মো: ফারুক,পেকুয়া(৬ জুলাই) :: কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় বিগত দেড় বছরে ১১ গৃহবধু, ১ কিশোরী ও ২ যুবকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। পারিবারিক কলহ আর যৌতকের কারণে বেশিরভাগ মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
এরই মধ্যে পিটিয়ে হত্যা, গলায় ফাঁস, বিষপান, নদী আর পুকুরে ভাসমান অবস্থায় এ সমস্ত লাশ পুলিশ উদ্ধার করে। কিছু লাশের ময়নাতদন্ত, ময়নাতদন্ত ছাড়া সমঝোতা আর কিছু লাশের ব্যাপারে ভুক্তভোগি পরিবার থানা ও আদালতে মামলা দায়ের করেন।
অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় এলাকায় আতংক বিরাজ করছে। সর্বশেষ গত ১ সপ্তাহ আগে দুই গৃহবধুর মৃত্যুর ঘটনা এলাকায় আরো বেশি আতংক সৃষ্টি করেছে। ভুক্তভোগি সঠিক সময়ে আইনি সহয়তা না পাওয়ায় দিন এর আকার মারাত্মক ধারণ করছে।
এছাড়াও প্রভাবশালী কর্তৃক হুমকি থাকায় মামলা করতেও ভয় পায় ভুক্তভোগি পরিবার। যার কারণে অপরাধীরা দিনদিন পার পেয়ে যাচ্ছে।
সূত্রে জানা গেছে, গত ২ জুলাই ২০১৮ইং টইটং ইউনিয়নের দক্ষিণ সোনাইছড়ি মইন্যার পাড়া এলাকা থেকে কলি আকতার (১৮) নামের গৃহবধুর মরদেহ উদ্ধার করে এসআই সুমন সরকারসহ একদল পুলিশ। তিনি সদর ইউনিয়নের মাতবর পাড়ার মৃত শহিদুল ইসলামের কন্যা। ৬মাস আগে মুজিবুর রহমানের সাথে তার বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের পর জানতে পারে তার আরেকটি স্ত্রী রয়েছে। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে ঝগড়া লেগে থাকতো। সর্বশেষ ভাঙ্গা কুটিরের খাট থেকে তার লাশটি পুলিশ উদ্ধার করলেও মামলা হয়নি।
গত ২৯ জুন ২০১৮ইং উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের কুতুবপাড়া এলাকা থেকে এলিনা আকতার (২৩) নামের এক গৃহবধুর মরদেহ উদ্ধার করে এসআই সুমন সরকারসহ একদল পুলিশ। তিনি ফরিদুল আলমের স্ত্রী ও লোহাগড়া উপজেলার চরম্বা ইউনিয়নের রাজঘাটা এলাকার নুরুল আমিনের মেয়ে। তাকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে পেকুয়া থানায় হত্যা মামলা রুজু হয়।
৮ মে উপজেলার টইটং ইউনিয়নের ধনিয়াকাটা পূর্বপাড়ায় জেয়াসমিন আক্তার(২৮) নামের এক গৃহবধুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি ওই এলাকার প্রবাসী সেলিম উদ্দিনের স্ত্রী ও সদর শেখের কিল্লাঘোনা এলাকার বজল আহমদের কন্যা।
গত ১৪ মে ২০১৮ইং রাতে বাকপ্রতিবন্ধী রিনা আক্তারকে বিষপান করিয়ে আত্মহত্যার অভিযোগে থানায় মামলা রুজু হয়। তিনি পেকুয়া সদর ইউনিয়নের মৃত আহামুদুর রহমানের কন্যা। এ ঘটনায় তার ভাবিসহ আরো একজন আসামী হয়।
৩১ মে ২০১৮ইং রাজিয়া সোলতানা খুকি (২৪) নামের এক গৃহবধুর লাশ পিতার বাড়ি থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। স্বামী কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের চতর উদ্দিন পাড়ার আফ্রিকা প্রবাসি জসিম উদ্দিনের সাথে বিচ্ছেদ হওয়ায় টইটংয়ে পিতা আবদু রশিদের বাড়িতে থাকতেন।
গত ২৪ মার্চ ২০১৮ইং উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের জেটিঘাট সংলগ্ন এলাকায় বিহিন্দি জালের ভিতর থেকে মো: ইদ্রিস নামের এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে। সদর ইউনিয়নের বাইম্যাখালী গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে। ভোলা খাল পার হওয়ার সময় তলিয়ে গিয়ে নিখোঁজ হন তিনি।
১৫ মার্চ ২০১৮ইং বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার পেকুয়া সদর ইউনিয়নের পূর্ব মেহেরনামা গ্রামের একটি পুকুর থেকে নিখোঁজের একদিন পর তৈয়বা বেগম (১৪) নামের এক গৃহপরিচালিকার লাশ উদ্ধার করা হয়। বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ইয়াংছা গ্রামের সেলিম উদ্দিনের মেয়ে। তিনি মাষ্টার শাহাদত হোসেনের বাড়িতে গৃহপরিচালিকার কাজে নিয়োগ ছিল।
২৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ ইং উপজেলার টইটং ইউনিয়নের ধনিয়াকাটা গ্রামের কবির আহমদের কন্যা গৃহবধূ কুলসুমা আক্তার পিংকির (২৪) লাশ স্বামীর বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের রঙিলাখালী পূর্বকূল গ্রামের মো. ইসমাঈলের স্ত্রী।
গত ১৭ নভেম্বর ২০১৭ইং উপজেলার টইটং ইউনিয়নের বকসুমুরা এলাকার আবু ইউসুপের ছেলে জসিম উদ্দিন (২৮) নামের বাকপ্রতিবন্ধী যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গামছা পেছানো ঝুলন্ত অবস্থায় লাশটি উদ্ধার করা হয়।
১৩ অক্টোবর ২০১৭ইং ইয়াছমিন আক্তার (১৪) নামের এক কিশোরীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে স্বামী সাইফুল ইসলাম। কিশোরী ইয়াসমিন আকতার উজানটিয়া ইউনিয়নের দক্ষিন সুতাচুরা এলাকার শাহজাহান। স্বামী সাইফুল ইসলাম সদর ইউনিয়নের বাইম্যাখালী এলাকার কামাল হোসেনের পুত্র।
২২ নভেম্বর ২০১৭ইং গলায় ফাঁস লাগিয়ে কামরুন্নেছা (২০) নামের এক গৃহবধূ পিতার বাড়িতে আত্মহত্যা করে। পেকুয়ার রাজাখালী ইউনিয়নের বকশিয়াঘোনা এলাকার আবুল কাশেমের মেয়ে এবং বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া এলাকার নুরুল আবছারের স্ত্রী।
১১জুলাই ২০১৭ইং রভারানী শীল(২৫) নামের এক গৃহবধুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি মিয়াপাড়া এলাকার সেনা সদস্য আশিষ কুমার সুশীলের স্ত্রী ও মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়নের নতুন বাজার পশ্চিম সুশীল পাড়া এলাকার বনমালী শীলের মেয়ে।
২৫ এপ্রিল ২০১৭ তিন দিন নিখোঁজ থাকার পর নুরুন্নাহার (২৫) নামের স্বামী পরিত্যক্ত মহিলার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। টইটং ইউনিয়নের নাপিতখালীর একটি নির্জন সেমিপাকা বাড়ি থেকে এ মহিলার লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি নাপিতখালী এলাকার জাফর আলমের মেয়ে। বারবাকিয়া ইউনিয়নের ভারুয়াখালী এলাকার নুরুল হকের স্ত্রী ছিল।
