সাইফুল ইসলাম(৮ আগস্ট) :: কক্সবাজারে নিবন্ধিত জেলেরা নিয়মিত সরকারী ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহকারী এসব জেলেদের জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা থাকলেও মাত্র কিছু সংখ্যক জেলে মাঝে মাঝে সে ভাতার মুখ দেখেন। আর অধিকাংশ জেলে বছরের পর বছর ধরে ভাতা বঞ্চিত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি সংশ্লিষ্টরা দীর্ঘ ৬ মাস ধরে কোন ধরণের ভাতাই দিচ্ছেন না বলে জানান বেশ কয়েকজন নিবন্ধিত জেলে। শুধু তাই নয়, মৎস্য আহরণের সঙ্গে জড়িত মূল শ্রমিকেরাই সে ভাতা থেকে বঞ্চিত।
কক্সবাজার পৌরসভার নতুন বাহারছড়া এলাকার রতন নামে এক নিবন্ধিত জেলে অনেকটা আবেগাপ্লুত হয়ে অভিযোগ করে বলেন, “জেলে জীবন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তারপরও পরিবার পরিজনকে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার এনে দিতে অথৈ সাগরে মাছ ধরতে যায় আমরা। সেই মাছ দেশ-বিদেশে রপ্তানী করার পাশাপাশি দেশের মানুষের চাহিদা মেটায়।
তাই সরকার অসহায় জেলেদের জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা নিয়ে সর্বত্র প্রশংসা কুড়িয়েছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনিয়ম-অবহেলা কিংবা রহস্যজনক কারনে দীর্ঘ সময় ধরে কোন ধরনের ভাতা পাচ্ছেনা জেলেরা। এতে পরিবার পরিজন নিয়ে খুবই কষ্টে দিনাতপাত করতে হচ্ছে আমাদের।” এভাবেই বহু জেলে কান্না জড়িত কন্ঠে বঞ্চনার নানা চিত্র তুলে ধরেছেন সংবাদকর্মীদের কাছে।
কক্সবাজার জেলা মৎস্য অধিদপ্তর অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার ৮ উপজেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪৮ হাজার ৩৯৩ জন। ততমধ্যে সদর উপজেলায় ৭ হাজার ১২০জন, মহেশখালী উপজেলায় ১১ হাজার ৪৪২ জন, চকরিয়া উপজেলায় ৩ হাজার ৮৫৭ জন, টেকনাফ উপজেলায় ৭ হাজার ৮৮৩ জন, উখিয়া উপজেলায় ৩ হাজার ৩৯২ জন, রামু উপজেলায় ২ হাজার ২৭৩ জন, পেকুয়া উপজেলায় ৩ হাজার ৯৬৭ জন ও কুতুবদিয়া উপজেলায় নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ৮ হাজার ৪৫৯ জন।
ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে আরো জানা যায়, মাছ ধরার মৌসুম ছাড়া বছরের বাকি সময়টাতে সরকারের বিশেষ ভাতা পায় নিবন্ধিত জেলেরা। তবে নিবন্ধিতদের মধ্যে কিছু সংখ্যক জেলেরা ভাতা পেয়ে থাকলেও প্রায় ৬ মাস ধরে সেই ভাতা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এখন নুন আনতে পান্তা পুরাচ্ছে হাজারো জেলের ঘরে।
ভাতা বঞ্চিত জেলেদের অভিযোগ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ কিছু নেতাদের ইচ্ছেমত মৎস্য কর্মকর্তারা এই কার্ড বিতরণ করে থাকেন। আর কার্ডের পরিমাণও পর্যাপ্ত না হওয়ায় বেশিরভাগ জেলে এর আওতার বাইরে রয়েছে। যাঁরা বর্তমানে নিবন্ধিত তালিকায় রয়েছে তাঁরা নিয়মিত ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়েই মানবেতর জীবন যাপন করতে হয় তাদের।
এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংক এবং এনজিও সংস্থা থেকে লোন নিয়ে সেই লোন ঠিকমতো পরিশোধ করতে না পেরে অনেকেই এখন দেউলিয়া হয়ে পথে বসতে দেখা গেছে।
এদিকে একেকটি জেলের নৌকায় কমপক্ষে ৫-৭ জন মৎস্য শ্রমিক কাজ করেন। মূলত: তারাই সাগরে মাছ ধরার থেকে মাছের প্রক্রিয়াজাতকরণ পর্যন্ত সবগুলো কাজ করে থাকেন।
মোহাম্মদ করিম নামে এক জেলে বলেন, মহেশখালী উপজেলায় ১৫ হাজারের অধিক জেলে আছে। নিবন্ধিত হয়েছে ১১ হাজার ৪৪২ জন। যাঁরা নিবন্ধনের আওতায় আছে তাদের অধিকাংশই ভাতা থেকে বঞ্চিত। এমনকি যারা ভাতা পেতো তারাও দীর্ঘ ৬ মাস ধরে কোন ভাতা পাচ্ছে না। ভাতা হিসেবে ২০ কেজি চাল দিলেও নিজেদের সংসার আর শ্রমিকদের দিন চলে খুব কষ্টের। শুধু চাল খেয়ে কি আর জীবন চলে ?, জেলেরা এমন প্রশ্নও ছুড়ে দেন মাঝে মাঝে।
শহরের নুনিয়ারছড়া এলাকার শুক্কুর মাঝি বলেন, নতুনভাবে যে তালিকা হচ্ছে সেই তালিকায় আমি রয়েছি। কিন্তু আমি একবারও ভাতা পাইনি। তবে আমার ভাগিনা ফজল প্রায় দুইমাস আগে ভাতা হিসেবে ১০ কেজি চাল পেয়েছে। এদিকে সব জায়গায় ভাতা হিসেবে ২০ কেজি চাল দিয়ে থাকলেও নুনিয়ারছড়া এলাকার সব নিবন্ধিত জেলেকে রহস্যজনক কারনে ১০ কেজি করে চাল দিয়েছিলো। সেখানেও ব্যাপক অনিয়ম-দুর্ণীতি হচ্ছে বলে অভিযোগ জেলেদের।
মৎস্য শ্রমিক মো. ইসলাম বলেন, জেলেরা অনুমতি না পেলে নৌকা সাগরে নামতে পারে না। আমরাও কাজ পাইনা। এই সময়গুলো মালিকের মুখের দিকে তাকিয়েই কোন রকম দিন চলে। জেলেদের পাশাপাশি মৎস্য শ্রমিকদের জন্য ভাতার দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে কক্সবাজার সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মঈন উদ্দিন জানান, গেলো বছরের জুন মাস থেকে নিবন্ধিত জেলেদের ভাতার ৫ বছর মেয়াদি প্রকল্পটি বন্ধ রয়েছে। তবে নতুন প্রকল্প আসার পর পুণরায় সেই ভাতা চালু করা হবে।
প্রসঙ্গত; জেলায় নিবন্ধনকৃত জেলের সংখ্যা ৪৮ হাজার ৩৯৩ জন।
Posted ১:৫৬ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৮ আগস্ট ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta