কক্সবাংলা রিপোর্ট(২০ মার্চ) :: কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী বসতি ও আশ্রয়কেন্দ্র তৈরিতে উজাড় হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার একর সংরক্ষিত বনভূমি। এর আর্থিক মূল্য ৪১১ কোটি টাকার বেশি। এ দুই উপজেলায় গেজেটভুক্ত বনভূমিতে পাহাড় ও বন কেটে রোহিঙ্গা বসতি স্থাপন করায় বনজ সম্পদের এ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বন বিভাগের তথ্যমতে, গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে নতুন করে রোহিঙ্গা শরণার্থীর ঢল নামে। ২৫ আগস্টের আগেই গেজেটভুক্ত ৬৭৫ একর বনভূমিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছিল। নতুন করে রোহিঙ্গা আগমন শুরু হলে স্থানীয় প্রশাসন উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গেজেটভুক্ত বনভূমিতে পাহাড় ও বন কেটে অস্থায়ী বসতি নির্মাণ করে।
এ দফায় ৪ হাজার ৩১৮ একর বনভূমিতে রোহিঙ্গা বসতি স্থাপন করতে গিয়ে ১ হাজার ২০০ একর সৃজিত বন (সামাজিক বনায়ন) ও ২ হাজার ৩১৮ দশমিক ৬০ একর প্রাকৃতিক বন ধ্বংস হয়ে গেছে। এতে করে সৃজিত বনজ সম্পদের ক্ষতির পরিমাণ ২১৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
আর প্রাকৃতিক বনের গাছ, লতাগুল্ম, সানগ্রাস, উলুফুল, বাঁশ, বেত, ঔষধি গাছ ও অন্যান্য উদ্ভিদের ক্ষতি হয়েছে ১৯৭ কোটি ৪০ লাখ টাকার বেশি। সব মিলিয়ে রোহিঙ্গা বসতির কারণে বনজ সম্পদের ক্ষতির পরিমাণ ৪১১ কোটি ২৮ লাখ টাকার বেশি।
এদিকে রোহিঙ্গা বসতি ও অবকাঠামো নির্মাণের জন্য পাহাড় ও গাছ কাটায় উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে পাহাড়ের মাটি। এতে পাহাড় ধসের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার অঞ্চলের সহকারী পরিচালক সাইফুল আস্রাব এ প্রসঙ্গে বলেন, পাহাড়গুলোকে ন্যাড়া করে বসতি স্থাপন করা হয়েছে। এ পাহাড়গুলো বেলে মাটির। এ কারণে বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। রোহিঙ্গা বসতির শৌচাগারের আবর্জনা মাটিতে মিশে যাচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এখানকার মাটি ও পানি পরীক্ষা করা হয়েছে।
দেখা গেছে, মাটির উর্বরতা অনেক কমেছে এবং পানিতে জীবাণুর পরিমাণ বেড়েছে। এসব বিষয় নিয়ে জেলা প্রশাসন ও মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। বিষয়টি বিবেচনাধীন আছে বলে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে।
বন বিভাগের তথ্যমতে, গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এক সভায় বালুখালী-কুতুপালং এলাকায় ১ হাজার ৫০০ একর বনভূমিতে রোহিঙ্গাদের জন্য অস্থায়ী বাসস্থান নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বিবেচনা করে দুই ধাপে ওই বসতির জায়গা বাড়ানো হয়।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) এবং কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা বসতির জন্য ৩ হাজার ৫০০ একর জমি দেখানো হয়েছে। এতে করে রোহিঙ্গা বসতির জন্য ব্যবহূত বনভূমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১৩ একর।
চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক মো. জগলুল হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা বসতি স্থাপনের কারণে কক্সবাজারের সংশ্লিষ্ট এলাকায় জীববৈচিত্র্যের আনুমানিক ক্ষতি বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে ৪১১ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের জন্য বিভিন্ন ত্রাণ সহায়তা মিললেও জ্বালানির কোনো ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা সরকারি বনাঞ্চলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। এভাবে চললে উখিয়া-টেকনাফের বনাঞ্চল সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে। এছাড়া এলাকাটি এশিয়ান হাতির বাসস্থান, বিচরণক্ষেত্র ও করিডর। রোহিঙ্গাদের জন্য বসতি ও অবকাঠামো নির্মাণের ফলে করিডরটি বন্ধ হয়ে গেছে। এরই মধ্যে হাতির আক্রমণে ক্যাম্প এলাকায় ১৩ জন নিহত হয়েছে।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আলী হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা বসতিতে প্রায় দুই লাখ পরিবার বাস করছে। এর মধ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশ পরিবার জ্বালানির জন্য বনের ওপর নির্ভরশীল। প্রতিটি পরিবারের জন্য দৈনিক গড়ে পাঁচ কেজি লাকড়ি দরকার হলে প্রতিদিন লাগছে ৮০০ থেকে ৮৫০ টন লাকড়ি, যার পুরোটাই আশপাশের বন থেকে সংগ্রহ করছে তারা। লাকড়ি সংগ্রহ করতে গিয়ে তারা গাছের গোড়াসহ উপড়ে ফেলছে। এতে ব্যাপক হারে বনভূমি ধ্বংস হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে ঝুঁকি এড়াতে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া দরকার।
Posted ৭:৩৬ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২০ মার্চ ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta