কক্সবাংলা রিপোর্ট(২৭ এপ্রিল) :: কক্সবাজারে উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের জন্য মোট ১৮ কোটি ২০ লাখ ডলারের তহবিল সংগ্রহের আবেদন জানিয়েছিল আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)। এ অর্থ দিয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত উদ্বাস্তুদের ব্যয় নির্বাহের পরিকল্পনা ছিল সংস্থাটির। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ৩ কোটি ডলার সংগ্রহ করতে পেরেছে সংস্থাটি। অর্থাৎ সবমিলে এখনো প্রায় ১৫ কোটি ডলার তহবিল ঘাটতিতে রয়েছে আইওএম।
আবাসন, সুপেয় পানি, পয়োনিষ্কাশন ও পরিচ্ছন্নতা সেবা (ওয়াশ), শিবির উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা এবং জরুরি স্বাস্থ্যসেবার মতো আইওএমের বিভিন্ন কার্যক্রম এখন তহবিলের অভাবে বন্ধ হওয়ার উপক্রম।
আইওএমের পাশাপাশি তহবিল ঘাটতিতে ভুগছে অন্য সংস্থাগুলোও। যৌথ পরিকল্পনার আওতায় সংস্থাগুলোর মোট ৯৫ কোটি ১০ লাখ ডলারের তহবিল সংগ্রহের কথা থাকলেও, এর মধ্যে সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৯ শতাংশ।
আসন্ন বর্ষা মৌসুমে বন্যা, ভূমিধস ও অন্যান্য দুর্যোগের মুখে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে অভীষ্ট তহবিল জোগাড় না হলে এসব দুর্যোগে উদ্বাস্তুদের জীবন রক্ষার মতো পর্যাপ্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও সহায়তা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে আইওএম।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তহবিলে অর্থের সংস্থান না হলে শিবিরে অবস্থানরত কয়েক হাজার রোহিঙ্গার প্রাণ হুমকির মুখে পড়ে যাবে। বর্তমানে কক্সবাজারে পাহাড়ি এলাকায় বন উজাড় করে স্থাপন করা শিবিরে ত্রিপলের নিচে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাস করছে। এর মধ্যে বন্যা ও পাহাড়ধসের হুমকিতে রয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার উদ্বাস্তু। আবার উচ্চমাত্রায় ভূমিধসের ঝুঁকিতে রয়েছে ২৫ হাজার।
ত্রাণসহায়তা না পেলে এদের অনেককেই এসব ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে থেকে যেতে হবে। এছাড়া দুর্যোগে সড়ক যোগাযোগ আরো দুর্গম হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছে সংস্থাটি। সেক্ষেত্রে কয়েক লাখ রোহিঙ্গার কাছে ত্রাণসহায়তা ও চিকিৎসাসেবা পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।
বর্তমানে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের আবাসন-সংক্রান্ত বিষয়গুলোর তত্ত্বাবধান করছে আইওএম। সংস্থাটির কাছে এ মুহূর্তে ত্রিপলের মজুদও প্রায় ফুরানোর পথে। আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ে এ মজুদ আশঙ্কাজনক পর্যায়ে নেমে আসতে পারে। এ মুহূর্তে আইওএমের আবাসন সরঞ্জামাদির মজুদ বাড়ানোর জন্য জরুরিভিত্তিতে তহবিলের প্রয়োজন। অন্যথায় ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা পরিবারগুলোর ঘরবাড়ি মেরামত বা নতুন করে আবাসনের ব্যবস্থা করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
আর্থিক সংকটে আইওএমের সুপেয় পানি, পয়োনিষ্কাশন ও পরিচ্ছন্নতাসহ (ওয়াশ) অন্যান্য জরুরি সেবা নিয়েও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। চলমান ওয়াশ প্রকল্পগুলো বন্ধ হয়ে গেলে শিবিরে নিরাপদ সুপেয় পানি সরবরাহ ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। একই সঙ্গে পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে উদ্বাস্তুদের মধ্যে পানিবাহিত রোগব্যাধিও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত উদ্বাস্তু শিবিরে সহায়তা কার্যক্রমের ব্যয় নির্বাহের জন্য মোট ১৮ কোটি ২০ লাখ ডলারের তহবিল সংগ্রহের আবেদন জানিয়েছিল আইওএম। এর মধ্যে এখনো প্রায় ১৫ কোটি ১০ লাখ ডলারের ঘাটতিতে রয়েছে সংস্থাটি।
এ বিষয়ে কক্সবাজারে নিযুক্ত আইওএমের সিনিয়র অপারেশনস কো-অর্ডিনেটর জন ম্যাককিউ বলেন, ‘সহায়তা কর্মীরা বর্তমানে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি দেখা দিলে যাতে জীবন রক্ষা করা যায়, সেজন্য আবাসন ব্যবস্থা উন্নয়নের পাশাপাশি ভূমি উন্নয়ন, প্রধান প্রধান সংযোগ সড়কগুলোর নিরাপত্তা বিধানের পাশাপাশি জরুরি সহায়তা সেবা নিশ্চিতের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু রূঢ় বাস্তবতা হলো, তহবিল না পেলে আমরা তা চালিয়ে যেতে পারব না।’
তিনি আরো বলেন, ‘জরুরি অবস্থা পার হয়ে যাওয়ার পর এবং প্রতিরোধযোগ্য দুর্ঘটনা ঘটে গেলে তহবিলের অর্থ কখন হাতে আসবে, সে অপেক্ষায় থাকার সুযোগ আমাদের নেই। যদি জীবন বাঁচাতে হয়, তাহলে আমাদের এখনই পদক্ষেপ নেয়া উচিত।’
বর্তমানে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির সারা বিশ্বে সবচেয়ে বড় উদ্বাস্তু শিবির হয়ে উঠেছে। আইওএম, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) এবং জাতিসংঘের শরণার্থী-বিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) বর্তমানে অন্যান্য সংস্থা এবং বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সম্ভাব্য আবহাওয়াগত জরুরি অবস্থা মোকাবেলায় একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।
যৌথ এসব প্রকল্পের মধ্যে জরুরি সড়ক ব্যবস্থা চালু রাখার জন্য মেশিনারি হাব তৈরি, দুর্যোগ-পরবর্তী কর্মসূচি এবং ভূমিধসে ঝুঁকির মুখে থাকা উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন প্রকল্প বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
দুর্যোগ-পরবর্তী কর্মসূচির ক্ষেত্রে সাধারণ একটি পাইপলাইনের মাধ্যমে যৌথ কার্যক্রমের ভিত্তিতে কার্যকরভাবে জীবনদায়ী বিভিন্ন সেবা সরবরাহের জন্য বিভিন্ন সংস্থা ও সরকারকে একে অন্যের ওপর নির্ভর করে থাকতে হবে। এক্ষেত্রে যেকোনো সংস্থা বা খাতে তহবিলের সংকট গোটা কার্যক্রমকে বিপদের মুখে ঠেলে দিতে পারে।
এ বিষয়ে ম্যাককিউ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘যেহেতু তহবিলের অভাবে অনেক জরুরি সেবা খাত বন্ধের উপক্রম হয়েছে। আমাদের হাতে এখন নষ্ট করার মতো সময় নেই। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যদি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে তহবিল নিশ্চিত করা না যায়; সেক্ষেত্রে অনেক শিশু, নারী ও পুরুষের প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে, যেখানে তাদের সবাইকেই রক্ষা করা সম্ভব ছিল।’
Posted ৫:২২ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৮ এপ্রিল ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta