বুধবার ৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বুধবার ৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

কক্সবাজারের বালুখালী-কুতুপালংয়ে পাহাড় ও বন উজাড় করে রোহিঙ্গা ক্যাম্প : পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতির আশংকা

সোমবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭
450 ভিউ
কক্সবাজারের বালুখালী-কুতুপালংয়ে পাহাড় ও বন উজাড় করে রোহিঙ্গা ক্যাম্প : পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতির আশংকা

কক্সবাংলা রিপোর্ট(২৪ ডিসেম্বর) :: কক্সবাজার জেলার উখিয়ার বালুখালী ও কুতুপালং ক্যাম্প। এ দুটি ক্যাম্পের অধিকাংশ তাঁবু গড়ে উঠেছে পাহাড়ের কোলে, পাদদেশে, কোথাও পাহাড় কেটে, কোথাও ঘেঁষে। কিন্তু এসব পাহাড়ের মাটি বালিমিশ্রিত হওয়ায় ঝুঁকি বাড়ছে। প্রতিনিয়তই অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটায় ঝুঁকির শঙ্কা আরও বেশি দেখা দিচ্ছে। এ অঞ্চলের পাহাড়গুলো অন্যান্য পাহাড়ের মতো নয়, বেশির ভাগই বালু ও এঁটেল মাটির হওয়ায় শঙ্কা বাড়ছে।

পরিবেশ-বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কক্সবাজার এলাকার ওই সব পাহাড় মাটি ও বালিমিশ্রিত। ফলে সাধারণত অন্যান্য পাহাড়ের চেয়ে এখানে ঝুঁকির শঙ্কাটা একটু বেশি। আর এক জায়গায় অনেক বেশি পরিবারের অনেক মানুষ বসবাস করছে। ফলে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে একসঙ্গে অনেক মানুষ হতাহতের শঙ্কাও আছে। একটু ভারি বৃষ্টিপাত হলেই ধস নামতে পারে পাহাড়ে। ঘটতে পারে বড় বিপর্যয়।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন বালুখালী ক্যাম্পে গিয়ে দেখা যায়, ক্যাম্প-২-এর ডি নম্বর ব্লকে যাওয়ার পথে তিন-চারজন রোহিঙ্গা পাহাড় থেকে মাটি কাটছেন। তারা এ মাটি কেটে তাদের তাঁবু ভরাট করছেন।

এ সময় কথা হয় তাদের মধ্যে গোলাম কিবরিয়া নামের একজনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘একটি তাঁবু তৈরি করেছি। সেখানে কিছু জায়গা উঁচু-নিচু আছে। তাই তাঁবু সমতল করতে এখান থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছি।’

কারও কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছেন কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কার কাছ থেকে অনুমতি নেব। তাঁবু সমান করতে মাটির দরকার। তাই এখান থেকে মাটি নিয়ে যাচ্ছি। এ ছাড়া কার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয় তা আমি জানি না।’

কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, রোহিঙ্গা প্রবেশের পর থেকে কক্সবাজার জেলায় পাহাড় কাটা, সামাজিক ও সরকারি বনায়নসহ নানাভাবে পরিবেশের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে এ নিয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং ইউএনডিপি যৌথভাবে একটি জরিপ চালায়। ‘র‌্যাপিড এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট এসেসমেন্ট’ শীর্ষক জরিপ কাজের প্রতিবেদন আগামী সপ্তাহে প্রকাশ করার কথা রয়েছে।

কক্সবাজার জেলার পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সাইফুল আশরাফ বলেন, ‘মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের স্থান দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ এলাকায় পাহাড় ও বন উজাড় করায় পরিবেশের যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। ইতিমধ্যে এ অঞ্চলে পরিবেশের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা নির্ণয়ে আমরা একটি সমীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করছি। এটির খসড়া বন মন্ত্রণালয় ও পরিবেশ অধিদফতরে পাঠানো হয়েছে। সেখানকার মতামতের পর প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা পাহাড় কাটা বন্ধ রাখতে প্রতিনিয়তই অভিযান পরিচালনা করে আসছি। গত আড়াই মাসে ৬৪টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এর মধ্যে চারটি নিয়মিত মামলা দায়ের, নোটিস প্রদান এবং জরিমানাও আদায় করা হয়েছে।

’ চট্টগ্রাম প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘পাহাড় কেটে তাঁবু তৈরি করাটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বৃষ্টি হলেই বড় দুর্যোগ দেখা দেবে। যেহেতু সেখানে একসঙ্গে অনেক পরিবার বাস করছে এবং একই তাঁবুতে নারী-শিশু ও বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ বসবাস করছে, তাই বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা কোনোভাবেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’

তিনি বলেন, ওই এলাকাটি এমনিতেই ভূমিকম্পপ্রবণ। এর ওপর এখন গাছ ও পাহাড় কেটে দুর্ঘটনাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া পাহাড় থেকে গাছ কাটার কারণে বৃষ্টির সময় খুব দ্রুত মাটি সরে যাবে। তখনই ঘটতে পারে ভয়াবহ বিপর্যয়।’

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলেন, গাছ কাটা হলে তা পুনরায় লাগানো যায়। কিন্তু পাহাড়কে ন্যাড়া করা হলে পুনরায় কিছু করার কোনো সুযোগ থাকছে না। গাছ লাগানোর মতো তো আর পাহাড় তৈরি করা যায় না। এটি প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা একটি সম্পদ। আর পরিবেশ রক্ষা করে তো পাহাড়ই। এই পাহাড়গুলো এখনকার নয়। এগুলোর বয়স দেড় থেকে দুই কোটি বছর।

পক্ষান্তরে, স্বাভাবিকভাবে মাটি ছড়ানোর ফলে নিম্নাঞ্চলগুলোর ফসলি জমি বালুর নিচে চলে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। এ ছাড়া পাহাড়ি ঝরনাধারার গতিপথ পরিবর্তন হবে। অভিযোগ আছে, স্থানীয় প্রশাসন বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্প নিয়ে ব্যস্ত। এই সুবাদে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে স্থানীয়রাও সমান তালে পাহাড় কাটছেন।

এ সুযোগে যে যার মতো করে পাহাড় কেটে নিজের প্রয়োজন মেটাচ্ছেন তারা। সরেজমিন উখিয়ার ক্যাম্পগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, এখানে প্রতিদিনই নতুন করে আসছেন রোহিঙ্গা। যারা নতুন আসছেন তারাও তাঁবু ও ঝুপড়িঘর বানাচ্ছেন।

উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী ঢালার মুখ, তাজনিরমার ছড়া, শফিউল্লাহ কাটা, হাকিমপাড়া, টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের পুটিবনিয়া, রইক্ষ্যং এলাকায় বনাঞ্চল ধ্বংস করে রোহিঙ্গারা আবাস গড়ে তুলছেন। প্রতিদিনই এসব এলাকায় পাহাড় ন্যাড়া করে বসতি বানানো হচ্ছে।

পাহাড় কেটে সমতল করে তৈরি করা হচ্ছে তাঁবু। তাঁবু তৈরি করা হয়েছে পাহাড়ের চূড়ায়, পাদদেশে, পাহাড়ের কোলে। রোহিঙ্গারা এসব পাহাড় কেটে রাস্তা, পাকা বাড়ি, মসজিদ-মাদ্রাসা ও বাজার তৈরি করেছেন। ফলে পাহাড় তার স্বাভাবিক আকার ও স্থায়িত্ব হারাচ্ছে।

450 ভিউ

Posted ২:২২ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com