মোসলেহ উদ্দিন, উখিয়া(১৬ অক্টোবর) :: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সবার গল্প যেন একই। কষ্ট, দুভোর্গ, ক্ষুধা, আতংক আর নির্যাতনে স্বজনহারাদের আর্তি মুখেমুখে।সোমবার ভোর রাত থেকে এক দিনে কক্সবাজারের উখিয়ার সীমান্তের নাফনদী পেরিয়ে আনজিমানপাড়া দিয়ে এসব রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিচ্ছে বিভিন্ন শিবিরে।
প্রত্যক্ষদর্শীর সুত্রমতে, সোমবার একদিনে এসেছে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক রোহিঙ্গা। তাদেরকে বর্মী ভাষায় বাঙগালী লিখা কার্ড নিতে জোর জবরদস্থি করা হচ্ছে।
অন্যথায় মেরে ফেলার হুমকি প্রদর্শনের মত হিংসাত্মক আচরণে বুচদিং এর ১৪টি গ্রামে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। যে কারণে রোহিঙ্গারা দলে দলে এপারে চলে আসতে বাধ্য হচ্ছে। কথাগুলো বলেন বুচিদং নয়ংশপাড়া গ্রামের মাদ্রাসা শিক্ষক হাফেজ ফয়েজ উল্লাহ(৪৮)।
হাফেজ ফয়েজ আরো জানায়, সে নয়ংশপাড়া হাফেজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষকতা করতেন। কয়েকদিন থেকে বর্মী সেনা ও রাখাইন যুবকেরা মাদ্রাসাটি দখল করে তারা সেখানে সেখানে ক্যাম্প করেছে। ওই ক্যাম্পে রোহিঙ্গা লোকজনদের ডেকে এনে বর্মী ভাষায় বাঙালী লেখা কার্ড নেওয়ার জন্য জোর জবরদস্থি করছে।
সামরিক জান্তার নয়া কৌশল অনুমান করতে পেরে শিক্ষিত রোহিঙ্গারা এসব কার্ড গ্রহণ করেনি। ক্ষিপ্ত হয়ে বর্মী জান্তারা গ্রামে গ্রামে গিয়ে গর,ু ছাগল, হাস, মুরগী, ধান চাল লুট করছে। বুচিদং মুরাপাড়া গ্রাম থেকে পালিয়ে এসে আনজিমানপাড়া বেড়ীবাধেঁ ৯ সদস্যের পরিবার নিয়ে বসে আছেন মো. মিয়া (৫৮)।
সে জানায়, মিয়ানমার সেনারা এবার শারিরিকভাবে নির্যাতন করছেনা। তবে বাড়ীঘরের মালামাল লুটপাট করছে। বিতরণ করছে সাদা কার্ড। কার্ড নিতে অপাগতা প্রকাশ করলে তাদের হাতে থাকা বন্দুক থাক করে রাতারাতি দেশ ত্যাগ করার নির্দেশ দিচ্ছে।
ভয়, আতংক ছড়িয়ে পড়ার কারণে বুচিদংয়ের বাপিডিপো, নাইছাদং, চিংদং, লাউয়াদং, নয়াপাড়া, চান্দেরবিল, লম্বাবিল,জংমং ও প্রংফোপাড়া সহ ১৪টি গ্রামের প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ ৬দিন ডাহাড় জঙ্গল, খাল ছড়া পেরিয়ে সোমবার ভোররাতে নাফনদীর এপারে চলে এসেছে।
চান্দেরবিল আবদুল আমিন (৩৫) জানায়, তারা সকলেই মিয়ানমারের ফাতিয়ারপাড়া ঢালা নামক স্থানে জড়ো হয় বুধবারে। সেখানে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার পর্যন্ত তারা অবস্থান নেয় পথিমধ্যে ফেলে আসা স্বজনদের জন্য। শনিবার ভোর রাতে মিয়ানমার সেনা ও স্বশস্ত্র রাখাইন যুবকেরা তাদের অবস্থান লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করে।
এসময় দিকবেদিক ছুটাছুটি করে পালাতে গিয়ে ৫০ জনের মত বয়োবৃদ্ধ নারী পুরুষ গুরুতর আহত হয়েছে। তারা বেঁচে আছে কিনা জানা নেই। সে আরো শতাধিক শিশু গর্ভবতি মহিলা নিখোজ রয়েছে দাবী করেন। এ করুণ কাহিনী বলার সময় তার দু’চোখ বেয়ে পানি পড়তে দেখা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শি পালংখালী ইউনিয়ন আওয়ামিলীগের সভাপতি এমএ মনজুর ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলী আহমদ, পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চেীধুরী সোমবার ভোর রাত তেকে দুপুর পর্যন্ত নতুন রোহিঙ্গা প্রবেশের সত্যতা স্বীকার করলেও তার সংখ্যা কত হবে জানাতে পরেনি।
তবে প্রত্যক্ষদর্শি গ্রামবাসি বলেন সোমবার ১ দিনে অর্ধলক্ষাধিক রোহিঙ্গা প্রবেশ করে বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে।
Posted ৫:১৮ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৬ অক্টোবর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta