মোসলেহ উদ্দিন,উখিয়া(৭ ডিসেম্বর) :: কক্সবাজারের উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে সরকারি-বেসরকারি ও দাতা সংস্থা প্রদত্ত ত্রাণ সামগ্রী। চাহিদার তুলনায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ অতিরিক্ত হওয়ার কারনে রোহিঙ্গারা বেশির ভাগ ত্রাণ সামগ্রী খোলা বাজারে বিক্রি করে নগদ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
এতে একদিকে যেমন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের আত্মসামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে। ফলে এসব রোহিঙ্গারা উন্নত জীবন-যাপনের লক্ষ্যে ক্যাম্প ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে বলে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে প্রায় ৩শ বস্তা ত্রাণের চাল উদ্ধার করেছে।
উখিয়ার কুতুপালং অস্থায়ী ক্যাম্প-১ ও ২, বালুখালী-১ ও ২, থাইংখালী হাকিমপাড়া, তাজনিমারখোলা, ময়নারঘোনা,শফিউল্লাহকাটা,জামতলি ঘুরে দেখা যায়, ক্যাম্প অভ্যান্তরে বসানো হয়েছে মৌসুমী হাটবাজার। এসব হাটবাজারে নিত্যপণ্য ছাড়াও রোহিঙ্গাদের মাঝে বিতরণ করা চাল,ডাল,তেল,দুধ,কম্বল, খাদ্য সামগ্রী ও শীত বস্ত্র বিক্রি হচ্ছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী নজির আহমদ,সুলতান আহমদ,শামসুল আলম সহ একাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জানান, তারা খুচরা বিভিন্ন নিত্যপণ্য বিক্রির মাধ্যমে পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবন ধারণ করে আসছিল। ইতিমধ্যে রোহিঙ্গারা সরকারি-বেসরকারি ভাবে প্রাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী খোলা বাজারে কম মূল্যে বিক্রি করার কারনে তাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
ফলিয়াপাড়া গ্রামের প্রত্যক্ষদর্শী নাজির হোসেন, ছৈয়দ আকবর সহ বেশ কয়েকজন গ্রামবাসি জানান, শতশত রোহিঙ্গা ত্রাণ সামগ্রী বিক্রির জন্য বিভিন্ন লোকালয়ে চলে যাচ্ছে। এমনকি রোহিঙ্গারা বাড়ী বাড়ী গিয়ে চাল,ডাল,তেল বিক্রি করছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিত্তিক মৌসুমী হাটবাজার গড়ে উঠার কারনে প্রাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী রোহিঙ্গা বিক্রি করার সুযোগ পাচ্ছে বলে অভিযোগ করে কুতুপালংয়ের আওয়ামীলীগ নেতা নুরুল হক খান জানান, ত্রাণ বিক্রি মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের হাতেকড়ি হচ্ছে। এভাবে তারা আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল হয়ে উঠার কারনে শতশত রোহিঙ্গা পরিবার-পরিজন নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে উন্নত জীবন যাপনের লক্ষ্যে চলে যাচ্ছে।
ক্যাম্প ছেড়ে বিভিন্ন এলাকায় স্বপরিবারে চলে যাওয়ার সময় পুলিশ,বিজিবি সদস্যরা এ পর্যন্ত ২শতাধিক রোহিঙ্গা পরিবারকে আটক করে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল খায়ের জানান, তারা ত্রাণ বিক্রির টাকা নিয়ে স্বজনদের কাছে আশ্রয়ের জন্য চলে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছে।
প্রতিদিন সন্ধ্যায় সদর হাটবাজারে রোহিঙ্গারা শীত বস্ত্র,চাল,ডাল,তেল বিক্রি করতে দেখা গেছে। এসময় কুতুপালং ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গা নাগরিক আলি হোসেনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তেল,ডাল,চাল কেন বিক্রি করা হচ্ছে। ওই রোহিঙ্গা নাগরিক জানায় তারা ৫সদস্যের একটি পরিবারের জন্য চাহিদার তুলনায় বেশি পরিমান ত্রাণ সামগ্রী পাচ্ছে। প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী রেখে বাকী ত্রাণ সামগ্রী বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী জানান, রোহিঙ্গাদের প্রকাশ্য, গোপনে বিভিন্ন দাতা সংস্থা যে ভাবে ত্রাণ সামগ্রী ও টাকা দিচ্ছে এতে রোহিঙ্গারা স্বাভলম্বী হচ্ছে। যার ফলে রোহিঙ্গাদের অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে ক্যাম্প ছেড়ে অন্যত্রে চলে যাচ্ছে। তিনি ত্রাণ বিতরণে আরো কঠোর ও সীমাবদ্ধতার প্রয়োজন বলে দাবী করেন।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান জানান, গোপনে ত্রাণের চাল বাইরে বিক্রিকালে বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে ৩শ বস্তা চাল উদ্ধার করে সংশ্লিষ্টদের ভ্রাম্যামান আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ত্রাণ সামগ্রী রোহিঙ্গারা যাতে বাইরে বিক্রি করতে না পারে সে জন্য সেনাবাহিনী, বিজিবি,পুলিশ কাজ করছে। এছাড়াও চেকপোষ্টে নিয়মিত তল্লাশী চালানো হচ্ছে।
Posted ৮:৪৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta