কক্সবাংলা রিপোর্ট(৫ সেপ্টেম্বর) :: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গত ২৫ আগস্টে নতুন করে সেনা অভিযান ও চলমান সহিংসতার কারণে শরণার্থী অনুপ্রবেশ থামছে না।গত ১০ দিনে ২ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে।আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো তাদের প্রতিবেদনে ৯০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকার কথা বললেও বস্তুত পক্ষে এর সংখ্যা ২ লাখ ছাড়িয়েছে বলে দাবি করেছে স্থানীয়রা।এতে বিপাকে পড়েছেন সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারাও।গত দুই রাতেই টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ও হারিয়াখলী দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে অন্তত ৫০ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা।
এদিকে, প্রাণ ভয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা এসব রোহিঙ্গা প্রয়োজনীয় ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা পাচ্ছেন না। খাদ্য ও পানির তীব্র সঙ্কটে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে তারা। রোদ,বৃষ্টি আর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে মায়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীরা।সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা শিশু ও প্রসূতিদের। স্থানীয় কমিউনিটি ক্লিনিক ও কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কিছু সেবা দিলেও,প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই কম।পথের ক্লান্তির পাশাপাশি তাদের দেহে পুষ্টির অভাবও দেখা দিয়েছে।বেশিরভাগ উদ্বাস্তু খোলা জায়গায় সারছেন টয়লেট। ব্যবহার করছেন পাশের খালের নোংরা পানি। সব মিলিয়ে ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত এসব মানুষ।
সরেজমিনে ঘুরে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে,উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পের পাশে এরইমধ্যে আশ্রয় নিয়েছে দেড় লাখের বেশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারী। মাথা গোঁজার জন্য তারা পলিথিনের আশ্রয় বানালেও, নেই পর্যাপ্ত শৌচাগার বা সুপেয় পানির ব্যবস্থা।আর নতুন করে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা আশ্রয়ের খোঁজে পাহাড়-সমতল ও রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে। অচেনা এলাকায় যে যেখানে পারছেন সেখানেই মাথা গোঁজার ঠাঁই নিচ্ছে। ফলে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ সড়কের পাশে পাহাড়ি এলাকায় নতুন করে গড়ে উঠছে ঝুপড়ি ঘর।
স্থানীয়রা জানান, বাংলাদেশের উখিয়া-টেকনাফের অভ্যন্তরে নতুন করে কয়েক হাজার ঝুপড়ি ঘর তৈরি করেছে নতুন করে আসা রোহিঙ্গারা।
উখিয়ার সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন পালংখালী,থাইংখালী,হোয়াইক্যং ও বালুখালীতে সামাজিক বনায়নে চারটি ক্যাম্প করার পায়ঁতারা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব ক্যাম্প করার পেছনে রয়েছে বিএনপি-জামায়াত ও ক্ষমতাশীন দলের নেতাকর্মীরা জড়িত। আর এসব ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গদের বিভিন্ন এনজিও সংস্থা ও সেচ্চাসেবী সংগঠন কোরবানীর মাংস,খিচুড়ি,মুড়ি নগদ টাকা বিতরন করতে দেখা গেছে।
এর মধ্যে বিদেশী একটি সংস্থাা ১০টি গরু বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চকিদার মো:শাহাজাহান জানান।এছাড়া উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী ঢালায় আরো ৮টি গরু দেন বলে জানান তিনি।
উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী এবং লেদা রোহিঙ্গা বস্তি নিয়ন্ত্রণকারী মাঝিদের দাবি, তাদের একেক বস্তিতে নতুন করে ৫০ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। নতুন করে থাইংখালীতে বনভুমিতে বস্তি গড়ে তোলা হয়েছে।
কুতুপালং অনিবন্ধিত ক্যাম্পের মাঝি আবু ছিদ্দিক ও মুহাম্মদ নূর বলেন, এ ক্যাম্পে গত ২৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত অর্ধ লাখেরও বেশি নতুন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশপাশে আশ্রয় নিয়েছে। বলতে গেলে এর সংখ্যা ৬০-৭০ হাজারের কম নয়। পুরনো কুতুপালং ও নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। নতুন পুরাতন মিলে এখন গাদাগাদি করে অবস্থান করছে রোহিঙ্গারা। উখিয়া টিভি টাওয়ারের আশপাশে অন্তত ২০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা নতুন করে ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে অবস্থান করছে।
এদিকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার জামছড়ি, ছেরার মাঠ, আসারতলী এলাকায় পাহাড়ের চূড়ায় আনুমানিক ২০ হাজার রোহিঙ্গা নাগরিক প্লাষ্টিক দিয়ে ছোট ছোট ঘর তৈরী করে রোহিঙ্গা নাগরিকরা আশ্রয় নিয়েছে।
তবে স্থাানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ,মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা এখানকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। কিছুদিন পর বাড়ী ঘরে চুরি ডাকতি বেড়ে যাবে। আর কয়দিন পর গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যেতে হবে।তবে মঙ্গলবার সকালে উখিয়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পালংখালী ইউনিয়নের জামতলী বাগানে অবৈধ ভাবে বস্তি স্থাপনকারী ১ হাজার ঝুপড়ি উচ্ছেদ করেছেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোজাফ্ফর আহমদ সত্যতা স্বীকার করে বলেন,রোহিঙ্গাদের কারনে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
এদিকে,সীমান্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার। রোহিঙ্গা হিন্দুদের বর্তমান অবস্থা ঘুরে দেখেছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এবং আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন বলেন, গত কয়েকদিন আশঙ্কাজনকহারে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকেছে। ঠিক কত সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে এর সংখ্যা এক লাখের বেশি হবে বলে জানান তিনি।
Posted ৬:২৩ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta