রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

কক্সবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপে প্যারাবন উজাড় করে অবকাঠামো নির্মাণ : হুমকিতে জীববৈচিত্র্যে

মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারি ২০১৮
602 ভিউ
কক্সবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপে প্যারাবন উজাড় করে অবকাঠামো নির্মাণ : হুমকিতে জীববৈচিত্র্যে

বিশেষ প্রতিবেদক(১৫ জানুয়ারি) :: কক্সবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপের প্যারাবন উজাড় করে চিংড়িঘের নির্মাণের মতো পরিবেশবিনাশী কর্মকাণ্ড নতুন নয়। সম্প্রতি এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বিভিন্ন প্রকল্পের প্রয়োজনে অবকাঠামো নির্মাণের তোড়জোড়। দ্বীপের উপকূলজুড়ে আগের সেই ঘন প্যারাবন এখন আর চোখে পড়ে না। পাশাপাশি দ্বীপে মানুষের যাতায়াতও অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে। এ কারণে জীববৈচিত্র্যের দিক থেকে অনন্য এই দ্বীপটির বন্য প্রাণীর জন্য পরিবেশগত হুমকি তৈরি হয়েছে। লক্ষণীয়ভাবে কমে গেছে পরিযায়ী পাখির আনাগোনা।

পরিবেশবিষয়ক সংস্থা মেরিন লাইফ অ্যালায়েন্সের এক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত আট বছরে সোনাদিয়ায় পরিযায়ী পাখি কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। এই সংস্থা ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে কক্সবাজার উপকূলীয় এলাকায় গণনা করে পেয়েছিল ৩৭ প্রজাতির পরিযায়ী পাখিসহ ৫২ প্রজাতির ১৫ হাজার ৯৩৩টি জলচর পাখি। এর মধ্যে সোনাদিয়া অঞ্চলে পাওয়া গিয়েছিল ১১ হাজার ৮৭৮টি পাখি। জরিপ অঞ্চলটি ছিল পরিযায়ী পাখিদের আন্তর্জাতিক উড়োপথ। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে পরিচালিত জরিপে পাওয়া গিয়েছিল ৪৭ প্রজাতির ১৯ হাজার ৫৯১টি পাখি।

এর মধ্যে সোনাদিয়া, উজানটিয়া ও হাঁসেরচরে পাওয়া গিয়েছিল ৯ হাজার ৫০০টি পাখি। কিন্তু ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে সোনাদিয়া, তাজিয়াকাটা, বেলেকেরদিয়া, কালাদিয়া, লালদিয়া ও ধলঘাটায় গণনা করে পাওয়া গেছে মাত্র সাত হাজার জলজ পাখি।

মেরিন লাইফের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোনাদিয়াসহ আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের কারণে পাখির আবাসস্থল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে বেলেকেরদিয়া, কালাদিয়া, লালদিয়া, কাউয়ারচরে পাখির আবাসস্থল বিনষ্ট হচ্ছে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, মানুষের বিচরণ বেড়ে যাওয়া, শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণ বড় কারণ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চামচঠুঁটো বা স্পুনবিল পাখি শুধু সোনাদিয়ায় দেখা যায়। অতি ক্ষুদ্র পাখিটি লম্বায় ১৫-১৭ সেন্টিমিটার। এদের প্রজননক্ষেত্র রাশিয়ার উত্তর পূর্ব অঞ্চলে, যেখানে পুরো গ্রীষ্মকাল কাটায় ও প্রজননের কাজ শেষ করে। শীতের তীব্রতা বাড়লে হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে তারা বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভারতসহ বিভিন্ন উপকূলে চলে আসে এবং আবার প্রজননক্ষেত্রে ফিরে যায়। পৃথিবীতে স্পুনবিল পাখির সংখ্যা ৪০০ জোড়ারও কম।

এই সংস্থার নির্বাহী পরিচালক জহিরুল ইসলাম বলেন, সোনাদিয়ার আশপাশে নানা উন্নয়ন প্রকল্প প্রতিষ্ঠা, প্যারাবন উজাড় ও লোকজনের উৎপাত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগে যেখানে পাখি বসত, সেখানে এখন মানুষ আর মানুষ। পাখি বসার জায়গা নেই। রাতে বৈদ্যুতিক আলোর জন্য পাখিরা বিশ্রাম নিতে পারে না সৈকতে। পাখি চরে উপকূলের কাদার ওপর। পাহাড় কাটার মাটিতে ঢাকা পড়ছে কাদা। ফলে খাবার তুলতে পারে না পাখি।

গত বুধবার কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদী থেকে ‍স্পিডবোটে বঙ্গোপসাগরের উত্তর দিকে মহেশখালীর ধলঘাটার কাছে যেতেই চোখে পড়ল ছোট ছোট কয়েকটি ডুবোচর। চরগুলোর ওপর অসংখ্য সাদা আর কালো রঙের পাখি। পাখির কলতানে কান পাতা দায়। অথচ এর অল্প দূরেই পাখির অভয়ারণ্য খ্যাত সোনাদিয়ায় গিয়ে দেখা অল্প কিছু পাখি চোখে পড়ল। সোনাদিয়ার প্রবেশদ্বার বহদ্দারকাটা নদীর দুই পাশে প্রায় আট কিলোমিটার লম্বা বিশাল প্যারাবনে হাতে গোনা কিছু বক, মাছরাঙা, চড়ুই, টুনটুনি, টিয়া, ময়না, ঘুঘু দেখা গেছে।

সোনাদিয়ার পরিবেশকর্মী নাসির উদ্দিন বলেন, দুই বছর আগেও সোনাদিয়ার প্যারাবন ও উপকূলে ৫৭ প্রজাতির পরিযায়ী ও জলজ পাখির মেলা বসত।

সোনাদিয়া হচ্ছে মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ড। কুতুবজোম ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন বলেন, সোনাদিয়ার প্রায় এক হাজার অধিবাসীর অধিকাংশই জেলে। সমুদ্র থেকে মাছ আহরণ, দ্বীপে সেই মাছ শুঁটকীকরণ এবং কৃষিকাজ করেই চলে মানুষের জীবনযাপন। তবে কিছু মানুষ জীবিকার জন্য পাখি শিকার করছে। সোনাদিয়াকে আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণার পর এই সৈকতে লোকসমাগমও বাড়ছে। এটা পাখির জন্য বড় হুমকি।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, সরকার সোনাদিয়াকে আন্তর্জাতিক পর্যটনকেন্দ্র ঘোষণা দিয়ে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ২০১৭ সালের ২৭ এপ্রিল সোনাদিয়ার ২৬ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা দামের ৯ হাজার ৪৬৭ একর জমি ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেজা) মাত্র ১ হাজার ১ টাকায় বরাদ্দ দিয়েছে।

আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বেজা সেখানে অত্যাধুনিক পর্যটনকেন্দ্র, আবাসিক এলাকা, আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, বিনোদনের নানা প্রকল্প গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন।

তবে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, সোনাদিয়ার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য যাতে কোনোভাবে নষ্ট না হয়, সেদিকে সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রেখে পর্যটনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। মাত্র ২৫ শতাংশ জমিতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো করে বাকি জমিগুলো পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে সবুজ ও সংরক্ষিত রাখা হবে।

বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সোনাদিয়ার প্যারাবনে ১৯ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ৪ প্রজাতির উভচর প্রাণী এবং ২৭ প্রজাতির পাখি বসবাস করে। এ ছাড়া বনটিতে ৭০ প্রজাতির বৃক্ষ ও লতাগুল্ম রয়েছে। নানা উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে পাখির আবাসস্থল দ্রুত কমে আসছে।

602 ভিউ

Posted ১১:১৭ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারি ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com