কক্সবাংলা রিপোর্ট(২৬ মে) :: বাংলাদেশের কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত না নিলেও গডফাদারসহ শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের নিরাপদ আশ্রয়ে রেখেছে মিয়ানমার।
গত ৪ মে সারাদেশে মাদক নির্মূল অভিযান শুরু হওয়ার পর টেকনাফের নাফ নদী দিয়ে এসব শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী মিয়ানমারে পালিয়ে গেছেন। মিয়ানমারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মাদক ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের মাদক ব্যবসায়ীদের জামাই আদরে রাখছেন।
এছাড়া টেকনাফের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী সেকেন্ড হোম গড়ে তুলেছে মালয়েশিয়া, দুবাই ও সৌদি আরবে। সেখানে বিনিয়োগকারী হিসেবে তাদের অফিস ও বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
ওই সব দেশে তাদের বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়িও রয়েছে। অথচ তাদের টাকার উত্স একমাত্র মাদক ব্যবসা।
অপরদিকে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ ওমরাহ পালনের নামে দেশ ত্যাগ করছেন।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের গ্রামে গ্রামে নির্বিচারে হত্যা, জ্বালাও-পোড়াওয়ের মধ্যে গত বছরের ২৫ অগাস্ট থেকে এ পর্যন্ত সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। রাখাইনে সেনাবাহিনীর ওই অভিযানকে জাতিসংঘ বর্ণনা করেছে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসাবে।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশে আছে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা। মিয়ানমার তাদের নাগরিক রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি চুক্তিও করেছে। কিন্তু নানা অজুহাত দেখিয়ে তারা রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বিলম্ব করছে।
অথচ মিয়ানমার বাংলাদেশের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের নিরপদ আশ্রয়ে রেখে জামাই আদর করছে। গত এক সপ্তাহে বেশি সংখ্যক মাদক ব্যবসায়ী মিয়ানমারে গেছে। তাদের প্রত্যেককে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশে চাহিদার ৯০ ভাগ ইয়াবা আসে মিয়ানমার থেকে। মিয়ানমারের বাংলাদেশ সীমান্তে এবং সীমান্তবর্তী এলাকায় ৩৩টি ইয়াবা কারখানা রয়েছে।
যেগুলো মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সার্বিক সহায়তায় পরিচালিত হয়ে থাকে। আর এই ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী ও সেনাবাহিনী।
জানা গেছে, মিয়ানমারের মংডু, সিটওয়ে, মইং, কুখাই, নামকখাম, শান, ওয়া, মংশাত, তাশিলেক, মংপিয়াং, মংইয়াং ও পাংশাং, কুনলং, টেংইং, সেন, লুই হুপসুর, কাইয়াং, মাহাজা অ্যান্ড হুমং, কেউও, মাওকমাই, কাকাং মংটন কাশিন ও আইক্কা এলাকায় ইয়াবা কারখানা বেশি।
চীন ও থাইল্যান্ড সীমান্ত লাগোয়া মিয়ানমারের শান ও ওয়া রাজ্য থেকে ইয়াবার কাঁচামাল ইয়াঙ্গুন হয়ে রাখাইন রাজ্যের সিটওয়ে ও মংডুতে পৌঁছে।
এসব কারখানার মধ্যে ১০টি গড়ে উঠেছে মংডু এলাকায়ই। এর মধ্যে একটি কারখানা টেকনাফের ইয়াবা গডফাদারের মালিকানায় রয়েছে। এখনে উৎপাদিত ইয়াবা নাফ নদী পার হয়ে নৌযানে ইয়াবার চালান টেকনাফ, কক্সবাজার হয়ে সরাসরি রাজধানীতে চলে আসে। টেকনাফ, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম থেকে নৌপথে ইয়াবার চালান যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
এছাড়া সীমান্তের অরক্ষিত এলাকা দিয়ে ইয়াবাসহ অস্ত্রের চালান আসছে। এই ইয়াবার চালান রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিনা বাঁধায় চলে যাচ্ছে। পাশের দেশ মিয়ানমারের এই গুটির চালে গোটা বাংলাদেশ তছনছ হয়ে যাচ্ছে। হাল ফ্যাশনের সর্বনাশা এ নেশায় জড়িয়ে পড়ছে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রছাত্রী, শোবিজের তারকারা।
অবৈধ ব্যবসায়ীরা টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ইয়াবার বড় বড় চালান এনে বিভিন্ন কৌশলে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকাসহ সারা দেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এ কারণে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের মাদক ব্যবসায়ীদের সখ্যতা দীর্ঘদিনের।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের ৫৪ কিলোমিটার সীমান্তের পুরোটাই অরক্ষিত। ওই সীমান্ত দিয়ে সহজে প্রবেশ করছে ইয়াবাসহ অস্ত্রের চালান। বিজিবির নজরদারির কারণে মাঝে মধ্যে ইয়াবার চালান ধরা পড়লেও গডফাদাররা কখনো ধরা পড়ে না।
রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে জানা যায়, মিয়ানমার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাদক ব্যবসায়ীদেরকে ভালোই রেখেছে, তাদের নানাভাবে সহায়তা করছে। রাখাইন প্রদেশে একের পর এক রোহিঙ্গাদের গ্রাম ও বসতভিটা পুড়িয়ে ফেললেও ইয়াবা কারখানাগুলো পুরোদমে সচল রেখেছে মিয়ানমার। সেনাসদস্যরা পালা করে ইয়াবা কারখানা পাহারা দিচ্ছে।
২০১৫ সালে একটি তালিকায় মিয়ানমারকে ৪৫টি ইয়াবা কারখানার ব্যাপারে তথ্য দেয় বাংলাদেশ। তবে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এসব কারখানার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
Posted ২:২৯ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৭ মে ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta