বিশেষ প্রতিবেদক(১৮ জানুয়ারী) :: কক্সবাজারে রেল লাইন নির্মাণের জন্য অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণের টাকা হাতিয়ে নিতে তৎপরতা রয়েছে ১৪ জনের একটি সিন্ডিকেটের। তারা ভূমির প্রকৃত মালিকদের পাশ কাটিয়ে অধিগ্রহণের জমির ক্ষতিপূরণের টাকা হাতিয়ে নিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সরকারি উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্থ করতে মরিয়া এসব দালালের বিরুদ্ধে দ্রুত সময়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে মানববন্ধন করেছেন কক্সবাজারের ঝিলংজা ইউনিয়নবাসী।
বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারী) বেলা ১২ টায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জমির প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধনে অংশ নেয়। এরপর জালিয়াত ও দালাল চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়ে সরাসরি জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ও কক্সবাজার রেল লাইনের স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ হাসিনার কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছে। এর আগে কক্সবাজার শহরে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের করে রেল লাইনের অধিগ্রহনে পড়া ভূমির প্রকৃত মালিকরা।
এদিকে মানববন্ধনে জমির প্রকৃত মালিকরা বলেন- ৭৬ বছর পর উন্নয়নের রোলমডেল বাংলাদেশের আওতায় কক্সবাজারবাসীর প্রাণের দাবী রেল লাইনের যাত্রা শুরু হয়েছে। কিন্তু একটি দালাল সিন্ডিকেট অধিগ্রহণের জমির ক্ষতিপূরণের টাকা হাতিয়ে নিতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এই সিন্ডিকেটে সরাসরি ১৪ জনের একটি চক্র জড়িত।
তারা হলো- শহরের উত্তর তারাবনিয়ারছড়া এলাকার শামশুল হুদা, শহিদুল হুদা, জানার ঘোনা এলাকার নুরুল হক, নুরুল আমিন, সিরাজুল হক, নুরুল আবছার, হাজী পাড়া এলাকার আবদু ছাত্তার, পিএমখালী এলাকার তৌহিদুল ইসলাম, জানার ঘোনা এলাকার আমিন উল্লাহ, দক্ষিণ ডিককুল এলাকার ছৈয়দ আলম, পশ্চিম লারপাড়া এলাকায় আবু তালেব, মোহাম্মদ আমিন, ইসমাইলের ছেলে রুবেল ও ইসমাইল।
ভূক্তভোগি আব্দুল হামিদ বলেন- সরকার রেল লাইন স্থাপনের জন্য এলএ মামলা নং ৪/১৬-১৭ রুজু করে এবং জমির মালিকদের নামে এওয়ার্ড প্রস্তুুত করে ৭ ধারায় নোটিশ প্রধান করেন। কিন্তু দালাল চক্রের সদস্যরা ভুয়া খতিয়ান ও দলিল তৈরি করে নিজেদের নামে টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের সাথে অসাধু কিছু সরকারি কর্মচারীও রয়েছে।
এমনকি অধিগ্রহণের টাকা আত্মসাত করার জন্য আর.এল খতিয়ানের রায় হতে ভুয়া জাল দলিলের মাধ্যমে দেওয়ানী আদালতে মামলা দায়ের পর ভুয়া বিবাদী দেখিয়ে সোলেহনামার মাধ্যামে ২৭ দিনের মধ্যে রায় ডিগ্রি হাসিল করে। এই রায় ডিগ্রিমূলে ১৩ দিনের মধ্যে নামজারী বি.এম খতিয়ান সৃজন করে রাখে চক্রের সদস্যরা। এরপর তারা খতিয়ান মূলে অধিগ্রহণের টাকা উত্তোলনের আবেদন করেন।
প্রকৃত মালিকরা টাকা উত্তোলনের জন্য আবেদন করলে জাল জালিয়তের বিষয়টি ধরা পড়ে। এমনকি এই সিন্ডিকেটের প্রধান শামশুল হুদা কলাতলী বাইপাস এলাকায় বি.এস ১৭১৩১ দাগের সরকারি ২ একর খাস জমি সম্পূর্ণ প্রতারণা ও জাল দলিল সজনের মাধ্যমে দখল করে আত্মসাত করার চেষ্টা করে। পরে সদর সহকারি কমিশনার (ভূমি) নাজিম উদ্দীন তা উচ্ছেদ করে দেন।
এসব চক্রের সদস্যরা ইতিপূর্বে মহেশখালী কয়ল বিদ্যুৎ সংক্রান্ত এল.এ মামলা হতে প্রতারণামূলক ভুঁয়া ব্যক্তি সাজিয়ে টাকাও উত্তোলন করে। একইভাবে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের জমি অধিগ্রহণের টাকাও প্রতারণামূলকভাবে ভুঁয়া লোক সাজিয়ে টাকা উত্তোলন করে। পরে উত্তোলনের এই টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য ভূমি হুকুম দখল কর্মকর্তা সার্টিফিকেট মামলা দায়ের করেন। মামলাটি এখনো বিচারাধীন রয়েছে।
এদিকে এই চক্রের তিন সদস্যাকে গত মঙ্গলবার আটক করেন প্রশাসন। এসময় ৬ বস্তা ভুয়া খতিয়ানসহ নকল ওয়ারিশ সনদের প্যাড, চেয়ারম্যান, কাউন্সিল, মেয়রের সীল উদ্ধার করা হয়। এসময় আটক সদর উপজেলা পিএমখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ নয়া পাড়া এলাকার মকবুল আহমদের ছেলে তৌহিদুল ইসলাম, একই ইউনিয়নের মাইজ পাড়া এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে নুরুল আবছার ও লিংকরোডস্থ ছাদুর পাড়া এলাকার ছৈয়দুল হক বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে।
সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শহিদুল আলম বাহাদুর বলেন- বাকি চক্রের সদস্যদের যদি দ্রুত সময়ে আইনের আওতায় আনা না হয় তাহলে- জমির প্রকৃত মালিকরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। দালাল চক্রের সদস্যরা এখনো সক্রিয় রয়েছে। তারা বিভিন্নভাবে প্রতারণা করেই যাবে। তাদের সাথে স্থানীয় এল.এ অফিসের কথিত কর্মচারী জড়িত রয়েছে। যার কারণে প্রকৃত মালিকরা উক্ত কর্মচারীদের হাতে বার বার নাজেহাল হয়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না।
বিক্ষোভে বক্তব্য রাখেন, জেলা জাসদের সভাপতি নঈমুল হক চৌধুরী টুটুল, সুজনের জেলা সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মাহবুবুর রহমান, ভুক্তভোগী আমির আলী, এডভোকেট শাহাদত হোসেন, আবদুল হামিদ, নুরুল আলম, সরওয়ার কামাল, মো. ইলিয়াছ প্রমূখ।
এবিষয়ে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নোমান হোসেন বলেন- ভয়াবহ জালিয়াতচক্রের তিন সদস্যকে আটক করা হয়েছে। বাকি সদস্যদের যেকোনোভাবে আইনের আওতায় আনা হবে। মূলতঃ তারা সরকারের উন্নয়ন বাঁধাগ্রস্ত করার জন্য তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
তবে গত মঙ্গলবার থেকে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির লোকজন যাচাই বাছাই করেই কক্সবাজার সদরে রেলের অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণ দিবে আসল জমির লোকজনকে। প্রয়োজনে বাড়িতে গিয়েই জমির চেক বুঝিয়ে দেয়া হবে।
Posted ২:৫০ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারি ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta