কক্সবাংলা রিপোর্ট(২৫ জানুয়ারী) ::গত বছরের ২৪ আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব নির্যাতন শুরুর পর বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের একটি পরিবারকে একটি ইউনিট ধরে ফিরিয়ে নেয়ার শর্ত দিয়েছে মিয়ানমার। যদিও এসব রোহিঙ্গার পরিবারভিত্তিক তথ্য বাংলাদেশের নেই। তবে বাংলাদেশের কাছে না থাকলেও রোহিঙ্গাদের পরিবারভিত্তিক গণনার কাজটি করছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর।
সংস্থাটি এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৭৫ হাজার ৯২৯টি পরিবারের ৭ লাখ ৬১ হাজার ৩২৮ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে গণনায় আনতে পেরেছে, যা মোট শরণার্থীর ৭২ শতাংশ।
জানা গেছে, সরকারি ব্যবস্থাপনায় গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকেই রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন শুরু করে বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ ৭৫ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এখন তাদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পেতে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় ইউএনএইচসিআরকে যুক্ত করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
সংস্থাটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত করতে একটি সমঝোতার খসড়াও দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ইউএনএইচসিআর সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ৪ অক্টোবর থেকে পরিবারভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ শুরু করে সংস্থাটি। সংস্থার সদস্যরা তথ্য সংগ্রহ করার পাশাপাশি পরিবারভিত্তিক একটি করে একক নম্বরযুক্ত কার্ডও বিতরণ করেছে। আর এ কার্ড নম্বরের মাধ্যমে পরিবারভিত্তিক গণনাসহ ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা পরিবারগুলোর সুনির্দিষ্ট চাহিদা চিহ্নিত করে ত্রাণ প্রদানে শৃঙ্খলা নিয়ে এসেছে তারা।
সংস্থাটি জানায়, ২০১৭ সালের ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭ লাখ ৬১ হাজার ৩২৮ জন রোহিঙ্গাকে গণনার আওতায় আনা হয়েছে। তাদের পরিবারের সংখ্যা ১ লাখ ৭৫ হাজার ৯২৯। আর ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে আগত ৬ লাখ ৪০ হাজার ২৬৯ রোহিঙ্গার পরিবারের সংখ্যা ১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৫৮টি। তবে এ গণনায় কুতুপালং ও বালুখালিতে ইউএনএইচসিআরের আগের ক্যাম্পের ৩৩ হাজার ৫৩৮ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, এসব পরিবারের এক-তৃতীয়াংশ সদস্যের জীবন ঝুঁকিতে রয়েছে। রোহিঙ্গাদের অনেকের শারীরিক অবস্থা গুরুতর। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে শিশু ৫৪ শতাংশ এবং নারী ৫২ শতাংশ। এদের ৭০ শতাংশ মিয়ানমারের উত্তর রাখাইনের মংডুর অধিবাসী। আর বাকিরা বুথিডং ও রাথেডংয়ের বাসিন্দা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের হাতে রোহিঙ্গাদের যে তথ্য রয়েছে তা প্রত্যাবাসনের জন্য যথেষ্ট নয়। এক্ষেত্রে মিয়ানমার শর্ত দিয়েছে যে, একটি পরিবারকে একটি ইউনিট ধরে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে পরিবারভিত্তিক তথ্য আমাদের কাছে নেই।
এক্ষেত্রে ইউএনএইচসিআরের সহযোগিতা নিতে হবে। তারা এরই মধ্যে পরিবারভিত্তিক তথ্যভাণ্ডার তৈরি করেছে। তাদের থেকে তথ্য সহযোগিতা নিয়ে মিয়ানমারের কাছে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য পাঠানো হবে শিগগিরই।
সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চলতি মাসের ১৬ তারিখ বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সই হওয়া ‘ফিজিক্যাল এগ্রিমেন্ট’ অনুযায়ী, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের তথ্য সংগ্রহ করে তা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য মিয়ানমারকে দেবে। এ তথ্যে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের অধিবাসী হওয়ার প্রমাণ থাকতে হবে।
আর মিয়ানমার ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর সই হওয়া ‘এগ্রিমেন্ট অন রিটার্ন অব ডিসপ্লেসড পারসনস ফ্রম রাখাইন স্টেট’-এর ‘৬ (এ)’ ধারাকে অনুসরণ করে সম্ভব হলে দুই মাসের মধ্যে এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে সত্যতা নিশ্চিত করবে।
‘এগ্রিমেন্ট অন রিটার্ন অব ডিসপ্লেসড পারসনস ফ্রম রাখাইন স্টেট’ শীর্ষক চুক্তির ‘৬-এর এ’ ধারায় ফিরে যাওয়ার যোগ্যতার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। ফিরে যেতে ইচ্ছুকদের অবশ্যই মিয়ানমারের বাসিন্দা হতে হবে। যারা ফিরবেন তারা অবশ্যই স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরবেন। যেসব রোহিঙ্গা পরিবার থেকে আলাদা হয়ে গেছে, কিংবা পরিবারের সদস্যরা তাদের ফেলে গেছে তারা এবং এতিমদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আদালতের সনদ লাগবে।
Posted ৩:০১ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২৬ জানুয়ারি ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta