শনিবার ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শনিবার ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

কক্সবাজারে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিদলকে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে তিনটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন

রবিবার, ২৯ এপ্রিল ২০১৮
313 ভিউ
কক্সবাজারে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিদলকে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে তিনটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন

কক্সবাংলা রিপোর্ট(২৮ এপ্রিল) :: কক্সবাজারে অবস্থানরত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিদলকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। এর প্রতিক্রিয়ায় তারা রোহিঙ্গা ইস্যুটি নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে এবং সরকারের কর্মকর্তাদের কাছে আরও  তথ্য জানতে চায়।

শনিবার (২৮ এপ্রিল) বাংলাদেশে সফররত নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিদলের কাছে সরকারের পক্ষ থেকে এ আহ্বান জানানো হয়।

বিভিন্ন সময়ে রাখাইন থেকে এক মিলিয়নের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। এরমধ্যে ২৫ আগস্টের পরে যারা এসেছে, তাদের মধ্যে ৩০ হাজার নারী অন্তঃসত্ত্বা, ৩৬ হাজার অনাথ এবং প্রায় আট হাজার শিশুর পিতা ও মাতা উভয়ই নিখোঁজ রয়েছেন।

এ প্রেক্ষাপটে শনিবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিদল কুয়েত থেকে সরাসরি কক্সবাজারে এসে পৌঁছায়। প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলাপকালে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে  নিরাপত্তা পরিষদের হস্তক্ষেপ কামনা করে বাংলাদেশ।

সরকারের কর্মকর্তারা জাতিসংঘ প্রতিনিধিদলকে জানান, সম্পূর্ণ মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ তার দরজা খুলে দিয়েছে। কিন্তু এ কারণে যদি বাংলাদেশকে ভুক্তভোগী হতে হয় এবং এ সমস্যার সমাধান না হয়, তাহলে পৃথিবীর অন্য কোনও দেশ আর বিপদগ্রস্ত মানুষের জন্য তাদের সীমান্ত খুলে দেবে না।

প্রতিনিধি দলে নিরাপত্তা পরিষদের ১৫টি সদস্য দেশের প্রতিনিধিরা রয়েছেন। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ইথিওপিয়া, নেদারল্যান্ড, কাজাখস্থান, কুয়েতসহ অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মাদ শাহরিয়ার আলম।

শনিবার সন্ধ্যায় সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি দলের কাছে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে তিনটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করা হয়। এগুলোর বিষয়বস্তু ছিল— রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, তাদের অধিকার এবং প্রথাগত ও অপ্রথাগত নিরাপত্তা। এরপর আলোচনা শুরু হয়।

সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আলোচনার একপর্যায়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয় যে, আমরা মনে করেছিলাম, মিয়ানমারে গণতন্ত্র আসলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে সেটি হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, প্রকৃত ঘটনা অস্বীকার করলে এটি কারও উপকারে আসবে না।’

আলোচনায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া কতদূর অগ্রসর হয়েছে সেটি জানতে চায় চীন। রোহিঙ্গাদের প্রতি স্থানীয় জনগণের মনোভাব বিষয়ে রাশিয়া জানতে চাইলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, স্থানীয় জনগণ এখনও তাদেরকে গ্রহণ করছে। কিন্তু তারাও চাপের মুখে আছে এবং সে কারণে জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থাগুলো যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, সেখানে স্থানীয় উন্নয়ন বিষয়টি আছে।

আগাম বর্ষা মৌসুমের প্রস্তুতি সম্পর্কে এবং বাংলাদেশের কী সহায়তা প্রয়োজন সে সম্পর্কে জানতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাজ্যও বাংলাদেশের সহায়তার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে।

ইথিওপিয়া ভাষ্য—রোহিঙ্গাদের প্রতি মিয়ানমারের সাধারণ জনগণের ঘৃণা, এ সমস্যার সমাধানকে জটিল করে দিয়েছে এবং এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কী ভাবছে। এর জবাবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত কয়েক দশক ধরে মিয়ানমার সামরিক সরকার নিয়মতান্ত্রিকভাবে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় জনগণকে ক্ষেপিয়ে দিয়েছে। এটি দূর করার দায়িত্বও মিয়ানমার সরকারের।

এর আগে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিনটি প্রেজেন্টেশনে রোহিঙ্গা সমস্যার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এবং এর সর্বশেষ অগ্রগতি বিষয়ে একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন ত্রাণ, শরণার্থী ও প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত কমিশনার মোহাম্মাদ আবুল কালাম।

এ বিষয়ে একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এ পর্যন্ত প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত যে অগ্রগতি হয়েছে, সে বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়েছে প্রতিনিধিদলকে।’

উল্লেখ্য, ২০০৫ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত তিন লাখের মতো অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা আগে থেকে বাংলাদেশে অবস্থান করছিল। ২০১৬ এর অক্টোবর থেকে ২০১৭ সালের আগস্ট পর্যন্ত ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। ওই বছরের ২৫ আগস্টের পর থেকে এপর্যন্ত সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। রোহিঙ্গারা এখনও  অল্প সংখ্যায় পালিয়ে আসছে এবং বাংলাদেশ তার সীমান্ত খোলা রেখেছে। বাংলাদেশে অবস্থিত রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক করা হয়ে গেছে এবং তাদের বসবাসের জন্য সরকার পাঁচ হাজার ৮০০ একর জায়গা দিয়েছে।

শরণার্থী ও প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত কমিশনার মোহাম্মাদ আবুল কালাম তাদেরকে জানান, আমাদের পাঠানো ৮০৩২ জনের তালিকা থেকে মিয়ানমার এপর্যন্ত মোট ৮২২ জনকে তাদের অধিবাসী হিসেবে স্বীকার করেছে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘পৃথিবীর অন্যতম বড় শরণার্থী ক্যাম্প কুতুপালং এ বর্তমানে সাড়ে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। আমাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া মানবাধিকার মেনে করা হবে এবং এটি হবে স্বেচ্ছা প্রণোদিত।’

তিনি বলেন, ‘এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা জড়িত হয়েছে এবং আমরা তাদের টেকসই প্রত্যাবাসন চাই।’

রোহিঙ্গা অধিকার

রোহিঙ্গাদের অধিকার বিষয়ে একটিপ্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ডেস্কের মহাপরিচালক মোহাম্মাদ তারেক।

তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয়ভাবে এই সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করছে।’

আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে আমরা দ্বিপক্ষীয়ভাবে চুক্তি করেছি। আবার এই সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ, নিরাপত্তা পরিষদ, অন্যান্য বন্ধুপ্রতিম দেশের সঙ্গেও আলোচনা  অব্যাহত রেখেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে— রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব সমস্যার সমাধান একমাত্র মিয়ানমার করতে পারে এবং এক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদ একটি বড় ভূমিকা রাখতে পারে।’

নিরাপত্তা

প্রতিনিধি দলের সামনে নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রেজেন্টেশনটি উপস্থাপন আমর্ড ফোর্সেস ডিভিশনের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মনিরুল ইসলাম আখন্দ।

এই প্রেজেন্টেশনে প্রথাগত এবং অপ্রথাগত বিভিন্ন নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়ে আলোকপাত করা হয়।

সরকারের একজন কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের কারণে বাংলাদেশে উগ্রবাদ, অর্থনৈতিক, পরিবেশ, আর্থ-সামাজিকসহ বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকি রয়েছে।’

রোহিঙ্গারা একটি নিপীড়িত জাতি এবং তারা যেন উগ্রবাদের সহজ শিকার না হতে পারে, তার জন্য বাংলাদেশ অত্যন্ত সতর্ক আছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের বিষয়েও  প্রতিনিধি দলকে জানানো হয়।

বাংলাদেশের পরিবেশ রোহিঙ্গাদের কারণে হুমকির মুখে আছে। কারণ, তাদের থাকার জন্য এমনকি বনাঞ্চল কেটে ফেলা হচ্ছে বলে  জানান এই কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। কারণ, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করার সামর্থ্য বাংলাদেশের নেই।

313 ভিউ

Posted ১:৫৯ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৯ এপ্রিল ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com