কক্সবাংলা রিপোর্ট(৩ ডিসেম্বর) :: কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেয়া কয়েক হাজার রোহিঙ্গা শিশুকে স্থানীয় স্কুল শিক্ষায় প্রবেশ করতে বাংলাদেশ সরকার বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
সংস্থাটি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ৪ লাখ স্কুল বয়সের শিশুদের অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে, যারা মিয়ানমার ছেড়ে পালিয়েছে এবং বর্তমানে কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছে। কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলিতে বিদ্যালয়ের পড়াশোনার উপর নিষেধাজ্ঞাগুলি সরিয়ে দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে আহ্বানও জানিয়েছে এ সংস্থা।
“‘আমরা কি মানুষ নই?: বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশুদের শিক্ষার সুযোগ অস্বীকৃত’” (Are We Not Human? ’: Denial of Education for Rohingya Refugee Children in Bangladesh) শীর্ষক ৮১ পৃষ্ঠার রিপোর্টে বাংলাদেশ কীভাবে কক্সবাজার জেলার শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গা শিশুদের স্বীকৃত বা আনুষ্ঠানিক শিক্ষার ব্যবস্থা করার কাজে দাতা গোষ্ঠীগুলোর বাধা সৃষ্টি করছে তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সেখানে কোনো মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাব্যবস্থা নেই, এবং বাংলা ভাষা শেখানো ও বাংলাদেশি পাঠ্যক্রম অনুসরণের ষেত্রে দাতাগোষ্ঠীগুলোকে বাধা প্রদান করা হচ্ছে। রোহিঙ্গা শিশুদের শরণার্থী শিবিরের বাইরের বেসরকারী বা সরকারী বিদ্যালয়ে ভর্তি বা পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ১৬৩ জন রোহিঙ্গা শিশু, অভিভাবক, ও শিক্ষক, এবং সরকারি কর্মকর্তা ও মানবিক সহায়তা সংস্থা ও জাতিসংঘের এজেন্সিগুলোর সাক্ষাৎকার নিয়েছে। এছাড়াও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সরকারের নীতি ও ত্রাণ-সহায়তা পরিকল্পনা বিশ্লেষণ করে দেখেছে এবং ত্রাণ-সহায়তা সংস্থাগুলো সরকারের বিধি-নিষেধের মধ্যে থেকে ত্রাণ শিবিরে কীভাবে শিশুদের জন্য শিক্ষাপ্রদান কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা করছে সেটাও গবেষণা করে দেখেছে।
এ ব্যাপারে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর সহযোগী শিশুদের অধিকার পরিচালক বিল ভ্যান এসভেল্ড মঙ্গলবার রয়টার্সকে বলেছেন, “শিক্ষার পুরো প্রজন্মের শিশুদের বঞ্চিত করা কারও আগ্রহের নয়। “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশ ও মায়ানমারের গতিপথ পরিবর্তনের দাবি জানাতে হবে এবং দাবি করা উচিত।”
রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পরে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর দ্বারা ২০১৭ সালের তৎপরতার পর থেকে ৭ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলমান প্রতিবেশী মিয়ানমার ছেড়ে পালিয়ে কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের শিবিরের বাইরের স্কুলে ভর্তি বা জাতীয় পরীক্ষা দেওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে এবং বিদেশী সহায়তা গোষ্ঠীগুলিকে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষা দিতে নিষেধ করেছিল।
শিবিরগুলিতে মায়ানমারের স্কুল পাঠ্যক্রমের ব্যবহারটি স্বীকৃতি দিতে রাজি নয় বলে অভিযোগ করেছে তারা।
এ ব্যাপারে কক্সবাজারস্থ শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের প্রধান মাহবুব আলম তালুকদার রয়টার্সকে বলেছেন যে শিবিরগুলিতে শিশুদের পড়াশোনা করা হচ্ছে না এবং শিবিরগুলিতে ৪,০০০ শিক্ষা কেন্দ্র রয়েছে এ কথা সত্য নয়।
তিনি আরও বলেছেন “রোহিঙ্গারা আমাদের নাগরিক নয় এবং আমরা তাদের আমাদের জাতীয় পাঠ্যক্রমটি ব্যবহার করার অনুমতি দিতে পারি না।””রোহিঙ্গাদেরকে মিয়ানমারে ফিরে যেতেই হবে,”।
সূত্র : রয়টার্স
Posted ৮:০১ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta