সোমবার ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

সোমবার ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এনজিও’র আড়ালে জঙ্গি অর্থায়নে SKB (স্মল কাইন্ডনেস বাংলাদেশ)

মঙ্গলবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮
350 ভিউ
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এনজিও’র আড়ালে জঙ্গি অর্থায়নে SKB (স্মল কাইন্ডনেস বাংলাদেশ)

কক্সবাংলা রিপোট(১৮ ডিসেম্বর) ::‍‍ কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এনজিও’র আড়ালে জঙ্গি অর্থায়নের পাশাপাশি স্মল কাইন্ডনেস বাংলাদেশ (এসকেবি) নামে একটি প্রতিষ্ঠান জামায়াত-শিবিরের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানোর প্রমাণ পেয়েছে ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।

সিটিটিসির কর্মকর্তারা বলছেন, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ত্রাণ-সহায়তা দেওয়ার নাম করে বিদেশি অনুদান এনে জঙ্গিবাদে অর্থায়ন করতো এই এসকেবি। এছাড়া, বিদেশি অর্থ নিজেদের সাংগঠনিক কাজেও ব্যবহার করতো তারা। এসকেবি’র উত্তরা কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে ২২০ জনের একটি তালিকা পেয়েছেন সিটিটিসির কর্মকর্তারা।

তারা বলছেন, এই তালিকার সদস্যদের প্রতিমাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিতো এসকেবি। এই ২২০ জনই জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাদের কেউ কেউ ২০১৩ ও ২০১৪ সালে দেশজুড়ে নাশকতায় অংশ নিয়ে আহত বা নিহত হয়েছিল।

সিটিটিসির উপ-পুলিশ কমিশনার মহিবুল ইসলাম খান বলেন, ‘এসকেবি এনজিও হিসেবে অনুমোদন নিয়ে বিদেশি অর্থ সংগ্রহ করে জঙ্গি অর্থায়নে ব্যবহার করতো। একইসঙ্গে তারা জামায়াত-শিবিরের সাংগঠনিক কার্যক্রমের জন্য এসব অর্থ ব্যয় করতো। আমরা অর্থ ব্যয়ের বিস্তারিত অনুসন্ধান করছি।’

সূত্র জানায়, একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এসকেবি’র জঙ্গি অর্থায়ন নিয়ে কাজ শুরু করে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৮ নভেম্বর পল্লবী থানাধীন ডিওএইচএস এলাকার ৯ নম্বর রোডের ৬৪৪ নম্বর বাড়ির ৫ম তলায় অভিযান চালিয়ে আটজনকে গ্রেফতার করা হয়।  গ্রেফতারকৃতরা হলো সাফ ওয়ানুর রহমান, সুলতান মাহমুদ, নজরুল ইসলাম, আবু তাহের, ইলিয়াস মৃধা, আশরাফুল আলম, হাসনাইন ও কামরুল। তাদের কাছ থেকে ১৪ লক্ষাধিক টাকা, ১টি ল্যাপটপ, ৮টি সিপিইউ, ৮টি বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই ও ১০টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়।

একই দিন ৮ নভেম্বর এসকেবির কক্সবাজারের কার্যালয় কক্সবাজার শহরের কলাতলীর সৈকতপাড়া এলাকার‘এবি সী এল রিসোর্ট এন্ড গেস্ট হাউজ নামে একটি হোটেলে থেকেও ৭ জনকে পুলিশ আটক করে । আটককৃতরা হলেন- পিরোজপুরের মো. রুহুল আমিন খানের ছেলে আবুল বাশেদ (২৫), পিরোজপুরের মৃত আব্দুল করিমের ছেলে জাকির হোসেন (৪০), পটোয়াখালীর ছিদ্দিকুর রহমানের ছেলে আল মামুন (২৮), নোয়াখালীর নুরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল ইসলাম (২৭), পিরোজপুরের জহির হোসেনের ছেলে মো. আব্দুল্লাহ (২২), মাদারিপুরের আব্দুল মান্নানের ছেলে মো. আসাদ (৩১) ও বরিশালের মৃত মোতাহের মিয়ার ছেলে মিলন ডালী (৪৫)।এই হোটেলের ৩য় তলায় এসকেবির কক্সবাজার কার্যালয়। ৩য় তলার দুটি ফ্ল্যাটে তাদের অফিস।

পুলিশের দাবি, রোহিঙ্গা শিবিরে সহায়তার আড়ালে এই সংস্থাটি নানা ধরণের অপতৎপরতা চালায়।এটি পাকিস্থানভিত্তিক এনজিও এসকেভি। এটি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন।দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজারের বালুখালী রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে এনজিও কার্যক্রমের আড়ালে জঙ্গিবাদে অর্থায়ন ও উগ্রবাদী প্রচার-প্রচারণার অভিযোগে এই সংগঠনের নামেই Small Kindness Bangladesh (SKB) এনজিও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে রোহিঙ্গা ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো: আবুল কালাম জানান,এসএকবি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করেছে এনজিও ব্যূরোর অনুমতি নিয়ে। তবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ত্রাণ-সহায়তা দেওয়ার নাম করে জঙ্গিবাদে অর্থায়নের খবরে আশ্চর্য হয়েছি। এছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিভিন্ন কর্মকান্ডে তাদের একাউন্টে প্রায় একশ কোটি টাকার তহবিল রয়েছে।

সিটিটিসির তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ২০১৬ সালের ২৫ মে এনজিও ব্যুরো থেকে অনুমোদন নিয়ে কাজ শুরু করেছিল এসকেবি। এনজিও’র নাম করে নিষিদ্ধঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন আনসার-আল-ইসলামের মতাদর্শে পরিচালিত হচ্ছিল সংগঠনটি।

দীর্ঘদিন কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে এনজিওভিত্তিক হিউম্যানিটারিয়ান ওয়ার্কের ছদ্মাবরণে এই এনজিও সদস্যরা জঙ্গিবাদে অর্থায়ন ও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে উগ্রবাদের প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। জঙ্গিবাদে অর্থায়ন ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যপরিচালনার জন্য গত আগস্টে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে এই এনজিওটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে এনজিও ব্যুরো।

সূত্র জানায়, ফিলিপাইনে বসবাসরত আবু হুরায়রা ও তার স্ত্রী ওরকাতুল জান্নাত এই এনজিও পরিচালনা করতো। বাংলাদেশে অবস্থান করে রেদোয়ান নামে একজন এই প্রতিষ্ঠানের দেখভাল করতো। অ্যাডুকেশন, ওরফান, ওয়াশ, রিহাবিলেশন, কোরবানি প্রজেক্টের নামে তুরস্ক, ইউএস হেল্পিং ল্যান্ড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, ইসলামিক কাউন্সিল অব নর্থ আমেরিকা, হিউম্যান এইড-ইইউ, মুসলিম এইড-সুইডেন, ডব্লিউইএফএ, কেয়ার ফর আদার ও হর্ন অব আফ্রিকার মতো সংস্থা থেকে অর্থ সংগ্রহ করতো তারা।

সিটিটিসির তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অনুসন্ধানে উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের ৫ নম্বর সড়কের ১৭ নম্বর ভবনে এই সংস্থার আরেকটি কার্যালয়ের সন্ধান পান অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তারা।

চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ওই কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে এমন কিছু নথিপত্র পাওয়া যায়, যাতে দেখা গেছে জঙ্গি অর্থায়নের পাশাপাশি এনজিওটি জামায়াত-শিবিরের সাংগঠনিক কার্যক্রমও পরিচালনা করতো।

সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা জানান, ওই কার্যালয় থেকে ২২০ জনের একটি তালিকা উদ্ধার করা হয়েছে, যাদের নিয়মিত মাসিক ভাতা এবং ঘরবাড়ি নির্মাণসহ নানা কাজে ব্যয় করা হতো। এই ২২০ জনই ২০১৩ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার বানচাল করতে সহিংসতা করতে গিয়ে হতাহত হয়।

এছাড়া, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর সহিংসতা করতে গিয়ে যারা আহত-নিহত হয়েছে তাদের তালিকা রয়েছে। ওই তালিকা পর্যালোচনায় দেখা গেছে, নাশকতা করতে গিয়ে নিহত ব্যক্তিদের ‘শহীদ’ উল্লেখ করে প্রত্যেকের প্রোফাইল তৈরি করা হয়েছে।

ওই প্রোফাইলে হতাহতদের বিস্তারিত তথ্য, সংগঠনে তাদের পদ-পদবি, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক তথ্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি মাসে বিভিন্ন পরিমাণ অর্থ দেওয়ার কথাও উল্লেখ রয়েছে।

সিটিটিসির ওই কর্মকর্তা বলেন, এনজিওটির কার্যালয় থেকে জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের তালিকা, একাদশ সংসদ নির্বাচনে কারা এমপি পদে প্রার্থী হতে পারেন, তাদের তালিকাসহ বিভিন্নরকম তথ্য সংবলিত নথিপত্র পাওয়া যায়। এনজিও’র আড়ালে তারা আসলে পুরোপুরি জঙ্গিবাদে অর্থায়ন ও সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতো। ইতোমধ্যে এই এনজিওর ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা ৫৬ কোটি টাকা ফ্রিজ করে রাখা হয়েছে। এনজিওটির বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করার প্রস্তুতিও চলছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ২০১৫ সালে জঙ্গিবাদে অর্থায়ন করার অভিযোগে ওয়ার্ল্ড অ্যাসেম্বলি অব মুসলিম ইয়ুথ (ওয়ামি) নামে একটি আন্তর্জাতিক এনজিওর কার্যক্রম বন্ধ করা হয়। ওই এনজিওটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়েই মূলত এসকেবি গঠন করা হয়। এনজিও ব্যুরো যথাযথ তদন্ত বা অনুসন্ধান ছাড়াই তাদের কার্যক্রমের অনুমোদন দেওয়া হয়।

350 ভিউ

Posted ১১:০৩ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com