কক্সবাংলা রিপোর্ট(১৪ ফেব্রুয়ারী) :: সর্বস্ব হারিয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের অস্থায়ী শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে ১০ লাখের অধিক রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গার ত্রাণসামগ্রী বিতরণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন মানবিক সেবা দিয়ে যাচ্ছে সরকারের পাশাপাশি ১০৫টি এনজিও সংস্থা। বেশির ভাগ এনজিও সংস্থা আশ্রয় ও স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ ক্ষেত্রে দায়িত্বরত কতিপয় এনজিও’র নিম্নমানের সামগ্রী বিতরণের অভিযোগ উঠেছে।
এসব এনজিওরা গুণগত মানসম্পন্ন ত্রাণ বিতরণের নামে নিম্নমানের ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। যে সমস্ত ত্রাণসামগ্রী উখিয়ার বিভিন্ন স্থানে খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
আর বুধবার রাত ৮টায় কক্সবাজার সদর উপজেলা সংলগ্ন খাদ্য গুদামে রোহিঙ্গাদের জন্য ডব্লিউএফপির কাছে ভেজাল নিম্নমানের চাল সরবরাহকালে ৪শ বস্তার একটি ট্রাক জব্দ করেছে সদর ইউএনও মো. নোমান হোসেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে প্রায় ৯টি এনজিও সংস্থার বিরুদ্ধে এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর নিকট প্রতিবেদন আকারে ওইসব এনজিও’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি উখিয়ার বিভিন্ন সস্থানে প্রতিষ্ঠিত বেশ কয়েকটি রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি ক্যাম্পে ২/৩টি করে হাটবাজার বসেছে। সেখানে বিক্রি হচ্ছে রোহিঙ্গাদের এনজিও প্রদত্ত বিভিন্ন ত্রাণসামগ্রী।
এ ব্যাপারে রোহিঙ্গাদের সাথে আলাপ হলে তারা জানান, কিছু কিছু এনজিও সংস্থা এসব নিম্নমানের পণ্যসামগ্রী বিক্রি করে রোহিঙ্গাদের চোখে ধুলো দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
মধুরছড়া ক্যাম্পের শামসুল হক (৪৫) এনায়াত উল্লাহ (৩৯) বদিউর রহমান (৪৪) একাধিক রোহিঙ্গা নাগরিক জানান, একমাত্র চাল ব্যতীত যেসব পণ্য সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে তা ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ার কারণে বিক্রি করতে চাইলেও ওইসব পণ্য ক্রেতারা কিনতে চায় না।
সরেজমিন উখিয়া সদর এলাকার রাস্তার পাশে গড়ে উঠা মৌসুমী ত্রাণের বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, সাবান, কসমেটিক্স, ফক্স নামে পারফিউম, লবণ, তেল, চিনি, ময়দা, আটা, ডাল, কাপড়সহ বিভিন্ন রকমের সামগ্রী রোহিঙ্গারা নামমাত্র দামে স্থানীয়দের বিক্রি করে দিচ্ছে।
স্থানীয় ক্রেতা খুরশেদ আলম জানান, রোহিঙ্গাদের যেসব ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে ওগুলোর অধিকাংশই মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের।
এ প্রসঙ্গে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরীর সাথে আলাপ করে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, ক্যাম্পে কর্মরত এনজিওদের উপজেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় রেখে ত্রাণ বিতরণে নির্দেশ দেওয়া হলেও কিছু কিছু এনজিও প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে গোপনে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করছে। যেসব ত্রাণসামগ্রী ব্যবহার অনুপযোগী।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী জানান, বেশ কিছু এনজিও রোহিঙ্গাদের ইস্যু করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য ত্রাণ বিতরণে বেশি উৎসাহী। যে সব ত্রাণ সামগ্রী উখিয়ার বিভিন্ন স্থানে, পথে ঘাটে, ফুটপাটে বিক্রি হচ্ছে নিম্নমানের। এসব পণ্যসামগ্রী ক্রেতারাও গ্রহণ করছে না। এতে প্রতীয়মান হয় ওইসব এনজিও মূলত বিদেশি দাতা সংস্থার টাকা পকেটস’ করার জন্য রোহিঙ্গা সেবার নামে ক্যাম্পে অবস্থান নিয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতির কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত ৯টি এনজিও সংস্থার কার্যক্রম খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এনজিও ব্যুরোর নিকট প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।
Posted ২:৪৫ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta