কক্সবাংলা রিপোর্ট(৪ মে) :: কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছেন কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড। শুক্রবার সারা দিন অতিবাহিত করে ।ফ্রিল্যান্ড ‘মেডিসিন স্যান ফ্রন্টিয়ার্স’ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিষ্ঠিত হাসপাতাল পরিদর্শন করেন।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো নিপীড়ন বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় নিপীড়নের ঘটনা’, মন্তব্য করে কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড বলেন, ‘পরিস্থিতি এতটাই ভয়ঙ্কর যে এখনও মিয়ানমারে নিপীড়ন চলেছে, যা থেকে বাঁচতে মানুষ পালাতে বাধ্য হচ্ছে।’
নিজের শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করতে যাওয়াটাকে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে কানাডার ‘দৃঢ় অবস্থানের’ প্রমাণ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন তিনি। তবে রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন করে অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে আশার বাণী শোনাননি ফ্রিল্যান্ড।
কানাডার গ্লোব অ্যান্ড মেইল লিখেছে, কানাডা ইতিমধ্যে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য ৪ কোটি ৫৯ লাখ ডলার অর্থ সাহায্য দিয়েছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চালানো নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা এখন সম্পূর্ণভাবে ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল।
বাংলাদেশে বর্তমানে ৬ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা কুতুপালং – বালুখালি শিবিরে বাঁশ ও পলিথিনের তৈরি অস্থায়ী ঘরে রয়েছে। সাম্প্রতি মিয়ানমার থেকে পালিয়া আসা ৬ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গাদের মূলত ওখানেই আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারীদের প্রতি দশজনের একজন ধর্ষণের শিকার হয়েছে। সার বেঁধে দাঁড় করিয়ে হত্যা করা হয়েছে রোহিঙ্গা পুরুষদের। রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে এখন তোড়জোড় চলছে আদর্শ বৌদ্ধ গ্রাম তৈরির।
কানাডার পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেছেন, ‘আমি মনে করি যা ঘটেছে সে বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের সবার নৈতিক দায় রয়েছে। এদের মধ্যে অং সান সু চিওকেও রাখছি। কারণ আমরা অনেকে তার অনেক বেশি প্রশংসা করেছিলাম। যা হয়েছে তা মানবতা বিরোধী অপরাধ এবং জাতিগত নিধন।’
রোহিঙ্গাদের জন্য অর্থ বরাদ্দের প্রসঙ্গে ফ্রিল্যান্ড বলেছেন, ‘এর জন্য অনেক অর্থের দরকার এবং পৃথিবীতে সমস্যাও অনেক। তাই এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো খুব ভেবে চিন্তে নেওয়া লাগে।’ অথচ রোহিঙ্গাদের জন্য কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর বিশেষ প্রতিনিধি বব রে ৪ বছর ধরে কানাডার পক্ষ থেকে ১ কোটি ৫০ লাখ ডলার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
শুক্রবার কুতুপালং পরিদর্শনে গিয়ে কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রিল্যান্ড মাটির রাস্তা ধরে চারপাশ ঘুরে ঘুরে দেখেছেন। সেখানে তিনি রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথাও বলেছেন।রোহিঙ্গা নারীরা তাকে ধর্ষিত হওয়ার ঘটনার কথা জানিয়েছেন।
এদের মধ্যে একজন নারী বলেছেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী ইচ্ছা করে তাদের শৌচাগার ধংস করে দিত যাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে তাদের বাড়ি থেকে দূরে যেতে হয় ও সেই সুযোগে তাদের ওপর নিপীড়ন চালানো যায়।
কুতুপালংয়ে ফ্রিল্যান্ডের সঙ্গে দেখা হয় নিজেদের রোহিঙ্গা নিউজ এজেন্সি হিসেবে দাবি করা ‘কালাদান প্রেস নেটওয়ার্কর’ টিন সোয়ে ও আইনজীবী রাজিয়া সুলতানার।
টিন সোয়ে বলেছেন, কানাডার বলা উচিত উচিত, মিয়ানমার ‘গণহত্যা’ চালিয়েছে। আর রাজিয়া সুলতানা সু চির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি জানিয়েছেন ফ্রিল্যান্ডের কাছে।
তাদেরকে ফ্রিল্যান্ড বলেছেন, সিরিয়ায় হওয়া অপরাধের তদন্তে যেমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তেমন রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো নিপীড়নের তদন্ত ও বিচার করার জন্য ‘আন্তর্জাতিক, নিরপেক্ষ ও স্বাধীন’ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হওয়া উচিত।
শরণার্থী শিবির পরিদর্শন চলাকালে তিনি ঝড়ের কবলে পড়েন। ওই ঝড় শরণার্থী শিবিরের প্রতিকূল পরিবেশ সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা দিয়েছে কনাদার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে।
ফ্রিল্যান্ড ‘মেডিসিন স্যান ফ্রন্টিয়ার্স’ নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিষ্ঠিত হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। সেখানকার চিকিৎসকরাও জানান, অর্থের অভাবে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে।
কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে গিয়ে অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে অনিশ্চয়তার কথা জানালেও ফ্রিল্যান্ড বলেছেন, কানাডার সরকার রোহিঙ্গাদের পক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। জাস্টিন ট্রুডো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জি ৭ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন যাতে তিনি সেখানে রোহিঙ্গা পরিস্থিতির বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন।
Posted ১১:০০ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০৫ মে ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta