রান্স বাংলাদেশে বড় বিনিয়োগকারী হিসেবে ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা করেন।এ সফরকালে প্রবাসী বাংলাদেশীদের গনসংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রীর যোগ দেবার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ বিষয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে বলে ফ্রান্স আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন জানান, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার ফ্রান্স সফর উপলক্ষে আমরা ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও আওয়ামীলীগ নেত্রীকে বরণ করার জন্য ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি শেষ করেছি। আগামী নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা জানতে আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।’
সবশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালে ফ্রান্স সফর করেছিলেন। তাই দীর্ঘ দিন পর তাঁর ফ্রান্স সফরে প্রবাসীরা একদিকে যেমন উচ্ছ্বসিত; তেমন আরেক দিকে তাদের আশা, সরকারি খরচে মরদেহ দেশে ফেরতের দীর্ঘ দিনের দাবি এবার পূরণ হবে।
Posted ৮:১৯ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta