নাজিম উদ্দিন,পেকুয়া(৩ সেপ্টেম্বর) :: পেকুয়ায় পুলিশিং গ্রেফতার ও অধরায় থেকে গেছে সেই নুরুল আবছার ওরফে বদু ডাকাত। এক সময়ের উপকুলের দুর্ধর্ষ ত্রাস ও ভয়ংকর জলদস্যু স¤্রাট নুরুল আবছার বদু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৭ সদস্যকে বর্বর নির্যাতন চালায়।
মধ্যযুগীয় বর্বরতায় সনাতন ধর্মালম্বীদের জলদাস সম্প্রদায়ের এ সব সদস্যকে আটকিয়ে নির্যাতন চালায়।
এ সময় নর সুন্দর এনে এদের মাথা ন্যাড়া করে দেয়। বিভৎস কায়দায় এ বর্বর ব্যক্তি এদেরকে জিম্মী করে। এক পর্যায়ে এদের ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ আচরনে লিপ্ত হন। সংখ্যালঘু ধর্মের মা দেবী দুর্গাকে নিয়ে অযাচিত ও কুৎসিত মন্তব্য করাতে বাধ্য করে।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতসহ ওই ধর্মের বিরুদ্ধে বাজে মন্তব্য করায়। সেটি মুঠোফোনে ধারন করছিলেন। তিনি মুর্তিমান আতংক। অপর ধর্মের প্রতি নিকৃষ্ট এ আচরন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক সহ বিভিন্ন অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়।
আটককৃত জেলে সম্প্রদায়ের লোকজনকে মাথা ন্যাড়াসহ ব্যাপক শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। প্রায় কয়েক ঘন্টা আটক রাখা হয়। সন্ধ্যার দিকে এদের ছেড়ে দেয়। নির্যাতিত জেলেরা এ ঘটনায় মর্মাহত হন।
তারা আইনী সহায়তা পেতে থানায় পৌছে। পুলিশ এদের পাত্তা দেয়নি প্রথমে। গলা ধাক্কা দিয়ে থানা থেকে তাড়িয়ে দেয়। পেকুয়া থানা পুলিশ নির্যাতনকারী নুরুল আবছার বদুর পক্ষে অবস্থান নেয়। এ ঘটনায় জানাজানি হয়। সর্বত্রে প্রতিবাদ ও ঘৃনা প্রকাশ পায়।
সচেতন মহল এ অমানবিক ঘটনার প্রতি বিচলিত ভাব প্রকাশ করে। পুলিশের আচরনে ঘৃনা প্রকাশ করে। দেশজুড়ে এ ঘটনা ব্যাপক চাঞ্চল্যসহ প্রকাশ পায়। পুলিশ প্রথমে এ বিষয়টি এডিয়ে যায়। অবশ্যই পরবর্তীতে পেকুয়া থানায় মামলা রেকর্ড হয়েছে।
গত মাসের ২৪ আগষ্ট সন্ধ্যার দিকে উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের পেছু মিয়ার খামার বাড়িতে এ লোমহর্ষক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। নুরুল আবছার প্রকাশ বদু ডাকাত ওই জমিদার বাড়ি তদারকিসহ দেখভাল করে।
এ বাড়ির বিশাল জায়গা জমি তিনি নিয়ন্ত্রন করেন। ওই দিন পেছু মিয়ার খামার বাড়ির পুকুর থেকে মাছ ধরতে ৭ জন জলদাসকে নিয়ে আসা হয়। মাছ চুরির অপবাদে এদেরকে আটক করা হয়। বাড়ির একটি কক্ষে আটকিয়ে থেমে থেমে নির্যাতন চালানো হয়।
সন্ধ্যার দিকে সবুজ বাজার নাপিত এনে জলদাস সম্প্রদায়ের ৭ সদস্যকে মাথা ন্যাড়া করা হয়। ওই ঘটনায় হয়রানির শিকার গোপাল দাস বাদী হয়ে পেকুয়া থানায় ২৯ আগষ্ট মামলা রুজু করে। মামলায় উপকুলের এক সময়ের দুর্ধর্ষ ত্রাস ও জলদস্যু স¤্রাট নুরুল আবছার প্রকাশ বদু ডাকাতকে প্রধান আসামী করে। অজ্ঞাত ২০/২৫ জনকে আসামী করে।
নুরুল আবছার প্রকাশ বদু ডাকাত পেকুয়াসহ উপকুলের এক সময়ের আলোচিত ব্যক্তি। তিনি ছিলেন জলদস্যু স¤্রাট। পেছু মিয়ার জমিদার বাড়ির বিশাল সম্পত্তির দেখভাল করে কয়েক বছরের ব্যবধানে কোটিপতি। এ বাড়িটি সমুদ্র পয়েন্টে। নির্জন ও দুর্গম এলাকায় এর অবস্থান। সেখানে ছিল বদু মেম্বারের টর্সার সেল। সমুদ্রের বিশাল অংশ বর্তমানেও তার নিয়ন্ত্রনে।
প্রায় ৪/৫ টি ফিশিং ও কার্গোবোটের মালিক এ বদু মেম্বার। জনশ্রুতি আছে এ ত্রাস সমুদ্র অংশ নিয়ন্ত্রন করে অবৈধ সম্পদ ও কোটি টাকার মালিক। মানব পাচার, মাদক পাচার, চোরাচালানিতে তার প্রচন্ড অনুরাগ। ওই উৎস থেকে বিপুল টাকা তার আয় হয়েছে।
বর্তমানে বিএনপির রাজনীতির পেকুয়ার নীতিনির্ধারনী পদে আসীন। একটি সুত্র জানায়, বদু মেম্বার বিএনপি পেকুয়া উপজেলা শাখার সহসভাপতি পদে অধিস্টিত। গেল ইউপি নির্বাচনে তাকে বিএনপি ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ দেয়।
চেয়ারম্যান পদে তিনি রাজাখালীতে দলটির মনোনয়ন পেয়ে যান। তার বড় ভাই ছৈয়দ নুর নির্বাচন করছিলেন। এ সুবাধে তিনি বিএনপির প্রার্থী থেকে সটকে পড়ে। পরবর্তীতে স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করছিলেন। তার এক মেয়ের জামাই কোটিপতি। একই ব্যবসায় জামাই ও শাশুড় রাজাখালীর অধিপতি। এ জামাই স্ত্রীর পিতাকে রক্ষা করতে দৌড়ঝাপ করছেন। সুন্দরীপাড়ার এ ছেলে এক সময় আ’লীগ নেতা কর্মীকে গুলি করতেন।
বর্তমানে টাকা মেরে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের পদ ভাগিয়ে নেয়। এখন জামাই শাশুরকে রক্ষার মিশনে। পুলিশ এ ভয়ংকর অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়নি। মামলায় ৫ জনকে আটক করা হয়েছে।
পেকুয়া থানার ওসি তদন্ত মিজানুর রহমান জানায়, আমরা দিনরাত তাকে খোঁজছি। খোঁজ নিচ্ছি এ ব্যক্তি কোথায় আত্মগোপনে আছে। তবে পুলিশ এ অপরাধীকে অবশ্যই গ্রেফতার করতে সক্ষম হবে। নিরাপরাধ কাউকে হয়রানি করা হবে না।
Posted ৮:৫৮ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta